নীরবতায় করোনাভাইরাসে মৃতদের স্মরণ চীনজুড়ে

জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে এবং দেশজুড়ে সব ধরনের বিনোদনমূলক কার্যক্রম বাতিল করে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে নিহত কয়েক হাজার ‘শহীদ’কে স্মরণে করেছে চীন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2020, 07:25 AM
Updated : 4 April 2020, 07:29 AM

শোকের এ দিনের সঙ্গে মিলে গেছে তাদের বার্ষিক কিংমিং টম্ব-সুইপিং ফেস্টিভালের শুরুও। প্রতিবছর এই সময়ে লাখ লাখ চীনা পরিবার বিভিন্ন কবরস্থানে গিয়ে তাদের পূর্বসূরীদের স্মরণ করে। 

ডিসেম্বরের শেষে উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস চীনের তিন হাজার ৩০০রও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে।

তাদের স্মরণে শনিবার বেইজিং সময় সকাল ১০টায় চীনজুড়ে তিন মিনিট নীরবতা পালন করা হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এসময় গাড়ি, ট্রেন ও জাহাজ থেকে বাজানো হয় হর্ন, শোনা যায় সাইরেনের শব্দ।

বেইজিংয়ের রাজনৈতিক ক্ষমতাকাঠামোর কেন্দ্র ঝোংনানহাইয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ চীনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জাতীয় পতাকার সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে মৃতদের প্রতি রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা জানান, শোকের স্মারক হিসেবে সেসময় তাদের বুকে পিন দিয়ে আটকানো ছিল সাদা ফুল। 

ফুলেল শ্রদ্ধা আর নীরবতায় দেশটির অন্যত্রও এদিন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারির যোদ্ধাদেরসহ কোভিড-১৯ এ নিহতদের স্মরণ করা হয়েছে।

শনিবার সকাল ১০টায় এক কোটি দশ লাখ বাসিন্দা অধ্যুষিত উহানের সব এলাকার ট্রাফিক সিগন্যালে তিন মিনিট লাল বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়; এ সময় সড়কগুলোতে থাকা সব গাড়িও থমকে থাকে।

হুবেইয়ের এ রাজধানীরই দুই হাজার ৫৬৭ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যা চীনের মোট মৃত্যুর তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি।

এদের মধ্যে তরুণ চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংও আছেন, যিনি প্রথম সহকর্মীদের নতুন একটি ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তার সতর্কবার্তায় প্রশাসন প্রথম দিকে গা করেনি; উল্টো ‘গুজব রটনাকারী’ অ্যাখ্যা দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। সেই ভাইরাস এরপর চীনের গণ্ডি পেরিয়ে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ১১ লাখ, মৃত্যু ৫৯ হাজার ছুঁইছুঁই।

আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে টপকে গেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি।

করোনাভাইরাসে মৃতদের স্মরণ করতে উহানে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব কবরস্থানে টম্ব-সুইপিং ফেস্টিভালের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চীনা ক্যালেন্ডারে এ সময় লাখ লাখ মানুষ এসব কবরস্থানে ছুটে আসে, ফুল দিয়ে স্মরণ করে নিজেদের পূর্বসূরীদের।

লকডাউনের কারণে শহরটির ঘরবন্দি বাসিন্দাদের অনেককে ফুটপাত ও বাড়ির আশপাশে ঐতিহ্যবাহী জস কাগজ পোড়াতে দেখা গেছে। এর মাধ্যমে মৃতদের কাছে সম্পদ ও অর্থ পাঠানো যায় বলে বিশ্বাস চীনাদের।