করোনাভাইরাস: দিল্লির নিজামুদ্দিন থেকে সরানো হল তাবলিগ জামাতের ২৩০০ জনকে

দক্ষিণ দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় তাবলিগ জামাতের মূল কেন্দ্রের একটি ভবন থেকে দুই হাজার ৩০০ জন লোককে সরিয়ে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2020, 08:50 AM
Updated : 1 April 2020, 09:19 AM

গত কয়েকদিন ধরে ‘মারকায নিজামুদ্দিন’ নামের তাবিলগ জামাতের ওই কেন্দ্রে তারা অবস্থান করছিল।

মারকার্য নিজামুদ্দিন থেকে ফেরার পর নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এ কাশ্মীরের শ্রীনগরে একজন ও পরে তেলেঙ্গানায় আরও ছয় জনের মৃত্যু হওয়ার পর তাবলিগ জামাতের ওই কেন্দ্র করোনাভাইরাসের ‘হটস্পট’ হিসেবে আভির্ভূত হয়, জানিয়েছে এনডিটিভি।

৮ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত এখানে বড় ধরনের একটি ধর্মীয় জমায়েতে যারা যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সবাইকে খুঁজে বের করতে রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দেয় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এরপর ওই জমায়েত থেকে নিজ নিজ এলাকায় ফেরা ১২৮ জনের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে তামিলনাডুতে ৫০ জন, দিল্লিতে ২৪ জন, তেলেঙ্গানায় ২১ জন, অন্ধ্র প্রদেশে ২১ জন, আন্দামানে ১০ জন, জম্মু ও কাশ্মীরে একজন এবং আসামে একজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত পাওয়া যায়। 

দেশজুড়ে ওই অভিযান শুরু হওয়ার পর সোমবার থেকে মারাকার্য নিজামুদ্দিনে অবস্থানরতদের সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়। সুরক্ষা পোশাক পরা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাবলিগ জামাতের এই কেন্দ্রের আশপাশের গলিগুলো সিল করে বন্ধ করে দেয়।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ধর্মীয় জমায়েতের আয়োজন করায় মারাকার্য নিজামুদ্দিন মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামালায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন, মাওলানা সাদ, জীশান, মুফতি শেহজাদ, এম শাফি, ইউনুস, মোহাম্মদ সালমান ও মোহাম্মদ আশরাফ।

এদের মধ্যে মাওলানা সাদ ২৮ মার্চ পুলিশের নোটিশ পাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা এএনআই-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই জমায়েতে ৮২৪ জন বিদেশিও অংশ নিয়েছিল এবং তারা বিভিন্ন রাজ্যে ভ্রমণরত আছে, তাদের বিস্তারিত পুলিশ প্রধানদের জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশে, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, মিয়ানমার, কিরগিজস্তান, আলজেরিয়া, জিবুতি, ইংল্যান্ড, ফিজি, ফ্রান্স ও কুয়েতের নাগরিকরা আছেন বলে জানা গেছে।

২০ মার্চ তেলেঙ্গানায় ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা তাবলিগ জামাতের ১০ সদস্যের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এড়ানোর জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে বিধান চালু করা হয়েছে, তা অগ্রাহ্য করে ৮ মার্চ থেকে শত শত লোক দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকার ওই শতবর্ষী মসজিদটিতে অবস্থান করছিল। এই মসজিদ কমপ্লেক্সে ছয়তলা একটি ভবনে থাকার জায়গা আছে।

মন্ত্রণালয়টির তথ্যানুযায়ী, ২১ মার্চ সেখানে ২১৬ জন বিদেশিসহ এক হাজার ৭৪৬ জন লোক ছিল।

পুলিশ দাবি করেছে, তারা পাহারা দিয়ে অনেককে বিমানবন্দর পর্যন্ত দিয়ে এসেছিল, কিন্তু দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার দুই দিন পর ২৬ মার্চ তারা সবাই ফিরে আসে। ওই সময় কমপ্লেক্সটিতে দুই হাজারের মতো লোক ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

পর্যটক ভিসায় ভারত এসে দিল্লির তাবলিগ জমায়েতে অংশ নেওয়া ৩০০ বিদেশিকে কালোতালিকভুক্ত করছে ভারত সরকার। যে বিদেশিরা পর্যটক হিসেবে ভারতে আসার আবেদন করে তাবলিগ জামাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিবে তাদের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।  

১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত তাবলিগ জামাত একটি ইসলাম ধর্মপ্রচার আন্দোলন। এর সদস্যরা সারা বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে আছে। ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় ও মার্চে পাকিস্তানে তাবলিগ জামাতের ইজতেমা হয়েছিল, দুই দেশেই সেখান থেকে ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।  

ভারত সরকার জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে তাবলিগের দুই হাজার ১৩৭ জন সদস্যকে শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিনে রেখে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, তামিলনাডু, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর এবং আন্দামানে দিল্লি থেকে ফেরা সদস্যদের খোঁজে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে দিল্লি থেকে ফেরা ১০ জনের করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর দ্বীপপুঞ্জটির এক হাজার ৮০০ লোককে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের শতাধিক ব্যক্তি ও অন্ধ্র প্রদেশের ৭০০ জনেরও বেশি দিল্লির মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে মারকায নিজামুদ্দিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২২ মার্চ ‘জনতা কারফিউ’ ঘোষণার পর অনুষ্ঠান বাতিল করেছিলেন তারা, কিন্তু হঠাৎ করে ট্রেন বন্ধ হওয়ায় তাদের সদস্যরা আটকা পড়ে যান। এরপর প্রথমে দিল্লির সরকার ও পরে প্রধানমন্ত্রী মোদী লকডাউন ঘোষণা করায় অনেকেই নিজামুদ্দিন কমপ্লেক্সে আটকা পড়ে থাকেন।

এই বিবৃতির পর দিল্লির কর্মকর্তারা বলেছেন, লকডাউনের অনেক আগেই দিল্লি সরকার সব ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সমাবেশ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল, মারকার্য নিজামুদ্দিন কর্তৃপক্ষ তা অগ্রাহ্য করেছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব লাব আগারওয়াল বলেছেন, “এটি দোষ খোঁজার সময় নয়, যেখানেই কোনো আক্রান্ত পাওয়া যাবে সেখানেই সংক্রমণ প্রতিরোধের পদক্ষেপ নেওয়াই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।”