করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে সফল

কল্পিত রহস্যময় একটি প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে পরিচালিত মহড়া পরীক্ষা এক মাসেরও কম সময়ের পর এসে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস ঠেকানোর হাতিয়ার তৈরিতে দক্ষিণ কোরিয়াকে সহায়তা করেছিল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2020, 06:12 AM
Updated : 31 March 2020, 06:16 AM

ওই মহড়া সংশ্লিষ্ট এক বিশেষজ্ঞ ও সরকারি এক গোপন নথির ভিত্তিতে প্রকাশিত বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়েছে।

ওই নথিতে দেখা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ে দুই ডজন শীর্ষ বিশেষজ্ঞ একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সামাল দেন। চীন ভ্রমণ করে আসা এক দক্ষিণ কোরীয় পরিবারের মধ্যে নিউমোনিয়ার দেখা পান তারা। ততোদিনে চীনে ছড়িয়ে পড়েছে অজ্ঞাত এক রোগ।

নতুন ধরনের করোনাভাইরাস হিসেবে কল্পনা করে নেওয়া রোগটি দ্রুতই পরিবারের সদস্য ও তাদের সংস্পর্শে আসা স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (কেসিডিসি) রোগটির জীবনশক্তি ও উৎপত্তি খুঁজতে অ্যালগরিদমের পাশাপাশি দ্রুত পরীক্ষার কৌশলও তৈরি করে ফেলেন।

গোপন ওই নথি অনুসারে, ২০ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের সন্দেহভাজন রোগী দেখা দিলে তখনকার মহড়া থেকে পাওয়া ওই ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়।

মহড়া পরিচালনাকারী কেসিডিসির অন্যতম বিশেষজ্ঞ লি স্যাং অন বলেন, "গত ২০ বছরের দিকে তাকালে দেখা যায়, মানুষের জীবন ইনফ্লুয়েঞ্জা অথবা করোনাভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত ছিল। আমরা তা ভালোভাবেই মোকাবেলায় করেছি। কিন্তু নতুন ধরনের একটি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম।

“এটা (মহড়া কাজে লাগার বিষয়টি) ছিল একটা অন্ধ ভাগ্য... ওই পরিস্থিতিটি বাস্তবে রূপ নিতে দেখে আমরা হতবাক হয়ে পড়েছি। কিন্তু মহড়া থেকে পরীক্ষা পদ্ধতি ও রোগ শনাক্তের পদ্ধতিতে আমাদের অনেক সময় বাঁচিয়ে দিয়েছে।”

আগ্রাসী ও টেকসই পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে চীনের বাইরে এশিয়ার সবচেয়ে বড় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের গতি শ্লথ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ওই মহড়া।

শুরুতে বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর কয়েক দিনের মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়া ব্যাপকভাবে পরীক্ষা শুরু করে। উপসর্গ না থাকলেও অন্যকে সংক্রমিত করতে পারেন এমন লোকদের পরীক্ষা করা, নিশ্চিত রোগীদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করার মত বিস্তৃত কর্মসূচি নিয়েছিল দেশটি।

বেশি একটা বিপর্যয় সৃষ্টির আগেই নভেল করোরাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার নেওয়া কার্যকর পদক্ষেপ খুবই প্রশংসিত হয়। এ মহামারীতে নয় হাজার ৫৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ ধরে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ বা তার নিচে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ লি বলেন, ২০১৫ সালে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (মার্স) ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ার পর ২০১৮ সালে বৃহদাকারে ডিএনএ বিশ্লেষণ ক্ষমতা জোরদারে‘স্টাডি গ্রুপ’ হিসেবে কেসিডিসির অধীনে বিশেষজ্ঞ দলটি গঠন করে দক্ষিণ কোরিয়া।

“ওই মহড়ার পরপরই চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। তখনই বিশেষজ্ঞ দলটি ধারণা করে, এটা বোধহয় নতুন করোনাভাইরাস। এমনকি চীন এটার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগেই কেসিডিসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।”

নথিতে আরও দেখা যায়, চীন ভাইরাসটিকে শনাক্ত করার তিন দিন আগে ৪ জানুয়ারি কেসিডিসির বিশেষজ্ঞ দলটি পরীক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলে। ৯ জানুয়ারি তারা সন্দেহজনক ঘটনাগুলো পরীক্ষা করা শুরু করে। মার্চের প্রথম দিকে দক্ষিণ কোরিয়া দিনে ২০ হাজার নমুণা পরীক্ষা করতে পারত। তখন দেশটির পাঁচটি কোম্পানি একযোগে নিজেদের ব্যবহার ও রপ্তানির জন্য ব্যাপক আকারে টেস্টিং কিট তৈরি করছিল।

লি বলেন, “দেশে মাত্র কয়েকটি সংক্রমণের ঘটনা নিয়ে ওই সময় আমাদের প্রতিক্রিয়াটা হয়তো একটু বেশিই দেখানো হয়েছে। কিন্তু এটা যে আসলেই একটা মহামারীতে রূপ নিতে পারে, তার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল।

"আমরা কি যথেষ্ট ভালো করেছি? আমি জানি না। কিন্তু ২০০১৫ সালে আমরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম, তা ফির আসুক আমরা চাই না। এখন আমাদের মূলমন্ত্র- ‘নেভার এগেইন’ (ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়)।”