অথচ এই মহামারীর প্রথম কেন্দ্রস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি গেলেও মৃত্যুর সংখ্যা ইতালির এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও কম।
যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলাই বাহুল্য, সেখানে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা একলাখ ৪২ হাজার ছাড়ালেও মৃত্যুর সংখ্যা আড়াই হাজারের মত।
ইউরোপের দেশ ইতালিতে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত ৯২ হাজার ৪৭২, যেখানে চীনে এই সংখ্যা ছিল ৮১ হাজার ৯৯৭। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭০ জন।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই মহামারীর সংক্রমণ রোধে ইতালিতে যখন টানা ছয় সপ্তাহের মতো অবরুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে তখন, অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ইতালিতে মৃত্যুহার অন্যান্য দেশের চেয়ে এত বেশি দেখাচ্ছে কেন?
সে প্রশ্নটিই খতিয়ে দেখেছে সিএনএন; আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটির এবিষয়ক প্রতিবেদনটি সীমিত সম্পাদিত আকারে পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতালির মৃত্যুহার বেশি হওয়ার পেছনে একাধিক উপাদান একসঙ্গে কাজ করেছে। মূলত ভাইরাসের মুখে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের ব্যাপক সংখ্যক বয়োবৃদ্ধ জনগোষ্ঠী ও সেখানে ভাইরাসটি পরীক্ষার চলমান পদ্ধতিতে পুরো সংক্রমণের চিত্র উঠে না আসার কথা তুলে ধরছেন তারা।
আক্রান্তের সংখ্যা‘বাস্তব নয়’
মিলানের সাকো হসপিটালের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের প্রধান মাসিমো গালি বলেন, করোনাভাইরাসে নিশ্চিত শনাক্ত হিসেবে ইতালিতে যে সংখ্যা দেখানো হচ্ছে, তা সংক্রমিত পুরো জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বশীল নয়।
গালি বলেন, “ইতালির সবচেয়ে আক্রান্ত এলাকা উত্তরের লম্বার্ডি থেকে প্রতিদিন মাত্র ৫ হাজার কফের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, যা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম। সেখানে ঘরে ঘরের হাজার হাজার অপেক্ষা করছে।"
এই পরীক্ষা করতে গিয়ে সুরক্ষা সরঞ্জামের সীমাবদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ
অন্য দেশগুলোকে সর্তক করে ইতালির এই চিকিৎসক বলেন, “আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো, বিশেষ করে লম্বার্ডি এলাকায়। কিন্তু তারপরও মহামারীতে এটা ভেঙে পড়েছে।”
বৃদ্ধরা ঝুঁকির মুখে
অন্য যে উপাদানটি নভেল করোনাভাইরাসে ইতালিতে উচ্চ মৃত্যু হার দেখাচ্ছে তা হল- জাপানের পর এই দেশে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি।
দেশটির হেলথ ইনস্টিটিউট শুক্রবার বলেছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের গড় বয়স ৭৮ বছর।
গালি বলেন, নানা রোগ নিয়েও বৃদ্ধদের বাঁচিয়ে রাখতে সফল ছিল ইতালির সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কিন্তু করোনাভাইরাসের এমন সংক্রমণে তৈরি নাজুক অবস্থায় ভেঙ্গে পড়ছেন তারা ।"
তবু এর মধ্যেও আশাবাদী হওয়ার ঘটনা আছে। ১০২ বছর বয়সী গ্রন্ডোনা ইতালিকার কথাই ধরা যাক। তিনি সম্প্রতি ইতালির জেনোয়া শহরে ২০ দিন হাসপাতালে কাটানোর পর সুস্থ হয়েছেন।
চিকিৎসকরা তাকে ‘হাইল্যান্ডার’ বা ‘অমর’ আখ্যা দিয়েছেন।