কঠোর সিদ্ধান্তে জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত, ক্ষমা চাইলেন মোদী

দেশজুড়ে তিন সপ্তাহের লকডাউনে শহরগুলোতে আটকে পড়া হাজার হাজার দিনমজুর বেপরোয়া হয়ে নিজ নিজ গ্রামে ফেরার চেষ্টায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ‘কঠোর সিদ্ধান্তের’ জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2020, 08:01 AM
Updated : 29 March 2020, 08:29 AM

“আমার গ্রহণ করা কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে অসুবিধার কারণ হওয়ায় আমি জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আপনাদের সুরক্ষার নিশ্চিত করার জন্যই আমাকে এ পদক্ষেপগুলো নিতে হয়েছে,” রোববার স্থানীয় সময় সকালে মাসিক রেডিও বক্তৃতা ‘মন কি বাত’ এ মোদী এমনটি বলেছেন বলে উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি।

গত সোমবার মোদী বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন। তারপর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ভারতে সব ধরনের গণপরিবহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, জিম, সুইমিংপুল বন্ধ আছে। তিন সপ্তাহের এ লকডাউন চলাকালে দেশের নাগরিকদের বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

লকাডাউন শুরু হওয়ার পর দেশটির বড় শহরগুলোতে হাজার হাজার দিনমজুর বেকার হয়ে পড়েছে। আশপাশের গ্রামগুলো থেকে কাজের খোঁজে শহরে যাওয়া এসব লোক অর্থের অভাবে আশ্রয় হারিয়েছে, খাবার কেনার টাকাও তাদের কাছে নেই। রাজ্য সরকারগুলো এ ধরনের লোকজনের জন্য খাবার সরবাহের ঘোষণা দিলেও সামাজিক রান্নাঘর ও বিতরণ নেটওয়ার্ক এখনও প্রস্তুত হওয়ার পথে রয়েছে।

পরিস্থিতির চাপে আতঙ্কিত ওই মজুররা গণপরিবহনের অনুপস্থিতিতে পায়ে হেঁটেই দূরবর্তী গ্রাম বা ছোট শহরগুলোতে থাকা তাদের বাড়ির পথে রওনা হন। ভারতের উত্তরাঞ্চলের সব মহাসড়কগুলোতে এমন লোকজনের স্রোত দেখা যাচ্ছে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে। বোচকা-বাচকি নিয়ে কোলে, কাঁখে বাচ্চাদের তুলে অনেকে পরিবারসহ শত শত কিলোমিটার দূরের গ্রামের পথ ধরেছে।          

শনিবার বাড়ির পথ ধরা এই মিছিলেরই একজন ৩৮ বছর বয়সী রানবীর সিং দিল্লি থেকে মধ্যপ্রদেশের বাড়ির পথে রওনা হয়ে আগ্রা পর্যন্ত গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।

দেশজুড়ে এমন বেপরোয়া চলাচলের মধ্যেই মোদী বিধিনিষেধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে যারা লকডাউন অমান্য করছেন তারা ‘নিজের জীবন নিয়ে খেলছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

মোদী বলেন, “লোকজন নিশ্চয় অবাক হয়ে ভাবছে আমি কী ধরনের প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু লকডাউন ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো সমাধান ছিল না। অনেক লোক এখনও লকডাউনকে অবজ্ঞা করছেন, এটি দুঃখজনক। বিশ্বজুড়ে অনেক লোকই এই ভুলটি করেছে, যারা এমন করছে তারা তাদের নিজের জীবন নিয়ে খেলছে।”  

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী রোববার দুপুর পর্যন্ত ভারতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ৮৭ জন।