করোনাভাইরাস: যুক্তরাষ্ট্রে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিল পাস

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের একটি সহায়তা বিল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2020, 10:22 AM
Updated : 26 March 2020, 10:22 AM

আইনে পরিণত হলে এটিই হবে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রণোদনা।

ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান আইন প্রণেতাদের মধ্যে কয়েকদিনের আলোচনা শেষে বুধবার সিনেটে এ সহায়তা বিল ৯৬-০ ভোটে অনুমোদিত হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

নিয়ম অনুযায়ী, এটি এখন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে যাবে। সেখানে অনুমোদন পেলে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিলটির আইনে পরিণত হওয়ার কথা।

করোনাভাইরাসজনিত দুর্যোগ সহায়তার এ বিলে বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিককে নগদ এক হাজার ২০০ ডলার দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে; ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন দিতেও সহায়তা রাখা হয়েছে।

দেশটিতে কভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা এরই মধ্যে এক হাজার পেরিয়ে গেছে বলে বিভিন্ন হিসাবে দেখা যাচ্ছে; আক্রান্তের সংখ্যাও ৭০ হাজার ছুঁই‌ছুঁই।

ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বুধবারই ২১ হাজার ছাড়িয়েছে; আক্রান্ত পৌছেছে পাঁচ লাখের কাছাকাছি।

দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো বিশেষ করে স্পেন ও ইতালিতে দাপট দেখানো ভাইরাসটির পরবর্তী কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্র হতে যাচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করলেও গত কয়েকদিন ধরে ওয়াশিংটনে করোনাভাইরাসজনিত অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলার আলোচনা নিয়ে তীব্র বাদানুবাদ চলেছে।

নাগরিকদের সুবিধা নিয়ে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান সিনেটরদের মতবিরোধে বুধবারও সহায়তা বিলের ভোট কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে গিয়েছিল।

রিপাবলিকান সিনেটর টিম স্কট, রিক স্কট, বেন স্যাসি ও লিন্ডেসে গ্রাহাম বলেন, বিলে বেকারদের জন্য বিপুল পরিমাণ সহায়তার প্রস্তাবে কর্মীরা কাজে যাওয়ার চেয়ে বেকার থাকতেই বেশি পছন্দ করতে পারেন। চাকরিজীবীদের চেয়ে বেকারদের জন্য সুবিধা বেশি থাকলে বিলটির বিরোধীতা করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

ডেমোক্রেট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স জানান, রিপাবলিকানরা তাদের এমন অবস্থান না পাল্টালে তিনিও বিলটির বিরোধীতা করবেন। পরে রিপাবলিকানদের সংশোধনী নিয়ে ভোট হলেও তা পর্যাপ্ত সমর্থন পায়নি বলে বিবিসি জানিয়েছে।

ভোটে ৯৬-০ ব্যবধানে বিলটি অনুমোদিত হওয়ার পর সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, কোনো সিনেটর বিলটির বিরোধীতা না করায় তিনি ‘গর্বিত’। বিলটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘যুদ্ধকালীন সময়ের বিনিয়োগ’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন তিনি।

“ব্যাপক উত্থান পতন থাকলেও শেষ পর্যন্ত এর চমৎকার পরিসমাপ্তিই হলো। আমার সবসময়ই বিশ্বাস ছিল যে আমরা বিলটি পাস করতে পারবো, কেননা যুক্তরাষ্ট্র ও এর জনগণ এটি চেয়েছিল,” বলেছেন ডেমোক্রেট সিনেটর চাক শুমার।

বিলটির বিস্তারিত না জানা গেলেও দুই পক্ষই এতে কর ছাড়, ঋণ, হাসপাতালের জন্য অর্থ ও করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ধারের বিভিন্ন প্যাকেজে একমত হয়েছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।

শুক্রবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে বিলটি নিয়ে ভোট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও কংগ্রেস পার হয়ে হোয়াইট হাউসের ডেস্কে আসা মাত্রই বিলটিতে স্বাক্ষরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠার এ বিলে বছরে ৭৫ হাজার ডলার কিংবা তার কম আয় করা নাগরিকদের প্রত্যেককে এক হাজার দুইশ ডলার নগদ অর্থ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিবাহিত যুগল যাদের পারিবারিক আয় দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত তারা পাবেন দুই হাজার ৪০০ ডলার; প্রত্যেক সন্তানের জন্য মিলবে অতিরিক্ত আরও ৫০০ ডলার করে।

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ডেমোক্রেট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, তার কক্ষে বিলটি কণ্ঠভোটেই পাস হবে বলে তিনি আশা করছেন।

এর ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিংবা যারা স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে আছেন তাদের বাইরে থেকেই বিলের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান জানানোর সুযোগ মিলবে। তবে নিম্নকক্ষের সদস্যদের কোনো একজনও যদি এ প্রক্রিয়ায় আপত্তি জানান, তাহলে ওয়াশিংটনের কংগ্রেস কক্ষেই ভোট হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে একইসময়ে প্রতিনিধি পরিষদের কক্ষে অল্প ক’জনের বেশি একসঙ্গে থাকতে পারবেন না, সে ক্ষেত্রে সারাদিন ধরেই বিলটি নিয়ে ভোটের সম্ভাবনা আছে।