করোনাভাইরাস: বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ২০ হাজার ছাড়াল

বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ পার হওয়ার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, যা এখন ২০ হাজারেরও বেশি বলে জানাচ্ছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2020, 12:51 PM
Updated : 25 March 2020, 07:24 PM

আসছে দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র প্রাদুর্ভাবের নতুন উপকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারত দেশজুড়ে পুরোপুরি ২৪ ঘণ্টার লকডাউন শুরু করেছে।

একদিকে এই মহামারির প্রাণকেন্দ্র চীনের হুবেই প্রদেশ বুধবার থেকে লকডাউন তথা অবরুদ্ধ দশা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে; অপরদিকে বহু দেশ নতুন করে লকডাউন শুরু করেছে বা প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো দুই জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে, আর সৌদি আরব, কেপ ভার্দিতে ঘটেছে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা।

বিশ্বজুড়ে প্রবল আতঙ্ক তৈরি করা ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উৎপাদন স্থবির করার হুমকি তৈরি করেছে।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যু ও সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসএসই) দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী তুলে ধরা হল।

* রয়টার্স বলছে, ১৯৭টি দেশ ও অঞ্চলে পৌঁছে যাওয়া ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ২১ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ লোকের।

* অপরদিকে জনস হপকিন্স জানাচ্ছে, বিশ্বের ১৭২টি দেশে ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ৫১ হাজার ৩৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার ৪৯৯।

* রয়টার্সেরর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে আক্রান্তদের মধ্যে এক লাখ আট হাজার ৭৪৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন, হপকিন্সের হিসাব অনুযায়ী সংখ্যাটি এক লাখ ১২ হাজার ৯৮২ জন।

ইউরোপ

চীন থেকে ছড়ালেও এখন নভেল করোনাভাইরাস মহামারি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইউরোপ। মহাদেশটির ইতালি মৃত্যু সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি করে ভাইরাসটি কতোটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে তা দেখাচ্ছে।

ইতালির আক্রান্তের সংখ্যা সম্ভবত সরকারি হিসাবের ১০ গুণ বেশি বলে দেশটির তথ্য সংগ্রাহক সংস্থার প্রধান আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, জানিয়েছে রয়টার্স।

বুধবার রাত নাগাদ জনস হপকিন্সের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ হাজার ৩৮৬ জন, মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ৮২০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৩৬২ জন।

মৃতের সংখ্যায় স্পেন ইতোমধ্যে চীনকে ছাড়িয়েছে ইতালির পরেই স্থান নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে একলাফে রেকর্ড সংখ্যক ৭৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এদিন দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৬১০ জনে, মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৪৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ স্বাস্থ্য কর্মী হওয়ায় দেশটির চিকিৎসক ও নার্সরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

ফ্রান্স কভিড-১৯ এ মৃত্যুর দিক দিয়ে পঞ্চম দেশ হিসেবে মঙ্গলবার এক হাজারের কোটা পার করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশটির আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজার ৬৩৫ জন, মৃতের সংখ্যা ১১০২ জন ও সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ২৮৮ জন।

জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৯৫২ জন, মৃতের সংখ্যা ১৭১ জন ও সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন হাজার ২৯৯ জন।

যুক্তরাজ্যের নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ৩২৮ জন, মৃতের সংখ্যা ৪৩৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৩৫ জন। দেশটির ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রপ্রধান ৭১ বছর বয়সী যুবরাজ চার্লসও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ১০ হাজার ১৭১, মৃত্যু ১৩৫ ও সুস্থ হয়েছেন ১৩১ জন।

নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত পাঁচ হাজার ৫৮৫, মৃত্যু ২৭৭ ও সুস্থ হয়েছেন ৩ জন।

বেলজিয়ামে আক্রান্ত চার হাজার ৯৯৩ জন, মৃত্যু ১৭৮ ও সুস্থ হয়েছেন ৫৪৭ জন।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল

চীনে বুধবার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আরও হ্রাস পেয়েছে, বিদেশ প্রত্যাগতদের মধ্যে আক্রান্ত কমেছে এবং স্থানীয়ভাবে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি।

পরিস্থিতি উন্নতির ধারাবাহিকতায় নভেল করোনাভাইরাসের উৎসস্থল হুবেই প্রদেশ বুধবার সব ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এই প্রদেশটির প্রায় ছয় কোটি লোক জানুয়ারি থেকে লকডাউন অবস্থায় ছিল। সংক্রমণের যেখান থেকে ছড়িয়েছে হুবেইয়ের সেই রাজধানী শহর উহান থেকে ৮ এপ্রিল লকডাউন তুলে নেওয়ার কথা রয়েছে।

এ পর্যন্ত চীনে আক্রান্ত হয়েছে ৮১ হাজার ৬৬১ জন, মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ২৮৫ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ৭৩ হাজার ৭৭০ জন।

এশিয়ার অন্যতম প্রাদুর্ভাব আক্রান্ত দেশ ইরানে আক্রান্তে সংখ্যা ২৭ হাজার ১৭, মৃত্যু হয়েছে ২০৭৭ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ৯৬২৫ জন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত নয় হাজার ১৩৭ জন, মৃত্যু ১২৬ এবং সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ৭৩০ জন।

জাপানে আক্রান্ত এক হাজার ১৯৩, মৃত্যু ৪৩ এবং সুস্থ হয়েছেন ২৮৫ জন।

ইন্দোনেশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯০, মৃতের সংখ্যা ৫৮ জন ও সুস্থ হয়েছেন ৩১ জন।

পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা ১০১৬ ও মৃতের সংখ্যা সাত জন।

সৌদি আরবে আক্রান্ত ৭৬৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২৮ জন। মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো দেশটিতে কভিড-১৯ আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।

আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্র নভেল করোনাভাইরাস মহামারি ছড়ানোর নতুন বিশ্বকেন্দ্র হতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে।

তবে ইস্টারের আগেই যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাসমুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, যদিও ভাইরাসটি ‘বুলেট ট্রেনের’ চেয়ে দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো।

যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫ হাজার ২২৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ৮০২ জনের ও সুস্থ হয়েছেন ৩৫৪ জন।

কানাডায় আক্রান্ত দুই হাজার ৭৯২ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ১১০ জন।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে আক্রান্ত ১০৮২ জন, মৃতের সংখ্যা ২৭ ও সুস্থ হয়েছেন তিন জন।