মাস্ক, পিপিইর ঘাটতি মেটানোর ডাকে সাড়া ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির

মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন ঘটায় বেশিরভাগ দোকান ও শো-রুম বন্ধ থাকলেও ডিজাইনার, নামিদামি ব্র্যান্ড ও ফ্যাশনজগতের জায়ান্টরা এখন উপদ্রুত দেশগুলোতে মাস্ক, পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ও কভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় নানান উপকরণের ঘাটতি মেটাতে নেমে পড়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2020, 08:39 AM
Updated : 25 March 2020, 08:40 AM

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে বিভিন্ন কারখানা মাস্ক, পিপিই ও চিকিৎসা উপকরণের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করলেও তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় করোনাভাইরাসের দাপট কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।

বাধ্য হয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মীকেই রোগীদের ব্যবহৃত পুরনো মাস্ক পুনর্ব্যবহার করতে হচ্ছে কিংবা নিজেদেরই বানিয়ে নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।  

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভাইরাস উপদ্রুত অঙ্গরাজ্য নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো টুইটারে সবাইকে সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

“আমাদের সৃজনশীল কোম্পানিগুলোকে দরকার যারা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করতে পারবে,” লিখেছিলেন তিনি।

তার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক কোম্পানিই তাদের উৎপাদনের ধরন বদলে, সেলাই কর্মী ও অব্যবহৃত কাঁচামাল ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় উপকরণ বানানোর ঘোষণা দিয়েছে।

কুমোর ডাকে সাড়া দেওয়া প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন ফ্যাশন ডিজাইনার ও ‘প্রজেক্ট রানওয়ে’র অ্যালামনাই ক্রিস্টিয়ান সিরিয়ানো।

“যদি নিউ ইয়র্কের গভর্নর কুমো মাস্কের দরকারের কথা বলে থাকেন, আমার দল কিছু বানাতে পারেন। বাসা থেকে কাজ করা সেলাইকর্মীদের পূর্ণাঙ্গ দল আছে আমার, যারা সাহায্য করতে পারে,” বলেছেন তিনি। 

কুমোর সঙ্গে অনলাইনে ওই আলাপচারিতার কয়েকদিন পরই ক্রিস্টিয়ানো তাদের ফেইসমাস্ক উৎপাদন কাজের একটি ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করেন।

নেপালি বংশোদ্ভুত আমেরিকান ডিজাইনার প্রবাল গুরুং তার প্রতিষ্ঠানের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে পিপিই বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন; লেডি গাগা ও মিশেল ওবামার মতো সেলিব্রেটিদের পোশাক বানিয়ে খ্যাতি অর্জন করা ডিজাইনার ব্র্যান্ডন ম্যাক্সওয়েল বানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য গাউন।

সুপরিচিত সুইমওয়্যার ব্র্যান্ড কার্লা তাদের ভার্জিনিয়ার কারখানাকে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় উপকরণ বানাতে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলস অ্যাপারেলস তাদের সাড়ে চারশ’র বেশি কর্মীকে মাস্ক বানানোর কাজে নামিয়ে দিয়েছে। অ্যাপ্রন ও রাঁধুনিদের বিশেষ পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হেডলি অ্যান্ড বেনেটও চাঁদা তুলে কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামনের কাতারে থাকা কর্মীদের জন্য মাস্ক উৎপাদন শুরু করেছে।

ইউরোপের বেশিরভাগ সুপরিচিত ব্র্যান্ড কাজ করছে পিপিই বানাতে। মহাদেশটির দুই ফ্যাশন জায়ান্ট এইচঅ্যান্ডএম ও ইনডিটেক্স চিকিৎসা খাতে ব্যবহারের জন্য এ প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট বিপুল পরিমাণ উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে। ফরাসী প্রতিষ্ঠান কেরিং বলেছে তাদের দুটি ব্র্যান্ড বালেনসিয়াগা ও ইউভস সেইন্ট লরেন্ট কভিড-১৯ এর মাস্ক বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেরিং ফরাসী স্বাস্থী কর্মীদের জন্য ৩০ লাখ চীনা মাস্ক জোগাড় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; তাদের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড গুচি ১১ লাখ মাস্ক ও ৫৫ হাজার গাউন ইতালিতে সরবরাহের চেষ্টা করছে।

আরেক ফ্যাশন জায়ান্ট এলভিএমএইচও আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন ব্যবহার করে চীন থেকে ৪ কোটি মাস্ক জোগাড়ের চেষ্টা করছে।

ইতালির প্রাডা বলেছে তারা তুসকানি অঞ্চল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ৮০ হাজার মেডিকেল গাউন ও এক লাখ ১০ হাজার ফেইসমাস্কের উৎপাদন শুরু করেছে। টেক্সটাইল কোম্পানি মিরোগ্লিও গ্রুপ গত সপ্তাহে জরুরি বিভাগের কর্মী, এনজিও কর্মী ও সাংবাদিকদের জন্য ধোয়া যায় এমন সুতি ও ইলাস্টেনের ১০ হাজার মাস্ক সরবরাহ করেছে। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি তারা এরকম আরও ৬ লাখ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়েছে।

কোম্পানিগুলো বলছে, তাদের সব মাস্কই করোনাভাইরাস প্রতিরোধী এন-৯৫ মাস্কের মতো কার্যকরী নয়; যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, ঘাটতির এ সময়ে নাক-মুখ ঢাকতে সক্ষম এমন যেকোনো মাস্কেই কাজ চলবে।

কেবল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিই নয়, চিকিৎসা উপকরণের ঘাটতি মেটাতে মাঠে নেমেছে সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রে দন্তচিকিৎসক, আসবাবপত্র নির্মাতা এমনকী বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্সও মাস্ক সরবরাহ করছে। শিকাগো ও নিউ ইয়র্কে বিভিন্ন জেলখানার কয়েদিরাও বানাচ্ছে নানান সরঞ্জাম।

কেবল ডিজাইনার, নামিদামি ব্র্যান্ড কিংবা ফ্যাশন জায়ান্টরাই নন, মাঠে নেমেছে খ্যাতনামা পারফিউম প্রস্তুতকারক ও ডিস্টিলারি প্রতিষ্ঠানও। তারাও তাদের উৎপাদনের ধরন বদলে বানাচ্ছে স্যানিটাইজার; ভাইরাস উপদ্রুত অঞ্চলগুলোতে এরও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।