৫৬ বছর বয়সী এই ডেনিস গেল সপ্তাহে কোপেনহেগেন থেকে ৫০ মাইল দূরে নিজের বাড়িতে সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে সিএনএনকে বলেন, স্কি শেষে যে রকম সময় কাটাতে হয়, তেমনটাই কেটেছে অস্ট্রিয়ার টাইরোল প্রদেশের বার কিসলোতে।
“বহু মানুষ, প্রচুর পানীয় এবং দারুণ সব ওয়েটার তোমাকে আরও বেশি সার্ভ করতে পারলেই যেন খুশি।”
সেখান থেকে ফেরার চার দিন পর পরীক্ষায় লেরফেলডটের করোনাভাইরাস ধরা পড়ে, একসঙ্গে ভ্রমণ করা তার এক বন্ধুরও এই রোগ শনাক্ত হয়।
ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষগুলোর বরাত দিয়ে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু তারা দুজনই নয়, ইসক থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফেরা কয়েকশ মানুষের এই ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে, যাদের অনেকেই কিসলোতেই ছিলেন।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সিএনএনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে কিছু বলতে রাজি হয়নি ওই বার কর্তৃপক্ষ। এর মালিক বার্নহার্ড জানগার্ল গত ১৬ মার্চ জার্মান নিউজ সাইট টি-অনলাইনকে বলেছেন, তার কর্মীরাও অন্য কারও না কারও কাছ থেকে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন।
এজন্য কোনো একটি কোম্পানিকে দায়ী করার চেষ্টা প্রগলভতা ছাড়া কিছু নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সিএনএন বলছে, গত ৪ মার্চ আইসল্যান্ড সরকার তার দেশের একদল নাগরিক ইসক থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সতর্ক করে। এরপরেও অস্ট্রিয়ান কর্তৃপক্ষ সেখানে স্কি ট্যুরিজম ও পার্টি চালিয়ে যেতে দেয়। ১৩ মার্চ ওই রিসোর্ট পুরো কোয়ারেন্টিনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত নয় দিন সেখানে একইভাবে সব কার্যক্রম চলতে থাকে। তবে তার তিন দিন আগে ইসকের বারগুলো বন্ধ করা হয়।
এমনকি এক বার কর্মীর করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পরও ৮ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টাইরোলের মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ‘উদ্বেগের কোনো কারণ নেই’ বলে পর্যটকদের আশ্বস্ত করে। স্কি পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির প্রদেশ ইসকের মেডিকেল কর্তৃপক্ষের পরিচালক ফ্রানৎস কাৎসগ্রেবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনো সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে সিএনএন।
প্রতি বছর শীতে ইসক ও পাশের গ্রামগুলোতে পাঁচ লাখের মতো পর্যটন গিয়ে থাকে। এর আগে সেখানে ঘুরে আসাদের তালিকায় প্যারিস হিলটন, নাওমি ক্যাম্পবেল ও বিল ক্লিনটনের মতো তারকা ও রাজনীতিকের নাম রয়েছে।
সিএনসিএন বলছে, অন্তত চারটি দেশ অস্ট্রিয়ার এই পর্যটন নগরী থেকে নাগরিকদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে। আর এতে দেখা গেছে, মাত্র এক হাজার ৬০০ বাসিন্দার ওই ছোট্ট গ্রামটি কভিড-১৯ রোগ বিস্তারের একটি মুখ্য বাহক হয়ে উঠেছে।
ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ডের পাশাপাশি জার্মানিতেও ইসক থেকে ফেরা প্রায় ৩০০ জনের দেহে এই ভাইরাস ধরা পড়েছে। জার্মান সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ৮০ জনের বেশি হামবুর্গের এবং ২০০ জন ছোট শহর আলেনের বাসিন্দা।
এভাবে করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় আলেন কর্তৃপক্ষ শুধু ইসক ঘুরে যাওয়াদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি নতুন ইমেইল চালু করে। গত ১৭ মার্চ এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জার্মানির বাডেন-ভুটেমবার্গ প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সমস্যা ইরান নয়, এটা ইসক।”
নরওয়ের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্য মতেও ২০ মার্চ নাগাদ তাদের দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক হাজার ৭৪২ জনের মধ্যে ৮৬২ জন বিদেশফেরত এবং তাদের মধ্যে ৫৪৯ জন গেছেন অস্ট্রিয়া থেকে।
কিসলোতে একসঙ্গে ১০০ জন অতিথি থাকেন, সেখানেই ছিলেন লেরফেলডেট। তার সঙ্গে ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে ও জার্মানির নাগরিকরা ছিলেন বলে জানান তিনি।
১৩ মার্চ বিকালে যখন ইসকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে অস্ট্রিয়া সরকার, তখন যে সব পর্যটক সেখানে ছিলেন তাদের সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকা ছাড়তে বলা হয়।