১৯৫৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর দুর্যোগ মোকাবেলায় ক্যারিবীয় এ দ্বীপদেশটি প্রায়ই তাদের ‘সাদা পোশাকের বাহিনী’ পাঠিয়ে আসছে।
হাইতিতে কলেরা এবং ২০১০ সালের দিকে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও দেশটির চিকিৎসকরা সামনের কাতারে ছিলেন।
এবারই প্রথম কিউবা বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ ইতালিতে ৫২ সদস্যের শক্তিশালী একটি দল পাঠাচ্ছে; যার মাধ্যমে দেশটি তাদের ‘চিকিৎসা কূটনীতির’ বড় ধরনের নজিরও স্থাপন করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এ নিয়ে কিউবার ষষ্ঠ মেডিকেল ব্রিগেড অন্য কোনো দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হল। ক্যারিবীয় এ দেশটি এর আগে তাদের সমাজতান্ত্রিক মিত্র ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়ার পাশাপাশি জ্যামাইকা, সুরিনাম ও গ্রেনাদাতেও চিকিৎসক দল পাঠিয়েছে।
“আমরা সবাই বেশ ভীত, কিন্তু আমাদের বিপ্লবী দায়িত্ব আছে, তাই আমরা আমাদের ভয়কে একপাশে সরিয়ে রেখেছি,” শনিবার ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন ৬৮ বছর বয়সী চিকিৎস লিওনার্দো ফার্নান্দেজ।
“যারা ভীত নন বলে দাবি করেন, তারা সুপারহিরো। আমরা সুপারহিরো নই, বিপ্লবী চিকিৎসক,” বলেছেন এ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ।
এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো আন্তর্জাতিক মিশনে বাইরে যাচ্ছেন ফার্নান্দেজ; ওই মিশনগুলোর মধ্যে লাইবেরিয়ায় ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াইও ছিল।
“সংহতির নীতির ভিত্তিতে আমরা একটি পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছি,” বলেছেন ৬৪ বছর বয়সী আরেক চিকিৎসক গ্রাসিলিয়ানো দিয়াজ।
ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন সবচেয়ে বেশি সবচেয়ে বেশি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইতালিতে; এর মধ্যে দেশটির লমবার্দি অঞ্চলের অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ।
শনিবার একদিনেই অঞ্চলটিতে ৫৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা সব মিলিয়ে লমবার্দিতে কভিড-১৯জনিত মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৯৫-তে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন অঞ্চলটির সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রধান গিউলিও গালেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কিউবা নিজদেশে এমন এক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যা এমনকী উন্নত দেশগুলোরও ঈর্ষার কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে রয়টার্স।
কিউবায় জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসক সংখ্যা বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিদেশে কর্মরত চিকিৎসক এমনকি দুর্যোগের মধ্যে যে মেডিকেল ব্রিগেডের চিকিৎসকরা বিশ্বজুড়ে হাভানার সুনাম এনে দিচ্ছেন তাদের বাদ দিলেও হিসাব প্রায় একই থাকে, বলছে রয়টার্স।
“সংকটের সময়ে কিউবার সরকার, কিউবার জনগণ পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তারা আমাদের আবেদন শুনেছে এবং সাড়া দিয়েছে,” শনিবার কিংস্টন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা কিউবার ১৪০ চিকিৎসা কর্মীকে স্বাগত জানিয়ে এমনটাই বলেছেন জ্যামাইকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্রিস্টোফার টাফটন।
বেশ কয়েকটি ক্যারিবীয় বন্দর ফিরিয়ে দেয়ার পর ব্রিটিশ একটি প্রমোদতরীকে কিউবা নিজেদের বন্দরে ভিড়ার অনুমতি দেয়ায় গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যও দেশটিকে ধন্যবাদ দিয়েছিল।
দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বিশ্বখ্যাত কমিউনিস্ট এ রাষ্ট্রটি নিজেদের ভূখণ্ডে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায়ও নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৫ জনের কভিড-১৯ আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
কয়েক হাজার চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা দ্বারে দ্বারে গিয়ে ক্যারিবীয় এ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
শুক্রবার এক ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ-কানেল মঙ্গলবার থেকে বিদেশি নাগরিকদের কিউবার প্রবেশ বন্ধ রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন।
এ ঘোষণায় পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।