করোনাভাইরাস: শি’র সমালোচনাকারী সাবেক চীনা কর্মকর্তা ‘নিখোঁজ’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে চীন সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ভাষণের সমালোচনা করা দেশটির সাবেক এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে তার বন্ধুরা অভিযোগ করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2020, 06:41 AM
Updated : 15 March 2020, 06:41 AM

ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত হুয়াইয়ুআন রিয়েল এস্টেট গ্রুপের সাবেক শীর্ষ নির্বাহী রেন জিকিয়াং ফেব্রুয়ারিতে শি’র ভাষণের পর প্রেসিডেন্টকে ‘ভাঁড়’ বলেছিলেন।

বৃহস্পতিবার থেকে জিকিয়াংয়ের খোঁজ মিলছে না বলে তার তিন বন্ধু বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

“আমাদের অনেক বন্ধু তাকে খুঁজছে। রেন জিকিয়াং একজন সুপরিচিত ব্যক্তি এবং তার উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও মোটামুটি সবাই জানে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো এর জন্য দায়ী তাদের শিগগিরই এ বিষয়ে যৌক্তিক ও আইনী ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত,” বলেছেন নিখোঁজ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়াং ইং।

রয়টার্স জানিয়েছে, জিকিয়াংয়ের মোবাইলে বেশ কয়েকদফা ফোন দিলেও কেউ তা ধরেনি। বেইজিং পুলিশ এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের তথ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। 

ফেব্রুয়ারিতে শি চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের এক লাখ ৭০ হাজার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক টেলিকনফারেন্সে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং তা মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্বন্ধে কথা বলেছিলেন।

ওই ভাষণের সমালোচনা করে জিকিয়াং একটি নিবন্ধ লেখেন, যা পরে অনলাইনেও ছড়িয়ে পড়ে।

“ভাষণ পর্যালোচনা করে সেখানে কোনো সম্রাটকে দাঁড়িয়ে তার ‘নতুন পোশাক’ প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে না, বরং এক ভাঁড়কে নগ্ননৃত্য করতে দেখা যাচ্ছে, যে সম্রাট হিসেবে নিজের মেয়াদ বাড়াতে চেষ্টা করছে,” শি’র নামোল্লেখ না করে জিকিয়াং তার লেখায় এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট চায়না ডিজিটাল টাইমস। 

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ভেতর ‘শাসনপদ্ধতি নিয়ে সংকট’ আছে, প্রেসিডেন্টের ভাষণে এমনটা উন্মোচিত হয়েছে বলেও নিবন্ধে জানান জিকিয়াং।

তিনি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চীন সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ঘাটতির কারণেই বেইজিং দ্রুততার সঙ্গে কভিড-১৯ মোকাবেলা করতে পারেনি; উল্টো পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। 

ডিসেম্বরের শেষদিকে হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস চীনজুড়ে এখন পর্যন্ত ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে। প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তিন হাজার ১৯৯ জনের।

জিকিয়াং এর আগেও অনলাইনে শি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। এজন্য ২০১৬ সালে বছরখানেকের জন্য তার পার্টি সদস্যপদও স্থগিত রাখা হয়েছিল।

‘অবৈধ তথ্য ছড়ানোর’ অভিযোগে একই বছর চীন সরকার সাবেক এ কর্মকর্তার উইবু অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেয়। টুইটারসদৃশ এ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসময়ই জিকিয়াংয়ের তিন কোটি অনুসারী ছিল। 

হুয়াইয়ুআন রিয়েল এস্টেটের সাবেক এ শীর্ষ নির্বাহী সমালোচনা করলেও করোনাভাইরাস রুখতে চীন সরকারের নেওয়া নানান পদক্ষেপ পশ্চিমা মহলে বেশ সমাদৃত হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইকে বেইজিং শি নেতৃত্বাধীন ‘জনযুদ্ধ’ হিসেবে চিত্রায়িত করেছে। সংক্রমণ রুখতে তারা উহানসহ বেশ কয়েকটি শহরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল; গণপরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নানান বিধিনিষেধও আরোপ করেছিল।

তাদের কঠোর পদক্ষেপের কারণে কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই চীনে ভাইরাসটির বিস্তার কমতে শুরু করে; যদিও ইউরোপে এর প্রাদুর্ভাব এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে