করোনাভাইরাস: আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ সেরে ওঠা রোগীর

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্নদের কভিড-১৯ নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রোগটি থেকে সেরে ওঠা এক মার্কিন নারী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2020, 12:22 PM
Updated : 13 March 2020, 04:38 AM

আতঙ্কিত হবেন না; যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের নিয়ে চিন্তা করুন, অসুস্থ হয়েছেন মনে হলে ঘরে থাকুন- নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এক বার্তা সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন সিয়াটলের বাসিন্দা এলিজাবেথ স্নেইডার।

ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এরই মধ্যে শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুধবার ভাইরাসটির সংক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রেও এরই মধ্যে কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হাজারেরও বেশি লোকের সন্ধান পাওয়া গেছে। দেশটিতে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৭-এ। এর মধ্যে ওয়াশিংটন স্টেটেই কভিড-১৯ এ মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। অঙ্গরাজ্যটির সবচেয়ে বড় শহর সিয়াটলেই স্নেইডারের বাস।

৩৭ বছর বয়সী এ নারী জীব প্রকৌশলে পিএইচডি ডিগ্রিধারী। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, মানুষকে ‘আশা দিতেই’ তিনি তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে আগ্রহী হয়েছেন।

স্নেইডার জানান, তার সংক্রমণের তীব্রতা ছিল তুলনামূলক কম, যে কারণে ঘরে বিশ্রাম নিয়েই তিনি সুস্থ হতে পেরেছেন।

“তারপরও এটি একেবারেই অপ্রচারিত হওয়ার মতো বিষয় নয়। কেননা, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ অনেকের অবস্থাও এমন। এর অর্থ হচ্ছে, আমাদেরকে ঘরে থাকার ব্যাপারে, অন্যদের থেকে আলাদা থাকর বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে,” বলেছেন তিনি। 

৩৭ বছর বয়সী এ নারী জানান, একটি পার্টিতে অংশ নেয়ার তিনদিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি শরীরে নিউমোনিয়া সদৃশ উপসর্গের টের পান তিনি।

“ঘুম থেকে জেগে উঠে ক্লান্ত বোধ করি। জেগে উঠে কাজে যাওয়ার আগে এরকম অনুভূতি প্রায়ই হয়, কেননা আগের সপ্তাহেও আমি খুবই ব্যস্ত ছিলাম,” বুধবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন স্নেইডার।

দুপুর থেকে তার মাথাব্যথা শুরু হয়, সঙ্গে দেখা দেয় জ্বর ও শারিরীক যন্ত্রণা। জীবপ্রকৌশল কোম্পানির বিপণন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা স্নেইডার সঙ্গে সঙ্গেই অফিস থেকে বাসায় চলে আসেন।

খানিকক্ষণ ঘুমানোর পরই তার জ্বর আরও বেড়ে যায়; সে রাতে তার দেহের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উঠে গিয়েছিল।

“অনিয়ন্ত্রিত কাঁপুনি শুরু হয়; ঠাণ্ডা লাগায় এবং ঝিমঝিম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পর আমি খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি,” বলেন তিনি।

তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ঠাণ্ডার ওষুধ খেয়ে নেন এবং জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে পারবে এমন এক বন্ধুকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন।

সৌভাগ্যক্রমে পরের কয়েকদিনেই তার জ্বর কমে যায়।

স্নেইডার জানান, জানুয়ারির শেষদিকে ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়ার পর থেকেই তিনি করোনাভাইরাস সম্বন্ধে খবরাখবর নিচ্ছিলেন।

উত্তরপশ্চিমের এ অঙ্গরাজ্য থেকেই পরে ভাইরাসটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

ওয়াশিংটনে এখন পর্যন্ত ২৬০ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে; মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দুই ডজন।

স্নেইডার জানান, জ্বর আর মাথাব্যথা হলেও কাশি কিংবা শ্বাসজনিত সমস্যার মতো সাধারণ উপসর্গ না থাকায় নিজেকে কভিড-১৯ এ আক্রান্ত বলে মনে করেননি তিনি।

“আমি ভেবেছি, যেহেতু কাশি বা নিঃশ্বাসে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না, সুতরাং আমারটা করোনাভাইরাস নয়,” বলেছেন তিনি।

ঠাণ্ডা লাগলেও ব্যাপারটাকে সাধারণ হাঁচি-কাশি বলেই মনে করেছিলেন। ভেবেছিলেন, চিকিৎসকের কাছে গেলেও তাকে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নিতে এবং বেশি করে তরল খাবার খেতেই বলা হবে।

কয়েকদিন পর স্নেইডার এক বন্ধুর ফেইসবুক পোস্ট থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তিনি যে পার্টিতে গিয়েছিলেন সেখানকার কয়েকজনেরও তার মতোই জ্বর ও মাথাব্যথা হয়েছিল জানতে পেরে নিজের অসুস্থতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন।

পার্টিতে যাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়া কয়েকজন পরে চিকিৎসকের কাছে গেলেও তাদের দেহে নিউমোনিয়া বা ফ্লু ধরা পড়েনি। কাশি কিংবা শ্বাসজনিত সমস্যা না থাকায় তাদের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্তে কোনো পরীক্ষানিরীক্ষা হয়নি বলে এনডিটিভির ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

চিকিৎসকের কাছে গেলে যে তার দেহেও ফ্লু ধরা পড়বে না, এমনটা বুঝতে পেরে স্নেইডার পরে সিয়াটল ফ্লু সেন্টারের একটি গবেষণা কার্যক্রমে নিজেকে যুক্ত করেন।

গবেষণায় নিযুক্ত দলটি স্নেইডারকে সর্দি পরীক্ষার একটি সরঞ্জাম পাঠায়। নির্দেশনা অনুযায়ী সর্দি পাঠানোর পর কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়।

“শেষ পর্যন্ত ৭ মার্চ ওই গবেষক দলের এক সমন্বয়ক আমাকে ফোন করে জানান যে আমি কভিড-১৯ এ আক্রান্ত। আমি খানিকটা বিস্মিত হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম এটা চমৎকার কিছু হবে। আমি হাসছিলাম, কিন্তু মাকে বলার পরপরই তিনি কান্নাকাটি শুরু করেন।

“সত্যি কথা বলতে, বেশি অসুস্থ থাকলে হয়তো এমনটা মনে করতাম না আমি। বৈজ্ঞানিক কৌতুহল  এবং শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পেরে আমার কাছে এমনটা মনে হয়েছিল,” বলেন স্নেইডার।

নিজের আক্রান্ত হওয়ার খবর যতদিনে জেনেছিলেন, ততদিনে তার উপসর্গগুলো প্রায় বিলীন হয়ে গিয়েছিল।

উপসর্গগুলো ফের দেখা দিলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ স্নেইডারকে ৭দিন আর উপসর্গ না থাকলে ৭২ ঘণ্টা ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল।

কয়েকদিনের ভেতর স্নেইডার আরও সুস্থ হয়ে উঠেন। বুধবার সাক্ষাৎকার দেয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই তিনি বাইরে বের হতে শুরু করেন। অবশ্য এখনও তিনি ভিড় এড়িয়ে চলছেন; ঘরে থেকেই সারছেন অফিসের কাজ।

এনডিটিভি বলছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের দেহেই সংক্রমণের মাত্রা স্নেইডারের মতোই হালকা।

তাদের আশ্বস্ত করতেই নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ, বলছেন ৩৭ বছর বয়সী এ নারী।

“আসল কথা হচ্ছে- আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। যদি আপনার সন্দেহ হয়, তাহলে অবশ্যই পরীক্ষা করান। যদি উপসর্গগুলো জীবন সংহারি না হয়, তাহলে ঘরেই থাকুন। ওষুধ খান, প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন, বিশ্রাম নিন এবং যেসব অনুষ্ঠান দেখতে চান তা দেখুন,” বলেন স্নেইডার।