টয়লেট-রসুই সাফে একই কর্মী, যুক্তরাজ্যে প্রশ্নের মুখে নানদুজ

যুক্তরাজ্যে নানদুজের কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, হেঁশেলের কাজের পাশাপাশি তাদের রেস্তোরাঁ পরিষ্কারের কাজও করতে হয়, কিন্তু সেজন্য বাড়তি কোনো পারিশ্রমিক তাদের দেওয়া হয় না।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Feb 2020, 04:13 AM
Updated : 29 Feb 2020, 04:13 AM

আন্তর্জাতিক এই রেস্তোরাঁ চেইনের সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের বরাত দিয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডিউটি শেষ করার পরও তাদের দিয়ে চুলা আর টয়লেট পরিষ্কার করানো হয়। 

রান্নাঘর আর টয়লেট পরিষ্কার করার কাজে একই মপ ব্যবহার করা হয় বলে দাবি করেছেন তাদের একজন। আরেকজন বলেছেন, মুরগি কাটার সময় তারা হাতে গ্লাভসও পরেন না।

অবশ্য নানদুজ দাবি করেছে, কর্মীদের প্রাপ্য ঠিকঠাক বুঝিয়ে দেওয়ার নীতিতে তারা অটল এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে তারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করে।

বিবিসি লিখেছে, নানদুজের অধিকাংশ শাখায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নির্দিষ্ট কোনো কর্মী নেই। আর নানদুজ দাবি করেছে, বিশ্বজুড়ে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় এটাই প্রচলিত নিয়ম।

যুক্তরাজ্যজুড়ে চারশ’র বেশি শাখা রয়েছে নানদুজের। তারা বলেছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রেস্তোরাঁ পরিচালনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর স্বাস্থ্যসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে তারা বদ্ধপরিকর। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নানদুজের এই পরিচ্ছন্নতা ও মজুরি নীতি পরিবর্তনের দাবিতে একটি অনলাইন পিটিশনে সই করেছে কয়েক হাজার মানুষ।

সেখানে নানদুজের কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের ম্যানেজাররা বাড়তি সময় খাটালেও তাদের ডিউটি শেষ করার সময় হিসেবে আরও আগের সময় রেকর্ড করে রাখেন।

এরকম পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলার কথা জানিয়েছে বিবিসি, যারা নিজেদের পরিচয় গোপান রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।

নানদুজ দিয়েই তাদের বেশিরভাগের কর্মজীবনের হাতেখড়ি। গত এক বছরে তারা সবাই মিলে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে নানদুজের সাতটি শাখায় তারা কাজ করেছেন।

নানদুজের কাজের পরিবেশ নিয়ে তারা মোটামুটি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একজন বলেছেন, রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ তাদের সপ্তাহে ৪৫ পাউন্ডের খাবার দিত।

তবে সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে সবাই একবাক্যে কাজের শিফট নিয়ে অব্যবস্থাপনা এবং পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে কিছু বাজে নজিরের কথা তুলে ধরেছেন বিবিসির কাছে।

এর মধ্যে ২২ বছর বয়সী একজন বলেছেন, “আমি সাধারণত শুক্রবারে আমার পারিশ্রমিক পেতাম; আর সেটা হত আমার প্রত্যাশার চেয়ে কম। কারণ আমার ম্যানেজার কখনোই আমার কাজের সঠিক সময় সিসটেমে সংরক্ষণ করতেন না।” 

১৯ বছরের একজন তরুণী বলেছেন, প্রথম প্রথম তিনি ভাবতেন, এটাই বোধহয় নিয়ম। যে বাড়তি একঘণ্টা তাদের কাজ করানো হচ্ছে, সেজন্য হয়ত আলাদা পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।

“আমি আমার সহকর্মীদের জিজ্ঞেস করতাম, আমাদের টাকা ঠিকঠাক দেওয়া হচ্ছে কি না? তখন তারা আমাকে বললো, বাড়তি সময়ের টাকা তারা এমনিতে দেবে না। আমাদের সেজন্য জোর করে চাইতে হবে। কিন্তু তারা সেটা সব সময় করত না।”

নানদুজের পরিচ্ছন্নতা চর্চার দুরবস্থার কথা তুলে বিবিসির কাছে বলেন সুজান, যিনি বছর খানেক কাজ করেছেন ম্যানচেস্টার সিটি সেন্টারে নানদুজের আউটলেটে।

শিল্প ক্ষেত্রের মানদণ্ড অনুসরণ করে পরিচ্ছতার কাজে নানদুজে দুই রঙের মপ ব্যবহার করার কথা বলেছেন এদের মধ্যে কেউ কেউ। যেমন সবুজ রঙের মপ রান্নাঘর ধোয়ামোছার কাজে, আর লাল রঙের মপ টয়লেট পরিষ্কার করার কাজে।  

কিন্তু  ম্যানচেস্টার সিটি সেন্টারে নানদুজে ১২ বছরে কাজ করেও এরকম আলাদা আলাদা রঙের মপ কদাচিৎ দেখেছেন বলে জানান সুজান।

বিবিসিকে তিনি বলেন, “রান্নাঘরের কর্মীদের আসলে বন্ধ করার তাড়া থাকে। কোনো রঙের মপ হাতে নেবে এটা বাছাই করার মত সময় থাকে না তাদের।

“যে কোনো বালতি আর যে কোনো মপ ব্যবহার করা যেত। এটা একটা সমস্যাই ছিল বটে; কারণ রান্নাঘরে যত বর্জ্য হত, তার সবকিছুই টয়লেটে ফেলা হত।”

জেনির অভিযোগ ছিল, তাকে হেঁসেলে মুরগি রান্নায় হাত লাগাতে হত; আবার টয়লেট সাফ করার কাজও করতে হত। এক সপ্তাহ কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ করতে হয়েছিল তাকে।

“এর অর্থ চুল ঢেকে রাখার নেট আর হাতের গ্লাভস ছাড়াই মুরগি রান্নার কাজ করতে হয়েছিল। আবার টয়লেটও পরিস্কার করেছি, যখন আমাদের কাছে কোনো গ্লাভস ছিল ন।”

যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০ হাজারের মতো কর্মী কাজ করছে নানদুজের বিভিন্ন আউটলেটে। এসব অভিযোগে তাদের অনেকেই সাড়া দিচ্ছেন গ্লাসডোর ডটকম ওয়েবসাইটে।

পারিশ্রমিক নিয়ে কর্মীদের এসব অভিযোগ নিয়ে আইনজীবী কেটি মাহানি বলেন, যদি ব্যবস্থাপক কর্মীদের কর্মঘণ্টা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, তবে আস্থা ভঙ্গ করার দায়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা যাবে।

“এছাড়া কর্মক্ষেত্রের নিয়ম অনুসারে যতঘণ্টা কাজ হয়েছে তত ঘণ্টার পারিশ্রমিক না দেওয়া হলে সেই হিসাব তুলে ধরে পারি্শ্রমিক দাবি করতে পারেন কর্মীরা।”

বিবিসি বলছে, পিটিশনে মানুষের অভিযোগ সামলাতে না পেরে এরমধ্যে কর্মীদের কর্মঘণ্টার নীতি আবার অনুসরণ শুরু করেছে নানদুজ। 

ওর্গানাইজ ওয়েবসাইটে ৫৫১ জন নানদুজের সাবেক কর্মীর শুরু করা পিটিশনের সমর্থনে সই পড়েছে তিন হাজার ৭০০টি।  

তবে কর্মীদের ঠিকমতো পারিশ্রমিক পরিশোধে নানদুজের নীতি বেশ শক্ত বলেই বিবিসিকে জানিয়েছে এই চেইন রেস্তোরাঁর একজন মুখপাত্র।

তিনি বলেন, “আমাদের সব রেস্তোরাঁতেই কর্মীদের সকল কাজের পারিশ্রমিক শোধ করার নিয়ম রয়েছে; যা আমরা গুরুত্বের সাথে করে থাকি। তবে যদি কারও দ্বারা কোনো ভুল হয়ে যায়, সেটা দ্রুতই সংশোধন করা হয়।”

রেস্তোরাঁর পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রেও নিয়ম মেনে চলার কথা বলছে নানদুজ কর্তৃপক্ষ।

তারা বলছে, কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার শর্তেই পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা আছে । স্বাস্থ্য সুরক্ষা আর পরিচ্ছন্নতায় মান ধরে রাখার ক্ষেত্রে তারা খুবই সতর্ক। যে কোনো কর্মীকে যদি সাফ-সাফাইয়ের কাজে লাগানো হয়, তার আগে তাকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

নানদুজের মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, “যুক্তরাজ্যে আমাদের ৯৯ শতাংশ রেস্তোরাঁই পাঁচের মধ্যে চার রেটিং পেয়েছে খাবারের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার নিয়মের কারণে।”