কেবল শুক্রবারই ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার ছয়টি দেশে প্রথমবারের মত এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৪ হাজার মনুষকে আক্রান্ত করা নভেল করোনাভাইরাস মৃত্যু ঘটিয়েছে ২ হাজার ৮৭২ জনের।
রয়টার্স জানিয়েছে, এই আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারগুলো ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার পর সবচেয়ে বাজে সপ্তাহটি পার করেছে। এই এক সপ্তাহে পুঁজিবাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেছে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার।
ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে চীন নিজের দেশে এ ভাইরাসের বিস্তার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসায় ব্যবসায়ীরা আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছিলেন।
তারা ভেবেছিলেন, নভেল করোনাভাইরাসের বিপদ আর খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও দ্রুত স্বাভাবিক চেহারায় ফিরে আসতে পারবে।
কিন্তু তাদের সেই আশা ভেস্তে যেতে বসেছে গত কয়েক দিনে এ ভাইরাস অত্যন্ত দ্রুত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস গেব্রিয়েসাস শুক্রবার জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা এ বিপদকে খাটো করে দেখতে রাজি নই। এ কারণেই আমরা বলছি, এ ভাইরাসের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। আমরা সতর্কতার মাত্রা ‘উচ্চ’ থেকে ‘সর্বোচ্চ’ ধাপে নিয়ে গেছি।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ ইমার্জেন্সি বিভাগের পরিচালক ডা. মাইক রায়ান বলেন, কোনো রোগের ঝুঁকি দেখলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যত ধরনের সতর্কতা জারি করতে পারে, এবারের মাত্রা তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চীনের তিনটি বড় এয়ারলাইন্স আবার কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়ে কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করেছে। করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া সাংহাই ফ্যাশন শো এখন অনলাইনে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কিন্তু চীনের বাইরে পরিস্থিতি ক্রমশ নাজুক হয়ে উঠছে। অটোমোবাইল ব্যবসার অন্যতম বড় বার্ষিক আয়োজন জেনিভা কার শো স্থগিত করেছে সুইজারল্যান্ড।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালির অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। সেখানে ৬৫০ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে ২ হাজার ৩৩৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে, মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।
তবে চীনের বাইরে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইরানে। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ৩৮৮ জন, প্রাণ গেছে ৩৪ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে ইরানের নারী ও পরিবার বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে এবতেকারও আছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে।
বিবিসি শুক্রবার রাতে হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে ইরানে অন্তত ২১০ জনের মৃত্যুর খবর দিলেও দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তা অস্বীকার করেছেন।
এর বাইরে জাপানে ১১ জন, হংকং ও ফ্রান্সে দুজন করে এবং ফিলিপিন্স ও তাইওয়ানে একজন করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন মোট আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশে দাঁড়িয়েছে।
একজন চীনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সেরে ওঠা রোগীদের কারও কারও মধ্যে আবার নতুন করে উপসর্গ দেখা গেছে। তার মানে হল, এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা যতটা কঠিন মনে হয়েছিল, আসলে তা আরও বেশি কঠিন হবে।
এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিনিয়োগকারিরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। বরং তারা বিনিয়োগ করা টাকা তুলে নিতে চাইছেন। ফলে টানা পাঁচ দিন ধরে টানা দরপতনের ধারায় রয়েছে শেয়ারবাজার।
চীনের বাইরে গোটা বিশ্বে এ সংক্রমণ যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।