সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি: ঝুঁকিতে মিয়ানমারের কয়েকশ’ গ্রাম

সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমাগত উচ্চতাবৃদ্ধির কারণে মিয়ানমারের কয়েকশ’ গ্রাম আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2020, 11:41 AM
Updated : 27 Feb 2020, 11:42 AM

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এ বিপদ দেশটির সমুদ্র তীরবর্তী প্রায় ২৫ লাখ মানুষের জীবনযাপনকে প্রতিবন্ধকতার মুখে ফেলতে যাচ্ছে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

টিকে থাকতে এসব এলাকার মানুষদের পেশা বদলাতে হচ্ছে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে শিক্ষার্থীদের পাড়ি দিতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল পথ।

তিন বছর আগে, দক্ষিণপূর্ব উপকূলের তা দার উ‘র দেড় হাজার বাসিন্দা মোত্তামা উপসাগর থেকে আছড়ে পড়া ঢেউয়ে পাড় ভাঙতে থাকা সিতাউং নদীকে তাদের গ্রামের আরও কাছে চলে আসতে দেখেছিল।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে গ্রামবাসীদের হাতে কেবল দুটি পথই খোলা ছিল, হয় ভেসে যাওয়া, না হয় ভিটেমাটি ছেড়ে দূরে সরে যাওয়া।

ভেঙে পড়া কাঠের বাড়িঘর, দশকের পর দশক ধরে চাষ করা উর্বর কৃষিজমি ছেড়ে শেষ পর্যন্ত তারা কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে আস্তানা গাড়ে।

“এখন যেখানে আমরা পানি দেখছি, সেখানে ছিল কৃষিজমি। সেগুলো অনেক বড় ছিল, হাঁটা পথেই তিন ঘণ্টা লাগতো। সমুদ্রে আমরা আমাদের সব কৃষিজমি হারিয়েছি,” বলেন কৃষক টিন্ট খাইং।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মিয়ানমারের যে কয়েকশ’ গ্রাম ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছে তা দার উ’ তার একটি। আবহাওয়ার ‍রূদ্ররোষ আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি এ গ্রামগুলোর নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঝুঁকি দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে।

পরিবেশবিদরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সুনির্দিষ্টভাবেই মিয়ানমারকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করে আসছেন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত, ২০ বছরে, চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তিন শীর্ষ দেশের মধ্যেও দেশটির অবস্থানের কথা জানিয়েছে পরিবেশ বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক জার্মানওয়াচের গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক তালিকা।

২০২০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৩ সেন্টিমিটারের মতো বাড়বে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা মিয়ানমারের উপকূলবর্তী ২৫ লাখ বাসিন্দাকে ভয়াবহ বিপদের ঝুঁকিতে ফেলবে বলে মিয়ানমারের ন্যাচারাল ওয়াটার রিসোর্সেস কমিটির সদস্য মিন্ট থেইন জানিয়েছেন।

“বর্ষাকালে বন্যা মারাত্মক আকার ধারণ করবে; জলোচ্ছ্বাস জমিতে নোনা পানি টেনে আনবে,” বলেছেন তিনি।

পানি গত চার বছরেই ১০টির মতো গ্রাম গিলে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন উদ্বাস্তু গ্রামবাসীদের পুনর্বাসনে কাজ করা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক গালফ অব মোত্তামা প্রজেক্টের প্রধান প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা জস ভ্যান ডার জান্ডেন।

ভিটেমাটি সমুদ্রে হারানোর পর তা দার উ’র বাসিন্দারা বদ্বীপটির বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে; গ্রামটির বেশিরভাগ বাসিন্দাই প্রধানত ধানচাষী ছিলেন।

নোনাপানি জমি নষ্ট করে দেওয়ায় বাধ্য হয়েই তাদের অন্য পেশা বেছে নিতে হয়েছে; যেখানে তাদের সাফল্যের হার খুবই সামান্য।

স্কুলে যেতে ২০০র মতো শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন কয়েকঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে হয়। শহরের প্রাণকেন্দ্রের কাছে তাদের একসময়কার স্কুলটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

“যদি এভাবেই জমি নিশ্চিহ্ন হতে থাকে তাহলে এ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎও অন্ধকার হয়ে পড়বে,” বলেছেন অস্থায়ী একটি স্কুলের একমাত্র শিক্ষক মিয়ো মিন থেইন।

স্কুলে আসা ৪ থেকে ১৪ বছর বয়সী ২৬ শিক্ষার্থীকে একা পড়ানোর কষ্টের কথাও জানান তিনি।

মিয়ানমারের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিভাগ এরই মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধিজনিত সমস্যা মোকাবেলায় পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেছে। তবে বিভাগটি উদ্বাস্তু হয়ে পড়াদের পুনর্বাসনে সম্পৃক্ত নয় বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন এর উপপরিচালক থিন থুজার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, নদীর পাড় ক্ষয়ে উদ্বাস্তু হওয়াদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি নেই তাদের। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সরকারের কর্মকর্তাদের মন্তব্য জানতে চাইলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

নিম্নাঞ্চলীয় গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের শিগগিরই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৩ ফুট উঁচু এমন এলাকায় সরিয়ে নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের ন্যাচারাল ওয়াটার রিসোর্সেস কমিটির সদস্য মিন্ট থেইন।

“এটা বেশ ব্যয়বহুল হবে, কিন্তু করতে হবে। পরিবেশ বদলাচ্ছে, সুতরাং মানুষকেও খাপ খাইয়ে নেওয়া শিখতে হবে,” বলেছেন তিনি।