মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের মৃত্যু

মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2020, 11:22 AM
Updated : 25 Feb 2020, 02:00 PM

মঙ্গলবার মিশরের রাষ্ট্রীয় সংবাদে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে। তিনি একটি সামরিক হাসপাতালে মারা গেছেন।

জানুয়ারির শেষ দিকে মুবারকের অস্ত্রোপচার হয়।এরপর তাকে তার নাতির সঙ্গে ছবিতে দেখা গিয়েছিল।

তবে গত শনিবার মুবারকের ছেলে আলা জানান, তাকে ইনটেনসিভ কেয়ারে রাখা হয়েছে। এরপরই মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় টিভি তার মৃত্যুর খবর জানাল।

মুবারক মিশরের অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী শাসক ছিলেন।তিন দশক শাসনক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে টানা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর মিশরীয় সামরিক বাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

২০১১ সালের বিপ্লবের সময় বিক্ষোভকারীদেরকে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মুবারককে কারাবন্দি করা হয়।

মুবারকের বিরুদ্ধে তার শাসনামলের বিরোধিতা করায় দুই শতাধিক মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল।পরে ২০১৭ সালের মার্চে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

মিশরে যুদ্ধ ও শান্তির রাষ্ট্রনায়ক মুবারক:

হোসনি মুবারকের জন্ম ১৯২৮ সালের ৪ই মে মিশরের উত্তরাঞ্চলে কাফর-আল মেসেলহা -তে। কৈশরেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন বিমান বাহিনীতে।

কিন্তু একজন যোদ্ধা পাইলট হয়েও তিনি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

মুবারকের নেতৃত্বেই মিশর ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি চুক্তি করতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে।

আবার একইসঙ্গে মিশরের বিমান বাহিনীর কমান্ডার এবং উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে মুবারক তার ভূমিকা দিয়ে জাতীয় বীরের সম্মান লাভ করেছিলেন।

রাজনীতিতে প্রবেশের আগে মুবারক মিশরীয় বিমান বাহিনীর একজন কমান্ডার হিসেবে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি মিশরের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।

১৯৮১ সালের ৬ই অক্টোবরে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যার পর মুবারক মিশরের প্রেসিডেন্ট হন।

মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় মুবারকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য পরবর্তী আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে তার সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছিল এবং তিনি শত শত কোটি ডলারের সাহায্য পেয়েছিলেন।

তবে মুবারকের শাসনামলে মিশর বিপুল পরিমাণ সামরিক সাহায্য পাওয়ার পরও বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং দুর্নীতি বাড়তে থাকে।

বিপ্লব:

আরব বসন্তের প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে মিশরে মুবারকের শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা দেয়। ওই সময় একই ধরনের বিক্ষোভে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। এর ১৮ দিন পর মুবারকও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ওপর দমনাভিযান চালানোর জন্য তিনি সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন। আর জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে লড়ে যেতে হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে।

২০১২ সালের জুনে মিশরে ইসলামিক ব্রাদারহুডের প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসি প্রেসিডেন্ট পদে জয়লাভ করার আগেই বিক্ষোভকারী হত্যা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য মুবারককে  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

তাকে পাঠানো হয়েছিল কায়রোর তোরা জেলে। তবে সময় সময় অসুস্থতার কারণে মুবারককে কাছাকাছি মাদি সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হত।

কারাদণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে মুবারক আপিল করায় উচ্চ আদালত তা পুনর্বিচারের নির্দেশ দিয়েছিল।এর দুই বছর পর ২০১৪ সালে মামলাটি খারিজ করে আদালত। এরপরই ২০১৭ সালে আপিল আদালত তাকে হত্যাকাণ্ডের দায় থেকেও অব্যাহতি দেয়।

মুবারকের তিন দশকের শাসনামলে মিশর ছিল অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল দেশ। তবে এ সময়ে অনেকেই বিনাবিচারে বন্দি হয়েছে এবং নির্যাতিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিকভাবে মুবারক আঞ্চলিক সংঘাত নিরসনের লক্ষ্য নিয়ে বৈদেশিক নীতি পরিচালনা করেছেন। কিন্তু দেশে তিনি লৌহমুষ্টিতে শাসন চালিয়ে গিয়েছিলেন।