জার্মানিতে কার্নিভালের মিছিলে চলন্ত গাড়ি, শিশুসহ আহত ৩০

জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ফয়েকমার্সেনে কার্নিভালের মিছিলের মধ্যে চলন্ত গাড়ি ঢুকে পড়লে তাতে চাপা পড়ে শিশুসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2020, 07:34 AM
Updated : 25 Feb 2020, 07:34 AM

সোমবারের এ ঘটনায় ২৯ বছর বয়সী এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জার্মানির সরকারি আইনজীবী ও পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

হামলার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়নি। সম্ভাব্য সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

“এটি একটি ভয়াবহ দিন, ভয়াবহ ঘটনা,” বলেছেন পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ হেসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার বিউট। বার্লিনের ৪২০ কিলোমিটার পশ্চিমের ছোট শহর ফয়েকমার্সেন এ প্রদেশেরই অন্তর্গত।

আহতদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই শিশু, জানিয়েছেন পিটার।

“ভিড়ের ওপর গাড়ি তুলে দেয়ার ঘটনাটি উদ্দেশ্যমূলকও হতে পারে,” ঘটনাস্থল থেকে বলেছেন পুলিশের মুখপাত্র হেইনিং হিন।

এসময় তার আশপাশজুড়ে কার্নিভালের জঞ্জাল ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় পড়েছিল। ঘটনাস্থলে পুলিশকে একটি রূপালি রংয়ের মার্সিডিজ-বেঞ্জ গাড়ি ঘিরে রাখতে দেখা গেছে। ওই গাড়িটিই ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আহতদের মধ্যে আট থেকে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানান হিন।

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে, গুরুতর আহতদের মধ্যে কয়েকটি শিশুও আছে,” বলেছেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জার্মান ওয়েবসাইট এইচএনএ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি শিশুদের লক্ষ্য করেই সবেগে ভিড়ের ওপর গাড়ি তুলে দিয়েছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলের দিকে পুলিশের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ছুটে যেতে দেখা যায়।

জার্মান সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, চালক ইচ্ছাকৃতভাবেই পুলিশের দেয়া প্লাস্টিকের ঘের ছিঁড়ে প্যারেড্ এলাকার ভেতর গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েন; ভিড়ের ওপর তুলে দেয়ার পর গাড়িটি প্রায় ৩০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করার পর থামে বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যম হেসেনসচউকে জানিয়েছেন।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ আরও এক ব্যক্তিকে আটক করেছে, স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এমনটি জানালেও এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি পুলিশ ও তদন্তকারী সরকারি কৌঁসুলিরা।

ঘটনার পরপরই পুলিশ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে হেসের সব কার্নিভালের মিছিল বন্ধ করে দেয়; জার্মানির অন্য কোথাও এ ধরনের ‘বিপদের শঙ্কার’ কথা জানা যায়নি বলেও আশ্বস্ত করেছে তারা।

পশ্চিম জার্মানির বিভিন্ন শহর বিশেষ করে রাইনল্যান্ডের কোলন ও ডুসেলডর্ফের মতো শহরগুলোতে কার্নিভাল বেশ জনপ্রিয়; সাধারণত ‘গোলাপি সোমবার’ এ কার্নিভালগুলো পূর্ণতা পায়। এদিন লাখ লাখ মানুষ ব্যাঙ্গাত্মক ও হাস্যরসাত্মক চরিত্রে নিজেকে সাজিয়ে রাস্তায় নামে।

হানাউ শহরের দুটি শিশা বারে এক উগ্র ডানপন্থির গুলিতে ৯ জন নিহতের এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ফয়েকমার্সেনে এ হামলার ঘটনা ঘটল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ ওই ‘বর্ণবাদী’ হামলার পর সন্দেহভাজন উগ্র ডানপন্থি নিজের মা’কে এবং পরে নিজেকেও হত্যা করে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট সংশ্লিষ্ট তিউনিসিয়ার এক নাগরিক বার্লিনের একটি ক্রিসমাস মার্কেটে ভিড়ের ওপর গাড়ি তুলে দিয়ে ১২ জনকে হত্যা করেছিলেন। জার্মানি থেকে পালিয়ে ইতালি যাওয়ার পর সেখানে পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছিল।

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল সোমবারের ঘটনায় আহত এবং তাদের আত্মীয়-পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সন্দেহভাজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার ও তড়িত পদক্ষেপ নেওয়ায় পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মীদের ধন্যবাদও দিয়েছেন তিনি।