করোনাভাইরাসে মৃত্যু পনেরশ ছাড়ালো

আরও ১৪৩ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চীনে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২৩ জনে, প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে মিশরেও।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2020, 05:21 AM
Updated : 15 Feb 2020, 05:28 AM

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখণ্ডে শুক্রবার আরও ২ হাজার ৬৪১ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৯ জনে। আর অন্তত ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

মিশরে প্রথমবারের মত একজন বিদেশির শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাকে আগে থেকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। আফ্রিকায় নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম ঘটনা এটা।    

চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে এ পর্যন্ত হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে তিনজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তাতে বিশ্বে এ ভাইরাতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৫২৬ জনে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রীতিমত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে চীন, কিন্তু খব বেশি সাফল্য তাতে আসছে না।

২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর শি জিংপিনকেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে।

রাজধানী বেইজিংয়ের বাসিন্দাদের মধ্যে যারা ছুটি শেষে নগরে ফিরছেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিন চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন ধরনের এ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ পর্যন্তক মৃত্যু ও আক্রান্তের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে ওই হুবেই প্রদেশে।

শুক্রবার চীনে যে ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৩৯ জনেই ছিলেন হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ১০৭ জনই আবার উহানের। 

এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন ও চীনের বাইরে বেশ কিছু ক্রীড়া আয়োজন ও বাণিজ্য সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। জাহাজ ও বিমান চলাচলে কড়াকড়িতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পণ্য্ পরিবহন।

‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অতিপ্রতিক্রিয়া’ দেখানোর অভিযোগ এনেছে চীন।    

দেশটির পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে। সংক্রমণ হঠাৎ হয়েছে এবং চীনসহ পুরো বিশ্বই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে।

“ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের সর্বাত্নক ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমার মতে, আর কারও পক্ষে এতটা সম্ভব হত না, কিন্তু চীন পেরেছে।”

ভাইরাস প্রতিরোধের উছিলায় বাণিজ্য, ভ্রমণ এবং পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত করবে এমন পদক্ষেপ না নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

আক্রান্ত রোগীর ১ শতাংশেরও কম মানুষ যে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরের, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওয়াং ই বলেন, “শুরু থেকেই আমরা এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলে অত্যন্ত খোলামেলা ও স্বচ্ছতার সাথে তথ্য সরবরাহ করে আসছি।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সর্বপ্রথম উহানের চক্ষু বিশেষজ্ঞ লি ওয়েনল্যাং সতর্ক করেছিলেন। গতবছরের ৩০ ডিসেম্বর এক বার্তায় তার সহকর্মীদের বলেছিলেন, নতুন এ করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। আর সেজন্য চীনা কর্তৃপক্ষ তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল মুচলেকা আদায় করে।

ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই ওই চীনা চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পরপরই কড়া সমালোচনার শুরু হয় চীনকে নিয়ে। 

এ প্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে হুবেই ও অন্যান্য প্রদেশের কয়েকশ উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে চীন। অনেককে সতর্ক করা হয়েছে এবং কারো কারো বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

আরও পড়ুন