বিদেশে জন্ম নেওয়া আদিবাসীদেরও ‘অস্ট্রেলিয়া থেকে তাড়ানো যাবে না’

অস্ট্রেলিয়ার আইনে আদিবাসীদের বিশেষ মর্যাদা থাকায় তাদের কেউ নাগরিক না হলেও তাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার হাই কোর্ট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2020, 11:02 AM
Updated : 11 Feb 2020, 11:02 AM

বিবিসি জানিয়েছে, আদিবাসীদের অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদার এ রায়কে দেশটিতে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের ফলে আইনে ‘ব্যক্তির পরিচয়ের ক্ষেত্রে নতুন এক ক্যাটাগরির’ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার।

“ব্যক্তির পরিচয়ের ক্ষেত্রে নতুন একটি ক্যাটাগরি সৃষ্টি হল। যারা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী নাগরিকও নন, অনাগরিকও নন,” বলেছেন দেশটির ভারপ্রাপ্ত অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী অ্যালান টুজ।

শিশু বয়সে নিউ জিল্যান্ড ও পাপুয়া নিউ গিনি থেকে আসা ব্রেন্ডন থমাস ও ডেনিয়েল লাভের করা এক মামলায় অস্ট্রেলিয়ার হাই কোর্ট অন্য দেশে জন্ম নেওয়া আদিবাসীদেরও ‘বহিরাগত’ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বলে এ রায় দেয়।

থমাস ও লাভ দুজনই আদিবাসী ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী। তাদের বাবা ও মায়ের মধ্যে একজন করে অস্ট্রেলীয়। দুই ব্যক্তির সন্তানরাও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।

দুজনেরই অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি থাকলেও সহিংস অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তাদের সেই অনুমতি কেড়ে নেওয়া হয়।

অস্ট্রেলিয়ার আইনে বিদেশি কিংবা বহিরাগত কারও এক বছরের বেশি সাজা হলে কিংবা জেল খাটলে তাদের বহিষ্কার করার বিধান আছে।

২০১৮ সালে থমাস ও লাভের ভিসা বাতিল করা হয়; দুজনই ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে আদালতে যান।

মামলার শুরুতেই সর্বোচ্চ আদালত বিদেশে জন্ম নেওয়া এই দুই ব্যক্তিকে ‘বহিরাগত’ বিবেচনা করা হবে কি না সে সংক্রান্ত রুল জারি করে।

থমাস ও লাভের আইনজীবীরা বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই দুই ব্যক্তির বংশ-পরম্পরার এমন যোগ আছে, যে কোনো অবস্থাতেই এদের ‘বহিরাগত’ বলা যাবে না।

চার বিচারকের তিনজন পরে আদিবাসী অস্ট্রেলীয়দের কোনো অবস্থাতেই ‘বিদেশি’ বলা যাবে না এমন সিদ্ধান্তেও উপনীত হন।

“আদিবাসী অস্ট্রেলীয়দের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও আত্মিক সংযোগ আছে; যা তাদের ঐতিহ্যবাহী আইন ও রীতিনীতির মধ্যমণি, এগুলো সাধারণ আইন দ্বারাও স্বীকৃত,” রায়ে এমনটাই বলা হয়েছে।

ওই যোগসূত্রের অস্তিত্বের কারণেই বর্তমান আইনে আদিবাসী অস্ট্রেলীয়দের ‘বহিরাগত’ হিসেবে বিবেচনার সুযোগ নেই, বলেন বিচারকরা।

হাই কোর্টের এ রায়ে অস্ট্রেলিয়ার মোট জনগোষ্ঠীর তুলনায় সামান্য সংখ্যক আদিবাসী উপকৃত হলেও এটি সমগ্র দেশে আদিবাসীদের আইনি স্বীকৃতির পথ সুগম করবে বলে ধারণা থমাস ও লাভের আইনজীবীদের। 

“এই মামলা নাগরিকত্ব নিয়ে ছিল না, ছিল কারা এখানে থাকার দাবিদার তা নিয়ে। রায়ের অর্থ এবং সত্যিকারের গুরুত্ব হচ্ছে- আদিবাসী জনগণ, যেখানেই তারা জন্মান না কেন, তাদের (অস্ট্রেলিয়া থেকে) তাড়ানো যাবে না,” বলেছেন আইনজীবী ক্লেয়ার গিবস।

রায়ের প্রভাব কি হবে, সরকার তা এখনো খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী অ্যালান টুজ।

হাই কোর্টের এ রায়ের ফলে ব্রেন্ডন থমাসের আটকাদেশ শেষ হবে এবং তাকে নিউ জিল্যান্ডে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না বলে তার আইনজীবীরা নিশ্চিত করেছেন। গুঙ্গারি জনগোষ্ঠী থেকে আসা থমাসের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় একই আদিবাসী গোষ্ঠীর সংযোগের স্বীকৃতি দিয়েছে আদালত।

তবে পাপুয়া নিউ গিনির কামিলেরোই জনগোষ্ঠী থেকে আসা লাভও একইরকম মর্যাদা পাবেন কি না, বিচারকরা তা নিয়ে একমত না হতে পারায় তার বহিষ্কারাদেশের অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।