নির্বিচার হত্যাকাণ্ড: ক্ষমা চাইলেন থাই সেনাপ্রধান

শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে উন্মত্ত হয়ে ওঠা এক সৈন্যের নির্বিচার গুলিতে ২৯ জনের প্রাণ যাওয়া ও ৫৭ জন আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী প্রধান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2020, 10:05 AM
Updated : 11 Feb 2020, 10:24 AM

মঙ্গলবার ৯০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে ওই সৈন্যের কৃতকর্মের সব দায় নিয়ে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

শনিবার থেকে শুরু করে রোববার সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত জাক্রাপান্থ থম্মা নামের সেনাবাহিনীর ওই সার্জেন্ট মেজরের ১৯ ঘণ্টা ধরে চালানো তাণ্ডবে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে পুরো থাইল্যান্ড।

সেনাপ্রধান জেনারেল্ আপিরাত কংসোমপোং বলেন, “আমি, সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে, ক্ষমা চাইছি আর সেনাবাহিনীর এক কর্মীর ঘটানো এ ঘটনা নিয়ে কতোটা দুঃখিত তা বলছি।

“যে মূহুর্তে অপরাধী ট্রিগার টেনে হত্যাকাণ্ড ঘটালো, সেই মূহুর্ত থেকে সে অপরাধী হলো আর সৈন্য থাকলো না।”

মাঝে মাঝে চোখের পানি মুছতে মুছতে আপিরাত জানান, সেনাবাহিনী সব ক্ষতিগ্রস্তদের এবং তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সহায়তা করবে।

ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে শনিবার সকাল থেকে হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিলেন ৩২ বছর বয়সী সার্জেন্ট মেজরের থম্মা। প্রথমে একটি বাড়িতে নিজের কমান্ডিং অফিসার ও তার শাশুড়িকে গুলি করে মারেন। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে নিজের সামরিক ঘাঁটিতে যান, সেখানে এক রক্ষীকে আহত করে আরও অ্যাসল্টা রাইফেল ও প্রচুর গুলি নিয়ে ফেরার পথে এক বৌদ্ধ মন্দিরে গুলিবর্ষণ করেন।

এরপর নাখম রাচসিমা শহরের কেন্দ্রস্থলে টার্মিনাল টোয়েন্টিওয়ান বিপনীবিতানে গিয়ে শপিংয়ে আসা লোকজনের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েন। এই বিপনীবিতানেই পরবর্তী ১২ ঘণ্টারও বেশি সময়ে ধরে অবস্থান করে মাঝে মাঝে গুলি ছুড়ে চারদিকে ঘিরে থাকা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখেন। পরদিন সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে থম্মা নিহত হন। 

জেনারেল আরিপাত জানান, সামরিক বাহিনী নিহত কমান্ডিং অফিসার কর্নেল অনন্তরথ ক্রাসে (৪৮) ও জমি নিয়ে ওই চুক্তি, যা অনন্তরথের শাশুড়ি আনং মিচানের (৬৩) মধ্যস্থতায় হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে, তদন্ত করে দেখবে।

জমি নিয়ে ওই চুক্তিতে কমান্ডিং অফিসার সুযোগ নেন এবং অর্থ নিয়ে দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন’ বলে জানান তিনি। এই ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত আছে কর্তৃপক্ষ তাদের খুঁজে বের করবে বলেও জানান তিনি।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেন সরাসরি চিফের কাছে অভিযোগ জানাতে পারে তার জন্য নতুন একটি যোগাযোগ লাইন চালু করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

অক্টোবরে তার অবসরে যাওয়ার আগেই সেনাবাহিনীর কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি সুন্দর করা তার মিশন বলে জানান তিনি। 

আপিরাত বলেন, “থাইল্যাণ্ডের কোনো লোক এ ঘটনার পুনারাবৃত্তি চায় বলে আমার মনে হয় না, তাই অনুগ্রহ করে সেনাবাহিনীকে দায়ী ও সৈন্যদের ভর্ৎসনা করবেন না। আপনারা যদি কাউকে দোষী করতে চান, তাহলে জেনারেল আপিরাত কংসোমপোংকে দায়ী করবেন, কারণ আমিই সেনাবাহিনীর প্রধান।”