করোনাভাইরাস: ধীরে ধীরে কাজে ফিরছেন চীনের বাসিন্দারা

নতুন একটি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই ধীরে ধীরে কর্মক্ষেত্রে ফেরা শুরু করেছেন চীনের বাসিন্দারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2020, 10:37 AM
Updated : 10 Feb 2020, 10:58 AM

দেশটির সরকার কাজের ক্ষেত্রে আরোপ করা কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পর সোমবার বিভিন্ন দপ্তর ও কারখানায় ফের কাজ শুরু করেছেন তারা, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রোববার একদিনেই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ দিনে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে একদিনে এতো মৃত্যু আর হয়নি। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯১০ জনে দাঁড়িয়েছে।

চীনের মূলভূখণ্ডের বাইরে এ পর্যন্ত দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের একজন ফিলিপিন্সে ও অন্যজন হংকংয়ের মারা গেছেন, দুজনই চীনা নাগরিক। বাকি সবার মৃত্যু চীনের মূলভূখণ্ডেই হয়েছে।

প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শাসকরা শহরগুলো প্রায় অবরুদ্ধ করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, কারখানা ও স্কুলগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এসব নির্দেশ বাস্তবায়নের ফলে চীনের ব্যস্ত শহরগুলো এখন প্রায় ভুতুরে নগরে পরিণত হয়েছে।

চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ছুটি জানুয়ারি মাসের সঙ্গেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছুটি ১০ দিন বাড়ানোর নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

এমনকি সোমবারও দেশটির বহু কর্মস্থল বন্ধ ছিল। বহু কর্মী বাড়ি বসেই অফিসের কাজ করছেন।

এমনিতে বেইজিংয়ের ব্যস্ততম সাবওয়ে লাইনগুলোর অধিকাংশ ট্রেনের আসনই ফাঁকা ছিল। সকালের ব্যস্ততম সময়ে অল্প কিছু যাত্রীকে দেখা গেছে। তাদের সবাই মাস্ক পরা ছিলেন।

চীনের ফরেন এক্সচেঞ্জ প্রশাসনের কর্মী জিন ইয়াং কর্মস্থলে যেতে গণপরিবহনের বদলে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন। তাদের অফিসের সব কর্মীকে মাস্ক পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মুখোমুখি বৈঠক এড়াতে বলা হয়েছে আর অফিসের ক্যান্টিনটি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

চেন নামের আরেক ইন্সুরেন্স কর্মী জানান, তাদের অফিসের কর্মীদের গণপরিবহন ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে।

“আমরা বাড়ি শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে অনেক দূরে। আমি সাধারণত সাবওয়ে ট্রেন দিয়ে আসা-যাওয়া করি, কিন্তু আজ সকালে ক্যাবে করে অফিসে যেতে ২০০ ইউয়ান খরচ করতে হলো আমাকে,” বলেন তিনি।

প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল বলে বিবেচিত হুবেই প্রদেশ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছে। প্রদেশটির সবগুলো বিমানবন্দর ও ট্রেন স্টেশন বন্ধ করে রাখা হয়েছে এবং রাস্তাগুলো পুরোপুরি আটকে রাখা হয়েছে।

চীনজুড়ে বহু শহরে আবাসিক এলাকাগুলোতে প্রবেশ ও ছাড়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অনেক অঞ্চলেই ফেব্রুয়ারির শেষ দিন পর্যন্ত স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হবে।

ভাইরাসটি চীনের বাইরে অন্তত ২৭টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে এবং রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব জায়গায় ৩৩০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে পৃথকভাবে নোঙর করে রাখা একটি প্রমোদতরীর ৩৭০০ লোকের মধ্যে ১৩০ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। 

রোববার চীনের মূলভূখণ্ডে আরও ৩০৬২ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন, এতে সেখানে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৪০১৭১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) জানিয়েছে।

এই করোনাভাইরাসটিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ও আসন্ন হুমকি বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য।

নতুন ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের উৎসস্থল বলে বিবেচিত চীনের উহান শহরকে এক কোটি ২৯ লাখ মার্কিন ডলার দান করেছে হংকংয়ের দাতব্য সংস্থা লি কা-শিং ফাউন্ডেশন।