থাইল্যান্ডে নির্বিচার হত্যা ‘জমি নিয়ে ক্ষোভ থেকে’

থাইল্যান্ডে নির্বিচার গুলি চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যার জন্য যে সেনা সদস্যকে দায়ী করা হচ্ছে, কমান্ডিং অফিসারের এক আত্মীয়র সঙ্গে তার বাড়ি বিক্রি নিয়ে বিরোধ চলছিল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2020, 08:52 AM
Updated : 9 Feb 2020, 10:47 AM

পুলিশ ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ওই সেনা সদস্যের নাম জাক্রাপান্থ থম্মা, বয়স ৩২ বছর। 

রাজধানী ব্যাংকক থেকে ২৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নাখন রাচসিমা শহরের কাছে সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে তিনি কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন।

শনিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টার দিকে ঘটনার শুরু। জাক্রাপান্থ তার কমান্ডিং অফিসার কর্নেল অনন্তরথ ক্রাসে এবং তার শাশুড়িকে হত্যার পর অস্ত্রাগার লুট করেন। পরে শহরের কেন্দ্রস্থলে টার্মিনাল টোয়েন্টিওয়ানে গিয়ে তিনি শুরু করেন তাণ্ডব।

রোববার সকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে অন্তত ২৬ জনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন জাক্রাপান্থ, তার গুলিতে আহত হয় অর্ধতশতাধিক মানুষ।

আহতদের দেখতে রোববার সকালে নাখন রাচসিমার একটি হাসপাতালে যান থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জাক্রাপান্থ থম্মা ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন বাড়ি বিক্রির চুক্তি নিয়ে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে। আর যার সঙ্গে তার ওই দ্বন্দ্ব, তিনি জাক্রাপান্থের কমান্ডিং অফিসারের আত্মীয়।

থাই সেনাবাহিনীর সেকেন্ড এরিয়া কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল থানিয়া কিয়াতসারন জানান, অস্ত্রাগার লুট করার সময় জাক্রাপান্থ অস্ত্রাগারের রক্ষীর ওপরও হামলা চালান। ওই রক্ষী পরে মারা যান।

সেখান থেকে একটি এইচকে৩৩ অ্যাসল্ট রাইফেল, প্রচুর গুলি এবং একটি হামভি গাড়ি নিয়ে জাক্রাপান্থ বেরিয়ে পড়েন।

থাইল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, অস্ত্রের ব্যাপারে জাক্রাপান্থের ছিল দারুণ আগ্রহ। বিভিন্ন সময়ে তিনি সোশাল মিডিয়ায় অস্ত্র হাতে নিজের ছবি পোস্ট করতেন। অস্ত্র চালনায় তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সৈনিক। 

নাখন রাচসিমা শহরের কেন্দ্রস্থলের টার্মিনাল ২১ নামের বিপণি বিতানটির সামনে একটি মোটরসাইকেল ও হেলমেট পড়ে আছে। ছবি: রয়টার্স

রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবার ওই হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে জাক্রাপান্থ লোভী মানুষদের নিন্দা করে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন।

থাই ভাষায় ওই পোস্টে তিনি লেখেন, “প্রতারণা করে তারা ধনী হচ্ছে, অন্যদের ঠকিয়ে সুবিধা নিচ্ছে। ওই টাকা কি তারা নরকে গিয়ে খরচ করতে পারবে?”

টার্মিনাল টোয়েন্টিওয়ানে হামলা শুরুর পরও ফেইসবুকে বেশ কয়েকটি পোস্ট দিয়ে তিনি আপডেট দিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়।

তার আগে এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘সবার জন্যই মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী”। আরেক পোস্টে তিনি লেখন, আঙ্গুল আড়ষ্ট হয়ে আসছে, এখন কি গুলি বন্ধ করা উচিত?

কয়েক ঘণ্টা পর ফেইসবুক জানায়, ‘সন্দেহভাজন হামলাকারীর’ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

হামলা শুরুর পরপরই থাই নিরাপত্তা বাহিনী ওই বিপণি বিতান ঘিরে ফেলে। কিন্তু জাক্রাপান্থ ভেতরে কয়েকজনকে জিম্মি করলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

প্রায় ১২ ঘণ্টা পর রোবাবর সকালে ওই সেনা সদস্য নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।