শনিবার রাজধানী ব্যাংককের আড়াইশ কিলোমিটার উত্তরপূর্বের নাখন রাচসিমা (কোরাত নামেও পরিচিত) শহর ও এর আশপাশে এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে।
স্থানীয় পুলিশের ভাষ্য মতে, জাক্রাফ্যান থম্মা নামে সেনাবাহিনীর এই জুনিয়র অফিসার প্রথমে শহরের একটি বাড়িতে ঢুকে দুজনকে গুলি করে হত্যা করেন। এরপর তিনি যান সেনা ঘাঁটিতে, সেখানকার অস্ত্রাগার থেকে বন্দুক নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন। তার গুলির মুখে পড়েছে পথচারী, বিপনীবিতানে কেনাকাটা করতে যাওয়া নারী-পুরুষ।
এরমধ্যে একবার ওই বিপণীবিতানে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী, তখন সেখানে আটকা পড়া কয়েকশ মানুষ বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। এরপরেও অস্ত্রধারী ওই বিপনীবিতানে অবস্থান করছিলেন বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কংচিপ তন্ত্রভানিত রয়টার্সকে জানান।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বিবিসি থাইকে জানান, এই সেনা সদস্য সেনা ঘাঁটি থেকে বন্দুক ও গুলি নেওয়ার আগে তার কমান্ডিং অফিসারের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করেন।
এরপর গাড়ি চালিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলের ওই বিপণীবিতানে যান। তার গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল কংচিপ নিশ্চিত করেছেন।
আহত হয়ে ওই এলাকার চারটি হাসপাতালে যাওয়া লোকগুলোকে বাঁচাতে রক্ত চেয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
হামলার মধ্যে ফেইসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন ওই সেনা সদস্য, তবে কেন তিনি এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে থাই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
“আমরা জানি না কেন সে এটা করছে। মনে হচ্ছে সে পাগল হয়ে গেছে,” বলেন কংচিপ।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রক্তে ভেসে যাওয়া গাড়ির চাকার ওপর পড়ে যাচ্ছেন একজন। তিনি নিহত ২০ জনের একজন কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আরেকটি ভিডিওতে গুলিবিদ্ধ চারজনকে দেখা গেছে, যাদের কোনো সাড়া নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা বিপণীবিতনের ভেতরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বন্দুকধারীকে কালো পোশাক পরিহিত এবং কাঁধের ওপর বন্দুক উঁচু করে ধরে রাখতে দেখা গেছে। তার আশপাশে আর কারও উপস্থিতি দেখা যায়নি।
কংচিপ বলেন, বন্দুকধারী বিপণীবিতানের মধ্যে কাউকে জিম্মি করেছেন কি না তা স্পষ্ট নয়।
“এখনও ভেতরে কয়জন আছেন, তাও জানা যায়নি।”
অন্যান্য ফুটেজে ভবনটির বাইরে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। গুলি লেগে বিস্ফোরিত একটি গ্যাস ক্যানিস্টার থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয় বলে কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলাকারীর পোস্ট করা কয়েকটি ছবির একটি তার সেলফি, সেখানে তার পেছনে এই আগুনের কুণ্ডলী দেখা গেছে।
হামলা চালানোর মধ্যে ফেইসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে ঘাতক লিখেছেন, “সবার জন্যই মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী।” আরেক পোস্টে তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, তার আত্মসমর্পণ করা উচিত কি না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আত্মসমর্পণে রাজি করাতে তার মাকে ওই বিপণীবিতানের কাছে নিয়ে এসেছে পুলিশ।
একটি ভিডিওতে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় ওই নারীকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়, “কেন সে এটা করল?”