সেই চিকিৎসককে নিয়ে চীনা গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবর

নতুন করোনাভাইরাসের আশঙ্কার দিক তুলে ধরে যিনি দিয়েছিলেন সতর্কবার্তা, সেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যুর খবর দিয়েও পরে প্রত্যাহার করে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2020, 06:41 PM
Updated : 6 Feb 2020, 06:41 PM

উহান কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ লি ওয়েনল্যাংয়ের সতর্কবার্তা আমলে না নিয়ে এক মাস আগে চীনা কর্তৃপক্ষ তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল।

২৭ বছর বয়সী লি এর মধ্যেই অবরুদ্ধ উহানে নিজেও আক্রান্ত হন নভেল করোনাভাইরাসে; বৃহস্পতিবার তার খবর নিয়ে চীনা গণমাধ্যম ছড়ায় বিভ্রান্তি।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের গ্লোবাল টাইমস প্রথমে লির মৃত্যুর খবর দেয়, পরে তা প্রত্যাহার করে বলে ওই চিকিৎসক সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন।

চীনের পিপলস ডেইলিও লির মৃত্যুর খবর জানিয়ে টুইট করেছিল।

প্রাণ সংহারী নতুন করোনাভাইরাসে ইতোমধ্যে চীনে মৃতের সংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়েছে। চীন থেকে দুই ডজন দেশে ছড়িয়ে পড়ে আক্রান্ত করেছে ২৮ হাজার মানুষকে।

কমিউনিস্ট শাসিত চীনা কর্তৃপক্ষ শুরুতে মুখ বন্ধ করতে চাইলেও করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তারের পর লি এখন ‘বীর’ হিসেবেই প্রশংসিত হচ্ছেন সর্বত্র।

নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রে কাজ করা সময় গত ডিসেম্বরে সংক্রমণের সাতটি ঘটনা পান এই চিকিৎসক। তার কাছে এই ভাইরাসটিকে দেখতে সার্সের মতোই মনে হয়, যেটা ২০০৩ সালে বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নিয়েছিল। উহানের হুনান সিফুড মার্কেট থেকে সংক্রমিত ধরে নিয়ে এসব রোগীকে হাসপাতালের কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়।

ভাইরাসটি নিয়ে সতর্ক করে সংক্রমণ এড়াতে ‘প্রতিরক্ষামূলক পোশাক’ পরার পরামর্শ দিয়ে একটি চ্যাট গ্রুপে সহকর্মী চিকিৎসকদের কাছে ৩০ ডিসেম্বর বার্তা দিয়েছিলেন ডা. লি। তখন তিনি যেটা জানতেন না তা হল- যে রোগটি ধরা পড়েছে সেটি সম্পূর্ণ নতুন একটি করোনাভাইরাস।

চার দিন পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তার কাছে ছুটে যান। একটি মুচলেকায় তার স্বাক্ষর নেন, যেখানে তার বিরুদ্ধে ‘সামাজিক শৃঙ্খলায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টিকারী মিথ্যা মন্তব্য’ করার অভিযোগ আনা হয়।

“আমরা আপনাকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিচ্ছি: আপনি যদি অধৈর্য হয়ে জেদ ধরে এমন অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যান, তাহলে আপনাকে বিচারের আওতায় আনা হবে- বুঝেছেন?” এর নিচে ডা. লির হাতে লেখা: “হ্যাঁ, আমি বুঝেছি।”

শুধু তিনিই নন, ‘গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে আরও সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে বলে তখন পুলিশ বলেছিল।

জানুয়ারির শেষের দিকে চীনা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ওয়েইবোতে ওই মুচলেকা প্রকাশ করে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করেন ডা. লি। এর মধ্যেই তার কাছে ক্ষমা চায় স্থানীয় প্রশাসন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

জানুয়ারির প্রথম কয়েক সপ্তাহ ধরে উহানের কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, কেবল সংক্রমিত প্রাণীর সংস্পর্শে এলেই মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হবে। চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য তখনও কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি।

কিন্তু পুলিশ তার কাছ থেকে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে ডা. লি গ্লুকোমা আক্রান্ত এক নারীর চিকিৎসা করেন। তিনি তখন জানতেন না ওই নারী নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।

ওয়েইবো পোস্টে লি লিখেছেন, ১০ জানুয়ারি তিনি কাশতে শুরু করেন, পরের দিন তার জ্বর হয়; দুদিন পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরও হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এঘটনার ১০ দিন পর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছিল চীন।

ডা. লি বলেন, করোনাভাইরাসের জন্য তাকে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করা হয়েছিল, প্রতিবারই ফল নেতিবাচক এসেছিল অর্থাৎ ভাইরাস পাওয়া যায়নি।

পরে ৩০ জানুয়ারী তিনি আরেকটি পোস্টে লেখেন, “আজ নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্ট ইতিবাচক ফল নিয়ে এসেছে; ধোঁয়াশা কেটে গেছে; শেষ পর্যন্ত রোগ নির্ণয় হয়েছে।”

চোখ উল্টে যাওয়া ও জিহ্বা বের করা একটি কুকুরের ইমোজি দিয়ে তিনি পোস্টটি শেষ করেন। অবাক হওয়ার কারণ নেই যে, এই পোস্টে হাজার হাজার মন্তব্য ও লাইক পড়েছিল।

দেশকে নিয়ে মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেও এক চীনা মন্তব্য করেছেন, “সংক্রামক রোগের লক্ষণ নিয়ে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করতে ভবিষ্যতে চিকিৎসকরা আরও ভয় পাবেন।

“ডা. লি ওয়েনল্যাং একজন বীর। নিরাপদ জনস্বাস্থ্য পরিবেশের জন্য এরকম কয়েক লাখ লি ওয়েনল্যাং দরকার।”