অভিসংশন বিচারে টিকে গেলেন ট্রাম্প

রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে অভিশংসন বিচারে রেহাই পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট পদে টিকে গেলেন ডনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2020, 02:55 AM
Updated : 13 Feb 2021, 10:02 PM

গুরুতর দুই অভিযোগে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ অভিশংসনের এই প্রস্তাব দেড় মাস আগে সিনেটে পাঠিয়েছিল। 

ঐতিহাসিক সেই বিচারের শুনানি শেষে বুধবার সিনেটে যে ভোটাভুটি হয়, তাতেই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত না করার সিদ্ধান্ত আসে বলে জানানো হয় বিবিসির এক প্রতিবেদনে।   

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ দুটো ছিল- ১. প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। ২. অভিশংসনের তদন্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন।

এর মধ্যে প্রথম অভিযোগ ৫২-৪৮ ভোটে এবং দ্বিতীয় অভিযোগ ৫৩-৪৮ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।  

এর কোনো একটি অভিযোগে দুই তৃতীয়াংশ ভোটে দোষী সাব্যস্ত হলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হত ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের হাতে। তবে সিনেটে ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তেমন কিছু যে ঘটবে না, তা অনুমিতই ছিল।

ট্রাম্পের আগে প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসন এবং বিল ক্লিনটনকে অভিশংসনের প্রস্তাব সিনেটে পাঠিয়েছিল প্রতিনিধি পরিষদ। তবে সিনেট তাদের কাউকে পদচ্যুত করেনি।

তবে ট্রাম্পই হতে যাচ্ছেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি অভিশংসনের ফাঁড়া কাটিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ভোটের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন।

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

বিবিসি লিখেছে, নির্বাচনের বছরে গুরুতর অভিযোগে প্রেসিডেন্টের এই অভিসংশন দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্রকে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।  

তার প্রচার শিবিরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুরোপুরি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এখন আমেরিকারদের জন্য কাজে মন দেওয়ার সময়।"

"অকর্মা ডেমোক্রেটরা ভালো করেই জানে, তারা তাকে (ট্রাম্প) হারাতে পারবে না, সে কারণেই তারা ইমপিচমেন্টের পথে গেছে।"

এদিকে গ্যালপের জনমত জরিপে এ সপ্তাহে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা উঠে এসেছে ৪৯ শতাংশে, যা তার জন্য এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানবেন ট্রাম্প।

ভোটাভুটিতে যা হলো

উটাহর সেনেটর মিট রমনি ছিলেন একমাত্র রিপাবলিকান যিনি দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মি. ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

তবে ডেমোক্র্যাটদের নিরাশ করেছেন অন্য দুইজন মধ্যপন্থী রিপাবলিকান সেনেটর---মেইনের সুসান কলিনস এবং আলাস্কার লিসা মারকাওস্কি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা নিজের পক্ষ ত্যাগ করেননি।

কয়েকজন রিপাবলিকান সেনেটর সাম্প্রতিক সময়ে মি. ট্রাম্পের আচরণের সমালোচনা করলেও, তাদের বক্তব্য হচ্ছে সেটা ইমপিচ করার পর্যায়ে যায়নি।

প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেবার জন্য সেনেটের ১০০ আসনের মধ্য থেকে দুই তৃতীয়াংশ ভোট পড়ার দরকার হতো।

ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া

ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্যরা বলেছেন, এর ফলে মি. ট্রাম্প আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবেন।

হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, "মি. ট্রাম্প অ্যামেরিকার গণতন্ত্রের জন্য সব সময় একটি 'হুমকি' হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং রিপাবলিকান সেনেটররা আইন না থাকার ব্যাপারটিকে সাধারণ ব্যাপার বানিয়ে ফেলেছেন।"

সেনেটে ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা চাক শুমার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এ যাত্রা রেহাই পেলেও সবাই জানেন তার ত্রুটিসমূহ।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি ইমপিটমেন্ট বা অভিশংসিত হয়েছেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?

এই অভিশংসনকে কেন্দ্র করে মার্কিন জনগণের মধ্যে গভীর বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতিবিদেরা।

কিন্তু মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার ফাঁস হওয়া ফোনালাপে দেখা যায়, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রীতিমতো চাপ দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট।

ওই ফোনালাপের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার পর ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি সামনে আসে।

এরপর তাকে ইমপিচ করার উদ্যোগ নেয় ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ।

সেখানে অভিশংসিত হওয়ার পর এবার সেনেটে চূড়ান্ত বিচারের মুখোমুখি হন মি. ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত কোন প্রেসিডেন্টকে ইমপিচমেন্টের কারণে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে ১৯৯৮ সালে ইমপিচ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তার আগে ১৮৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসনের বিরুদ্ধেও ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু মি. ক্লিনটন কিম্বা মি. জনসন তাদের কাউকেই সেনেটে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি।