হাত মেলাননি ট্রাম্প, তার পেছনেই ভাষণের কপি ছিঁড়লেন পেলোসি

কংগ্রেসে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণের আগে-পরের দুটি মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তিক্ত দ্বৈরথের ছবি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2020, 10:24 AM
Updated : 5 Feb 2020, 11:04 AM

মঙ্গলবার বার্ষিক এ ভাষণের আগে রীতি অনুযায়ী ট্রাম্প তার বক্তৃতার একটি কপি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার পেলোসির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেসময় এ শীর্ষ ডেমোক্রেট নেতা হাত বাড়িয়ে দিলেও তার সঙ্গে হাত মেলাননি ট্রাম্প।

ভাষণ শেষে পেলোসি ট্রাম্পের ওই আচরণের শোধও তুলেছেন; বক্তৃতা শেষে ট্রাম্প যখন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের জানানো অভিবাদনের জবাবে হাততালি দিচ্ছিলেন, সে মুহূর্তেই ঠিক পেছনে দাঁড়ানো প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারকে গোমড়া মুখে প্রেসিডেন্টের ভাষণের কপি দ্বিখণ্ডিত করতে দেখা গেছে।

ট্রাম্প তার ৮০ মিনিটের ভাষণে তাকে ঘিরে হওয়া অভিশংসন নাটকের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও এ সংক্রান্ত লড়াইয়ের রেশ যে দুই দলের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে এখনও রয়ে গেছে মঙ্গলবারের কংগ্রেস তারও সাক্ষী ছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিন স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণের পর রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্টকে অভিবাদন জানালেও ডেমোক্রেটদের বেশিরভাগই নিশ্চুপ বসে ছিলেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও কংগ্রেসের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে গত বছরের শেষভাগে ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পকে অভিশংসিত করে, কিন্তু রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটে বিচার শেষে বুধবার প্রেসিডেন্ট খালাস পেতে যাচ্ছেন বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, চার মাস আগে হোয়াইট হাউসের এক বৈঠক থেকে পেলোসি ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, এরপর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে তার আর সাক্ষাৎ কিংবা কথাবার্তা হয়নি।

মঙ্গলবার ভাষণের কপি দেয়ার সময় পেলোসি ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলানোর উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিলেও প্রেসিডেন্ট তাতে সাড়া দেননি।

হতচকিত পেলোসি এরপর কংগ্রেসে প্রেসিডেন্টকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার রীতিও এড়িয়ে যান।

‘উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ও বিশেষভাবে সম্মানিত’-কংগ্রেসে প্রেসিডেন্টকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় সাধারণত এ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হলেও এদিন ডেমোক্র্যাট স্পিকার ‘কংগ্রেসের সদস্যবৃন্দ, এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলবেন’ বলে দায় সারেন। 

এরপর ট্রাম্পের ভাষণ শেষ হলে পেলোসি দাঁড়িয়ে তাকে দেওয়া প্রেসিডেন্টের ভাষণের কপির পাতাগুলো ছিঁড়ে দু’টুকরো করে টেবিলে ফেলে রাখেন।

পরে নিজের এ আচরণের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।

“অন্য বিকল্পের চেয়ে, এটিই ছিল সবচেয়ে মার্জিত উপায়,” সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার।

ভাষণ দিতে ট্রাম্প যখন বক্তৃতামঞ্চে দাঁড়ান, দুই কক্ষের রিপাবলিকান সদস্যরা নয় মাস পরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের ফের বিজয় কামনা করে ‘আরও চার বছর’ স্লোগান দেন।

ভাষণের প্রায় পুরোটা সময় ধরেই ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা আসনেই বসে ছিলেন। ট্রাম্পের ‘আমাদের দেশ এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী’ এ কথার সময় অনেককে মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানাতেও দেখা গেছে।

স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে ট্রাম্প নিজের শাসনামলকে বারাক ওবামার চেয়েও ভালো বলে উল্লেখ করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর গত তিন বছরে মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে এবং চাকরির পরিমাণ বেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

“মাত্র তিন বছরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অধোগতি ঠেকিয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দুর্গতি প্রত্যাখ্যান করেছি,” বলেছেন তিনি।

ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ‘স্বাস্থ্যসেবার বিস্তৃতি’ পরিকল্পনাকে ‘সমাজতান্ত্রিক চক্রান্ত’ অ্যাখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, এ ধরনের কিছু হলে তা যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দেবে, মার্কিনিরা এখন যে ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন, তা থেকেও বঞ্চিত হবেন।

“আমরা কখনোই সমাজতন্ত্রীদের মার্কিন স্বাস্থ্যসেবাকে ধ্বংস করতে দেবো না,” বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ভাষণে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা যে কোনো মূল্যে ঠেকানোর কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সুরক্ষায় তথাকথিত ‘অভয়ারণ্য শহরের’ নীতিকে ভুল বলেও অ্যাখ্যা দেন তিনি। এসময় পেলোসিকে মাথা নাড়াতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ভাষণের একেবারে শেষ পর্যায়ে ট্রাম্প ইরানের কুদস বাহিনীর কমান্ডার কাসেম সোলেমানিকে হত্যার নির্দেশের প্রসঙ্গটি তোলেন।

“আমরা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুদ্ধ শেষ করতে কাজ করছি,” বলেছেন তিনি।

স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের এ ভাষণে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুইদো এবং কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত রেডিও উপস্থাপক রাশ লিমবা। প্রেসিডেন্ট তাদেরকে অভিবাদনও জানিয়েছেন। 

সিনেটে ট্রাম্পের বিচারে বাদী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ‘অভিশংসন ব্যবস্থাপকরা’ প্রেসিডেন্টের ভাষণের সময় ডেমোক্র্যাটদের সামনের সারিতে একসঙ্গেই বসে ছিলেন।

নারীদের ভোটাধিকারের দাবিতে ১০০ বছর আগে গড়ে ওঠা ‘সাফ্রাজিস্ট আন্দোলনের’ স্মরণে এদিন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট নারী আইনপ্রণেতারা দ্বিতীয়বারের মতো সাদা পোশাক পরে এসেছিলেন বলেও রয়টার্স জানিয়েছে।

আলেক্সান্ডার ওকাসিও-কর্টেজের মতো কয়েকজন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা প্রেসিডেন্টের এবারের ভাষণও বয়কট করেছেন।