করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে বিজ্ঞানীদের তোড়জোড়

চীনের প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসটি চিহ্নিত হওয়ার পর এর প্রতিষেধক বা টিকা উদ্ভাবনে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। কাজ এগুচ্ছে দ্রুতগতিতে। এই গ্রীষ্মেই নতুন টিকা পরীক্ষা করে দেখার পরিকল্পনা জানিয়েছেন তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2020, 03:49 PM
Updated : 30 Jan 2020, 05:59 PM

আগে কোনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে যেখানে টিকা তৈরিতে বছরের পর বছর লেগে যেত সেখানে নতুন এই করোনাভাইরাসটির টিকা তৈরির জন্য গবেষণার কাজ এত দ্রুত এগুবে তা ভাবাই যায়নি।

গত ৫ বছরে বিশ্ব ইবোলা,জিকা এবং মার্সের মতো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখেছে।আর এখনকার করোনাভাইরাসটি হচ্ছে,‘২০১৯-এনসিওভি’।এ ভাইরাসে এরই মধ্যে ১৭০ জন মানুষ মারা গেছে।আক্রান্ত হয়েছে আরো হাজার হাজার মানুষ।

ভাইরাসের এই দ্রুত বিস্তারের মধ্যে চীনের কর্মকর্তারাও খুবই দ্রুত করোনাভাইরাসটির জেনেটিক কোড প্রকাশ করেছেন।আর এ তথ্য পাওয়াতেই বিজ্ঞানীদের জন্য এ ভাইরাসটিকে চিনে নেওয়া এবং কীভাবে এর প্রাদুর্ভাব ঠেকিয়ে মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া যায় তার পথ খুঁজে পাওয়া সহজ হয়েছে।

একইসঙ্গে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের সরকারের তহবিল বরাদ্দসহ বড় ধরনের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষাপটে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত কাজ করতে সক্ষম হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

দ্রুতগতিতে চলছে টিকা তৈরির কাজ:

যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোর ইনোভিও গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা একটি নতুন ধরনের ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘আইএনও -৪৮০০’ টিকা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। সম্ভাব্য এ টিকাটিকে আপাতত এই নামে ডাকা হচ্ছে। গ্রীষ্মের শুরুতেই টিকাটি মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে দেখার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইনোভিও ল্যাবের গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মসূচির সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেট ব্রডেরিক বলেছেন, “চীন ভাইরাসটির ডিএনএ কাঠামো দেওয়ায় আমরা এখন আমাদের গবেষণাগারের কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে তিন ঘণ্টার মধে্যই টিকার একটি ডিজাইন তৈরি করে ফেলতে পারব।”

ভাইরাসের ডিএনএ সিকুয়েন্স ব্যবহার করে তৈরি এ টিকাটি হবে এক নতুন ধরনের ডিএনএ মেডিসিন ভ্যাক্সিন, যেটি প্যাথোজিনটির সুনির্দিষ্ট কিছু অংশকে টার্গেট করবে এবং মানবদেহও এতে ভালোভাবে সাড়া দেবে বলে আস্থা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

মানবদেহে টিকাটির প্রাথমিক পরীক্ষা সফল হলে বছরের শেষ নাগাদ এটির আরো ব্যাপক পরীক্ষা চালানো হবে বলে জানিয়েছে ইনোভিও। ততদিনে করোনাভাইরাস বিস্তারের অবসান ঘটবে কিনা তা ধারণা করা মুশকিল। তবে ইনোভিওর কাজ পরিকল্পনামাফিক এবং সময়মত এগুলে এযাবৎকালের মধ্যে এবারই সবচেয়ে দ্রুত নতুন টিকা তৈরি এবং তা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

এর আগে একই ধরনের একটি ভাইরাস সার্স এর প্রাদুর্ভাব চীনে ঘটেছিল ২০০২ সালে। কিন্তু সেবার চীন কী ঘটছে তা বিশ্বকে জানাতে দেরী করেছিল। সে কারণে সার্স এর টিকা তৈরির কাজও শুরু হয়েছিল ভাইরাস সংক্রমণ প্রায় শেষ হয়ে আসার সময়ে। এবার চীন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।

‘২০১৯-এনসিওভি’ ঘটনাক্রম:

·       ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯: চীন উহানে নিউমোনিয়া-সদৃশ ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কে জানায়।

·       ১ জানুয়ারি ২০২০: যে সামুদ্রিক খাবার/প্রাণীর বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছিল, সে বাজারটি বন্ধ করা হয়।

·       ৯ জানুয়ারি: ডব্লিউএইচও জানায়, নতুন ধরনের একটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে।

·       ১০ জানুয়ারি: চীন নতুন ভাইরাসের জেনেটিক কোড শেয়ার করে

·       ১১ জানুয়ারি: বিজ্ঞানীরা টিকা তৈরির জন্য কাজ শুরু করেন- এবং এই ভাইরাসে প্রথম একজনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

·       ১৩ জানুয়ারি: ভাইরাস প্রথমবারের মত চীনের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে, ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে থাইল্যা্ন্ডে।