সমুদ্র থেকে লাফিয়ে ওঠা মাছে এফোঁড়-ওফোঁড় কিশোরের ঘাড়

মাছ তো নয় যেন ছুরি। মাছ শিকার করতে গিয়ে নীডলফিশের সুঁচালো লম্বা ঠোঁটে এফোঁড়-ওফোঁড় হল এক কিশোরের ঘাড়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2020, 02:22 PM
Updated : 24 Jan 2020, 02:28 PM

সমুদ্র থেকে লাফিয়ে ওঠা ওই মাছের ঠোঁট ঘাড় ফুঁড়ে থাকা অবস্থাতেই কিশোরটি সাঁতরে তীরে পৌঁছে ছোটেন হাসপাতালে।

ঘটনার ৫ দিন পর ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা বিবিসি’তে নিজমুখেই বর্ণনা করেছেন ইন্দোনেশিয়ার ওই কিশোর।

ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বের সুলাওয়েসির দ্বীপ বুটনে অন্যদের সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ১৬ বছর বয়সী মহম্মদ ইদুল। হঠাৎ সূচের মত তীক্ষ্ণ মাথার 'নীডলফিশ' লাফিয়ে আসে ইদুলের দিকে। ইদুল সরে যাওয়ার আগেই তার ঘাড়ে গেঁথে যায় মাছটি। মাছের ধাক্কায় নৌকা থেকে পানিতে পড়ে যান ইদুল।

জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ঐ অবস্থাতেই তীরের দিকে সাঁতরাতে শুরু করেন এবং তীরে পৌঁছে হাসপাতালে যান। ইদুল বেঁচে গেছেন এবং হাসিমুখেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তার এই বেঁচে যাওয়ার জন্য ইদুল তার উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন বন্ধু, নিজের ভাগ্য এবং হাসপাতালের যত্নশীল চিকৎসকদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ছবি: ফেইসবুক

ইদুলের ঘাড়ে মাছ আটকে থাকার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি রাতারাতি তারকাখ্যাতিও পেয়েছেন।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে ইদুল বিবিসি ইন্দোনেশিয়ায় বলেন:

স্কুলের এক বন্ধু সার্দির সঙ্গে রাতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তিনি। ইদুলের কথায়, “সার্দির নৌকা আগে রওনা হয়, তারপর আরেকটি নৌকায় আমি যাই। সৈকত থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূর যাওয়ার পর সার্দি নৌকার ফ্ল্যাশলাইট জ্বালায়।"

"আর তখনই হঠাৎ একটি নীডলফিশ পানি থেকে লাফিয়ে উঠে আমার ঘাড়ে ছুরির মতো বিঁধে যায়।"

সঙ্গে সঙ্গেই অন্ধকার পানির মধ্যে পড়ে যান ইদুল। মাছটি তখনও তার ঘাড়ে আটকে ছিল। মাছের তীক্ষ্ণ ঠোঁট ইদুলের চোয়ালের নিচে ঘাড়ের একপাশ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছনের অংশ ফুটো করে বেরিয়েছিল।

মাছটি তখন নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ছটফট করছিল এবং এই নড়াচড়ায় ক্ষত যাতে আরো বেড়ে না যায় সেজন্য ইদুল মাছটিকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন। বন্ধুর কাছে সাহায্য চান ইদুল। সার্দি তখন ইদুলকে বলেন, মাছটিকে যেন ঘাড় থেকে বের না করা হয়, তাহলে রক্তপাত বেড়ে যাবে।

ইদুল ও সার্দি দুইজনই তখন সাঁতরে তীরে চলে আসেন। পুরো সময়টাই ইদুল প্রায় ৭৫ সেন্টিমিটার লম্বা মাছটি হাত দিয়ে ধরেছিলেন।মাছটি তখনও তার ঘাড়ে বিঁধে ছিল।

ইদুলের বাবা সাহারউদ্দিন প্রায় দেড় ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে দ্রুত ছেলেকে বাউ-বাউ'এর একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ঐ হাসপাতালের ডাক্তাররা মাছটি কাটতে পারলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় ইদুলের ঘাড় থেকে মাছের ঠোঁট বের করতে পারেননি।

ফলে ঠোঁট বের করতে ইদুলকে নেওয়া হয় দক্ষিণ সুলাওয়েসির রাজধানীতে আরেকটি প্রাদেশিক হাসপাতালে। সেখানে পাঁচজন বিশেষজ্ঞের একটি দল এক ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচার করে মাছের ঠোঁট বের করতে সক্ষম হন।

পাঁচদিন পর অনেকটা সুস্থ হয়ে বিবিসি’র সঙ্গে কথা বলেন ইদুল। তার ঘাড়ে তখনও ব্যান্ডেজ বাঁধা। তিনি এখনও ঘাড় পুরোপুরি ঘুরাতে পারেন না, তবে তার মুখে এখন হাসি।