করোনাভাইরাস ঠেকাতে চীনের ১০ শহরে গণপরিবহন, মন্দির বন্ধ

অন্তত ২৬ জনের প্রাণ নেওয়া নতুন সংক্রামক ব্যাধি ‘করোনাভাইরাসের’ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে চীন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2020, 12:37 PM
Updated : 24 Jan 2020, 02:00 PM

নতুন চান্দ্রবর্ষ উদযাপন সামনে রেখে ঘরমুখী মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার ১০টি শহরে গণপরিবহন ও সংশ্লিষ্ট এলাকার মন্দির বন্ধের পাশাপাশি পর্যটন গন্তব্য ‘নিষিদ্ধ শহর’ ও গ্রেট ওয়ালের একটি অংশও বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

চীনা নববর্ষের সপ্তাহব্যাপী ছুটির মধ্যে দেশটির কোটি কোটি মানুষ একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাতায়াত করলে ভাইরাসটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

সদ্য বিদায়ী বছরে হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রামক প্রাণঘাতী রোগটির সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর আক্রান্তের সংখ্যা এর মধ্যে ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চীনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছি। বাইরে মাত্র ১৩ জন আক্রান্ত হওয়ায় এটাকে এখনই ‘বৈশ্বিক মহামারী’ বলতে নারাজ।

তবে চীনে পরিস্থিতির অবনতির কারণে সাংহাই ডিজনিল্যান্ড থিম পার্কও শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নতুন শনাক্ত ভাইরাসটি কতটা বিপজ্জনক ও কীভাবে তা মানুষের মধ্যে সহজে ছড়িয়ে পড়ে তা এখনও জানা যায়নি বলে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।

এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে- জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও কাশি। ডব্লিউএইচও বলছে, আক্রান্ত ও মৃতদের বেশিরভাগই বয়স্ক এবং তাদের অনেকের আগের সমস্যা ছিল।

ডব্লিউএইচওর এক মুখপাত্র শুক্রবার বলেন, চীনে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে এতো তাড়াতাড়ি এর তীব্রতা মূল্যায়ন করা যাবে না।

পরিস্থিতি সামলাতে গণপরিবহন বন্ধ করায় উহান ও পার্শ্ববর্তী হুয়াংগ্যাং শহরের অন্তত ২ কোটি কার্যত আটকা পড়েছে। উহানের সঙ্গে বিমান ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উহানের সর্বত্র ‘ফেইসমাস্ক’ পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে শহরটি একটি ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে বলে বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন।

চীনা কর্তৃপক্ষ ভিড় এড়াতে পরামর্শ দিয়েছে এবং হুবেই প্রদেশের ১০টি শহরে পরিবহন চলাচল স্থগিত করা হয়েছে বলে হুবেই ডেইলি জানিয়েছে।আর বেইজিংয়ের কাছে গ্রেট ওয়ালের কিছু অংশ শনিবার থেকে বন্ধ থাকবে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

বেইজিংয়ের লামা মন্দিরসহ নতুন বছর উদযাপনে মানুষের আকর্ষণ বিখ্যাত মন্দিরগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া চীনা রাজধানী সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ ‘নিষিদ্ধ নগরী’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বেইজিংয়ে সব বড় উৎসব ও মন্দিরের মধ্যে মেলা নিষিদ্ধ ও চলচ্চিত্র মুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার থেকে সাংহাই ডিজনিল্যান্ড বন্ধ হবে।

দৈনিক একলাখ মানুষের ধারণক্ষমতার ‘থিম পার্কটি’ গত বছরের চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে সব টিকেট বিক্রি করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা নিয়ে কয়েক মাসের অর্থনৈতিক উদ্বেগের পর নতুন ভাইরাসটির কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আপাতত দূরে থাকার সম্ভাবনায় চীনের প্রবৃদ্ধিতে ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

চীনে চাহিদা কমায় বিলাসবহুল পণ্য নির্মাতা  কোম্পানিগুলোর শেয়ারে প্রভাব পড়েছে। শুক্রবার ফরাসি স্পিরিট প্রস্তুতকারী গ্রুপ রেমি কইন্ত্রোঁ বলেছে, সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে তারা ‘স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন’।