সিনেটে অভিশংসন, ট্রাম্পের অপসারণ চান ডেমোক্র্যাটরা

যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে শুরু হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারের শুনানি।ডেমোক্র্যাটরা এর মধ্যেই লিখিতভাবে ট্রাম্পের অপসারণ দাবি করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2020, 12:01 PM
Updated : 21 Jan 2020, 01:12 PM

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হুমকি হিসাবে সোমবার জমা দেওয়া এক নথিতে উল্লেখ করেছেন তারা। ট্রাম্পকে ক্ষমতায় রেখে দিলে আগামী দিনগুলোতে নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ চাইতে ভবিষ্যৎ নেতাদের উৎসাহিত করা হবে বলে ডেমোক্র্যাটরা যুক্তি দেখান।

অন্যদিকে,সোমবারই এর ঠিক বিপরীত বক্তব্যে ট্রাম্পের আইনজীবীরা তার খালাস চেয়েছেন।ট্রাম্প ভুল কিছু করেননি বলেই দাবি তাদের। ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে আরেকবার নির্বাচিত হতে না দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।

মঙ্গলবার ১৮:০০ জিএমটি তে শুরু হচ্ছে ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানি।সিনেটররা শুনানিতে প্রতিনিধি পরিষদের আইনজীবী এবং হোয়াইট হাউজের আইনজীবী উভয় পক্ষেরই বক্তব্য শুনবেন।শোনা হবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যও।বিচার প্রক্রিয়া দেখানো হবে টেলিভিশনে।শুনানির পর ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে কিনা- তা নিয়ে ভোটাভুটির জন্য সিনেটররা পুরো একদিন সময় পাবেন।

বিচার প্রক্রিয়া সপ্তাহে ছয়দিন করে চলবে কেবল রোববার বাদ দিয়ে (সোম থেকে শনি পর্যন্ত)এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তা জানুয়ারির শেষ নাগাদও চলতে পারে।উদ্বোধনী যুক্তিতর্ক চলবে চারদিন।এ সময় ডেমোক্র্যাটিক হাউজের আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তি দেবেন এবং প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা এর জবাব দেবেন।

১শ’ আসনের সিনেটে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে গেলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হবে। কিন্তু সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যা মাত্র ৪৭।আর রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩ হওয়ায় ট্রাম্প খালাস পাবেন এটি স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। তবে যদি ব্যতিক্রমী কিছু ঘটে যায়,ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হয়ে যান,তাহলে সেক্ষেত্রে তার জায়গায় নতুন প্রেসিডেন্ট হতে পারেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ নিয়ে তৃতীয় কোনো প্রেসিডেন্ট উচ্চকক্ষ সিনেটে অভিশংসন বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। গুরুতর অভিযোগে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ইউক্রেইনকে দুর্নীতির তদন্ত করতে চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এ ঘটনার তদন্তে কংগ্রেসকে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্প অভিশংসিত হন।

অভিশংসনের পট প্রস্তুত হল যেভাবে:

· অগাস্ট ২০১৯: এক হুইশেলব্লোয়ার বা তথ্যফাঁসকারী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

· অক্টোবর-ডিসেম্বর:একটি তদন্ত হয়,শুনানিও হয় কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ডেমোক্র্যাট অধুষ্যিত প্রতিনিধি পরিষদে (হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস)।

· ডিসেম্বর: প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট নেতারা ভোটে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করেন।

·       জানুয়ারি ২০২০:হাউজে পাস হওয়া অভিশংসন প্রস্তাবের অভিযোগগুলো পাঠানো হয় কংগ্রেসের রিপাবলিকান অধুষ্যিত উচ্চকক্ষ সিনেটে।যেখানে এখন চলবে বিচার।

সিনেটের বিচার প্রক্রিয়া:

·       সিনেটে বিচার কিভাবে পরিচালনা করা হবে সে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন দুইজন। তাদের একজন হলেন, সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল এবং অপরজন, ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার।

·       ম্যাককনেল চাইছেন বিচার দ্রুত শেষ হোক এবং ট্রাম্প মুক্তি পান। তিনি উদ্বোধনী যুক্তিতর্কের জন্য উভয়পক্ষকেই ২৪ ঘণ্টা করে দুদিনের বেশি সময় দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ আদৌ গ্রহণ করা হবে কিনা সে বিষয়টি নিয়েও ভোট চান তিনি।

·       চাক শুমার অভিযোগ করে বলেছেন,ম্যাককনেল প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন করা আটকাতে চাইছেন।

·       ম্যাককনেলসহ প্রত্যেক সিনেটরই বিচার প্রক্রিয়ায় ‘পক্ষপাতহীন ন্যায়বিচারের’ শপথ নিয়েছেন। তবে ম্যাককনেল গতমাসে বলেছিলেন,তিনি পক্ষপাতহীন নন এবং তিনি ও তার দল হোয়াইট হাউজের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।

·       তবে বিচারের দেখাশুনা ম্যাককনেল অবশ্য করছেন না। একাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস কে। যদিও ১শ’ সিনেটরই হচ্ছেন আসল বিচারক এবং জুরি।বিচারক রবার্টস কেবল বিচার নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলছে কিনা সেটি খেয়াল রাখবেন।

·       ৭ ডেমোক্র্যাটের একটি দল অভিশংসন ম্যানেজার হিসাবে কাজ করবে। হাউজের এই কৌসুলিরা সিনেটে অভিশংসনের অভিযোগগুলো উপস্থাপন করবেন।

·       ট্রাম্প নিজেও সিনেটের এ শুনানিতে উপস্থিত হতে পারেন।তবে তার আইনজীবী সিপোলোন এবং সেকুলোরই ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখার সম্ভাবনা বেশি। অভিশংসন ম্যানেজারদের মত এ আইনজীবীরাও প্রত্যক্ষদর্শীদেরকে প্রশ্ন করাসহ উদ্বোধনী এবং সমাপণী যুক্তিতর্ক করতে পারবেন।

·       ডেমেক্র্যাটরা চায় সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনসহ হোয়াইট হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাক্ষ্য দিক।তবে রিপাবলিকানরা বিচার প্রক্রিয়া সংক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিলে কোনো স্বাক্ষীর সাক্ষ্য আদৌ শোনা না হতে পারে।সাক্ষী ডাকা হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত হতে পারে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫১ সিনেটরের মতেই ভিত্তিতেই।