গৃহযুদ্ধের সময় নিখোঁজ সবাই মারা গেছে: রাজাপাকসে

শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময় যে ২০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ হয়েছিল তারা সবাই মারা গেছে বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবেয়ে রাজাপাকসে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2020, 04:49 AM
Updated : 21 Jan 2020, 05:01 AM

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে জাতিসংঘের এক দূতের সঙ্গে বৈঠকে রাজাপাকসে ওই মন্তব্য করেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই নিখোঁজদের ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শ্রীলঙ্কার আইন অনুযায়ী, ডেথ সার্টিফিকেট না থাকলে নিখোঁজ স্বজনের সম্পত্তি, ব্যাংক একাউন্ট বা অন্যান্য সম্পদ তার পরিবারের সদস্যরা হস্তগত করতে পারবেন না। 

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক হানা সিঙ্গারের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট গোটাবেয়ে রাজাপাকসের বৈঠকের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিখোঁজদের অধিকাংশই লিবারেশন অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) নিয়োগকৃত লোক ছিল। 

“নিখোঁজ ব্যক্তিদের ইস্যুটি সমাধানের জন্য প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এই নিখোঁজ ব্যক্তিরা আসলে মারা গেছেন বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি,” বিবৃতিতে এমনটি বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিয়ে নিখোঁজদের পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনরা কোথায়, এটি জানানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। অনেকেরই আশা ছিল তাদের স্বজন এখনো বেঁচে আছে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো তাদের আটকে রেখেছে। তবে তাদের এ ধারণা আগেই প্রত্যাখ্যান করেছিল সরকার।

নিখোঁজদের পরিবারের শত শত সদস্যরা প্রতিদিন তাদের জন্য প্রার্থনা করতে মিলিত হয়ে প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে তাদের স্মৃতি অমলিন রেখেছে।

২৬ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলার পর ২০০৯ সালের মে মাসে বিদ্রোহী তামিল টাইগারদের পরাজিত করে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী।

বিদ্রোহী তামিলরা পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে যুদ্ধে নেমেছিল। কিন্তু দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী বৌদ্ধ সমর্থিত সরকার শেষ পর্যন্ত তাদের দমন করতে সক্ষম হয়। এই যুদ্ধে আনুমানিক এক লাখ লোক নিহত ও প্রায় ২০ হাজার লোক, যাদের অধিকাংশই তামিল, নিখোঁজ হয়।

যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে গোটাবেয়ে রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন এবং বিদ্রোহীদের নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সিংহলীরা তাকে বীরের মর্যাদা দিলেও তাকে গভীরভাবে অবিশ্বাস করে দেশটির তামিল জনগোষ্ঠী।

যুদ্ধ শেষে উভয়পক্ষের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগ আনে জাতিসংঘ; বিশেষ করে যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে।

এমন অনেক ভাষ্য পাওয়া গেছে, যেখানে বলা হয়েছে তামিল বাহিনী যখন আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা করছিল তখন তাদের হত্যা করা হয় অথবা পরে হেফাজতে নিয়ে হত্যা করা হয়। জোরালো ভিডিও প্রমাণ থাকার পরও শ্রীলঙ্কা সরকার ধারাবাহিকভাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের বছরগুলোতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসে ও তার ভাই গোটাবেয়ে রাজাপাকসের বিরোধী বলে চিহ্নিত ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও অধিকার আন্দোলনকারীদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া চলতে থাকে। গ্রেপ্তার করা এসব লোকজনের খোঁজ আর কখনো পাওয়া যায়নি।

এসব ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করে রাজাপাকসে সরকার। চলতি মাসের প্রথমদিকে গোটাবেয়ে রাজাপাকসে বিবিসিকে বলেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে তোলা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলোর কোনো ‘ভিত্তি’ নেই।