সেনাবাহিনীকে সমর্থন,যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের তীব্র নিন্দায় খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইউক্রেইনের যাত্রীবাহী বিমান ভুল করে ভূপাতিত করা সশস্ত্র বাহিনীকে সমর্থন করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তীব্র সমালোচনা করে ইরানিদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2020, 03:41 PM
Updated : 17 Jan 2020, 04:33 PM

৮ বছরের মধ্যে প্রথম শুক্রবার জুমার নামাজে ইমামতির সময় খুতবায় খামেনি এ প্রতিক্রিয়া জানান। শীর্ষ ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলেমানি হত্যার বদলায় ইরান তার সীমানা পেরিয়ে দূরের লক্ষ্যে আঘাত হানবে বলেও বার্তা দিয়েছেন তিনি।

খামেনি বলেন, “এ অঞ্চল শত্রুদের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।”

রেভলুশ্যনারি গার্ড বাহিনীকে সমর্থন:

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেইন এয়ারলাইন্সের বিমান ভূপাতিত হয়ে ১৭৬ জন নিহতের ঘটনা নিয়ে ইরানে বিক্ষোভ চলছে।কিন্তু খামেনি এ ঘটনায় সশস্ত্র বাহিনীর সমালোচনা না করে বরং সমর্থন দিয়ে বলেছেন,রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদেশগুলোকে ইরানের শত্রু উল্লেখ করে খামেনি বলেন, ইউক্রেনীয় উড়োজাহাজ ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাটিকে তারা জেনারেল কাসেম সোলেমানি হত্যাকাণ্ড আড়াল করার জন্য ব্যবহার করেছে।

"বিমান ভূপাতিতের ঘটনায় আমরা যতটা দুঃখ পেয়েছি আমাদের শত্রুরা এ ঘটনায় ততটাই খুশি হয়েছে। তারা খুশি হয়েছে। কারণ, এ ঘটনায় তারা আমাদের রেভল্যুশনারি গার্ড ও সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার একটা সুযোগ পেয়ে গেছে।”

ইরান কর্তৃপক্ষ প্রথমে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরে বাড়তে থাকা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড ভুল করে ছোড়া ‘ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের’ আঘাতে বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার কথা স্বীকার করে। এরপরই ইরানে ঘটনাটি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।

শুক্রবারের দোয়ায় আরো যা বলেছেন খামেনি:

·      যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘শয়তান’ বলে সমালোচনা করে মার্কিন কর্মকর্তাদেরকে ‘ভাঁড়’ বলে ব্যঙ্গ করেছেন খামেনি।

·      তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানিদের পাশে আছে- একথা বলে আমেরিকান ভাঁড়েরা জনগণকে ‘মিথ্যা’ বলছে। ইরানের পাশে তাদের থাকা মানে তারা জনগণের বুকে ছুরি মারার অভিসন্ধি নিয়েই তা করছে।

·      ইরানি কমান্ডার সোলেমানি হত্যার জবাবে ইরাকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যুক্তরাষ্ট্রের মুখে চপেটাঘাত, বলেন খামেনি।

·      ইরানের এলিট কুদস ফোর্স- যাকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দিয়েছে- সেই ফোর্সকেই ‘মানবীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন মানবিক সংগঠন’ বলে বর্ণনা করেছেন খামেনি।

·      সোলেমানির শেষকৃত্য এবং এর বদলায় ইরানি সেনাবাহিনীর জবাবকে ‘ইতিহাসের মোড় পরিবর্তন’ আখ্যা দিয়েছেন খামেনি।

·      যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি কে যুক্তরাষ্ট্রের দালাল আখ্যা দিয়ে তাদেরকে বিশ্বাস করা যায় না বলে উল্লে করেছেন খামেনি। সেইসঙ্গে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার নোটিশ দেওয়ার জন্যও খামেনি এই তিনদেশের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

তেহরানে শুক্রবার মোসাল্লা মসজিদ থেকে জাতির উদ্দেশ্যে এসমস্ত বক্তব্য রাখেন আয়াতুল্লাহ। এর আগে ২০১২ সালে শুক্রবারের দোয়ায় সর্বশেষ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আয়াতুল্লাহ খামেনি। সে সময় ইরানে ইসলামি বিপ্লবের ৩৩তম বার্ষিকী ছিল।

শুক্রবারের এ দোয়ায় নেতৃত্ব দেওয়া প্রতীকী অর্থে গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ কোনো বার্তা দিতে চাইলে এটি করা হয়। তিনি বলেন,সাধারণত ইরানি নেতারা এ ধরনের দায়িত্ব বাচন দক্ষতা থাকা ধর্মীয় নেতাদের ওপরই দিয়ে থাকেন।