ট্রাম্পের ‘পুনর্নির্বাচনের প্রচারে হাওয়া দেবে’ চীনের সঙ্গে চুক্তি

একে অপরের রপ্তানি পণ্যে শুল্ক আরোপ নিয়ে দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র-চীন স্বাক্ষরিত ‘প্রথম পর্যায়ের’ বাণিজ্য চুক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের প্রচারেও সুবিধা করে দেবে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2020, 11:21 AM
Updated : 16 Jan 2020, 11:21 AM

বুধবার হোয়াইট হাউসে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুই দেশের কর্মকর্তারা ছাড়াও বেইজিং-ওয়াশিংটন ভালো সম্পর্কে লাভবান হতে পারেন এমন ব্যবসায়ীদের মধ্যে বোয়িংয়ের প্রধান ডেভিন কালহুন, ক্যাসিনো মোঘল শেলডন অ্যাডেলসন, ব্ল্যাকস্টোনের প্রধান স্টিভ শর্জম্যান এবং সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারও ছিলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ চুক্তি কতখানি কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে গেলেও বুধবারের চুক্তি স্বাক্ষর মঞ্চ ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের প্রচারে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ভালোই প্রণোদনা জোগাবে।

একদিকে চুক্তিটি চীনের সঙ্গে ব্যবসা ও শুল্ক সংক্রান্ত গত কয়েক মাসের উত্তেজনা নামিয়ে আনবে, অন্যদিকে এশিয়ার দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও কমাবে।

বেইজিংয়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক এ ‘শুল্ক যুদ্ধের’ পেছনে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ট্রাম্পের দায় দেখলেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ পদক্ষেপই মূলত বেইজিং-ওয়াশিংটন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভূমিকা রাখছে, বলছেন বিশ্লেষকরা।

নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৮ শতাংশ কমে ৪৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে; ২০১৩ সালের পর এবারই প্রথম পুরো অর্থবছরজুড়ে এরকম ঘাটতির পরিমাণ কমে আসার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে, বলছে রয়টার্স।

বুধবারের চুক্তিতে ভিত্তি ধরা হয়েছে ২০১৭ সালকে। ওই বছর বেইজিং যে পরিমাণ মার্কিন পণ্য ও সেবা কিনেছে, আগামী দুই বছর তার তুলনায় অন্তত ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্রয় করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। একইসঙ্গে মেধাস্বত্ত আইন কার্যকরে কড়াকড়ির ব্যাপারে ওয়াশিংটনকে আশ্বাসও দিয়েছে তারা।

চুক্তি অনুযায়ী বেইজিং প্রতি বছর অতিরিক্ত ১০০ বিলিয়ন ডলার করে মার্কিন পণ্য কিনলে তা ২০১৭-র তুলনায় মার্কিন অর্থনীতিতে ব্যাপক গতির সঞ্চার করবে। ওই বছর চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৮৭ মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা কিনেছিল।

এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে চীনকে তার অন্য সহযোগী বিশেষ করে ব্রাজিলের মতো দেশগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে বলে বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চীনের প্রতিনিধিত্ব করা ভাইস প্রিমিয়ার লিউ হে অবশ্য এ বিষয়ে সতর্কতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন,পণ্য ক্রয়ের বিষয়টি বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে।

চীন ২০০১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়ার সময় প্রযুক্তি ও মেধাস্বত্ত সংরক্ষণের ওপর জোর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কার্যকর হয়নি, বলছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির বদৌলতে চীনের ওপর থেকে কিছু শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও ওয়াশিংটন-বেইহজিং বাণিজ্য বিরোধের অনেকগুলো উৎসই অমীমাংসিতই রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়িক নেতারা।

তাদের মতে, এ চুক্তি দুই দেশের বাণিজ্য বিরোধের ক্ষেত্রে দায়ী কাঠামোগত অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এটি বিশ্ব অর্থনীতিকে শ্লথ করে দেওয়া শুল্কগুলোও পুরোপুরি দূর করতে পারেনি; উল্টো আর কঠিন ক্রয় লক্ষ্য ঠিক করেছে।

২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে এ বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধ পরস্পরের আমদানি পণ্যের ওপর ৪৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়ে দেয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতির এই বিরোধে বাণিজ্য প্রবাহ বিঘ্নিত হয়, বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়ে এবং বিনিয়োগকারীদেরও উদ্বিগ্ন করে তোলে।

তবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যা-ই ঘটুক না কেন, চীনের সঙ্গে ‘প্রথম পর্যায়ের’ এ চুক্তি যে ট্রাম্পকে সুবিধা করে দেবে সে ব্যাপারে বিশ্লেষকরা অনেকটাই একমত।

তারা বলছেন, অভিশংসন নিয়ে সিনেটে বিচার শুরুর আগমুহুর্তে এমন একটা চুক্তি সমর্থক এমনকি দলীয় আইনপ্রণেতাদের কাছেও ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেবে; রিপাবলিকানদের প্রচার শিবিরে এনে দেবে নতুন অস্ত্র, বাড়িয়ে দেবে ট্রাম্পের গলার জোরও।