সংবিধান পরিবর্তনের পথে পুতিন, ভোটের প্রস্তাব

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার ক্ষমতার মেয়াদ শেষের আগেই সংবিধানে আমূল পরিবর্তন আনার পথে হাঁটছেন। এ পরিবর্তনের জন্য দেশজুড়ে ভোটের প্রস্তাব করেছেন তিনি।

>>রয়টার্স
Published : 15 Jan 2020, 03:17 PM
Updated : 15 Jan 2020, 05:37 PM

দীর্ঘমেয়াদে পুতিনের ক্ষমতায় থাকার পট প্রস্তুত করতে পারে সংবিধানিক পরিবর্তনের এ পদক্ষেপ। বিবিসি জানায়, বুধবার পুতিন এ প্রস্তাব দেওয়ার কয়েকঘন্টা পরই আকস্মিকভাবে রাশিয়ার সরকার পদত্যাগ করেছে।

পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, “প্রেসিডেন্টের এ পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে রাশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় ধরনের বদল ঘটে যাবে। এতে যে কেবল সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদেই বদলে যাবে তাই নয় বরং নির্বাহী ক্ষমতা, আইনসভার ক্ষমতাসহ বিচারবিভাগীয় ক্ষমতার ভারসম্যেও আমূল পরিবর্তন ঘটবে। আর এর প্রেক্ষাপটেই বর্তমান সরকার পদত্যাগ করেছে।”

পুতিন এ ঘোষণার পর মেদভেদেভকে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন এবং ট্যাক্স সেবা প্রধান মিখাইল মিসুস্তিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেদভেদেভের স্থলাভিষিক্ত করেছেন।

পুতিন তার ক্ষমতার মেয়াদ শেষের চারবছর আগেই সংবিধান পরিবর্তনের এ পথ বেছে নিলেন। রাশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, কেউ টানা দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারেন না।

১৯৯৯ সাল থেকে পুতিন চারবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন দু’বার। ২০১২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরেই আইনপ্রণেতাদের দিয়ে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছর থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করিয়ে নেন পুতিন।

বর্তমানে পুতিন টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। তার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে। তাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য পুতিন ক্ষমতা ছাড়বেন, নাকি সংবিধানই পরিবর্তন করবেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ার মধ্যেই তার ভোটের ওই প্রস্তাব এল।

মেয়াদ শেষের পর পুতিন কি করবেন তা এখনো বলেননি। তবে বর্তমান সংবিধানের আওতায় তিনি আপাতত আরেকবারের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে পারবেন না।

সংবিধান পরিবর্তন নিয়ে পুতিনের বক্তব্য:

সংবিধান পরিবর্তন করতে চাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বুধবার বার্ষিক ‘স্টেট অব দ্য ন্যাশন’ ভাষণে পুতিন বলেছেন, তিনি দেশব্যাপী ভোটের মধ্য দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্টের হাত থেকে ক্ষমতা পার্লামেন্টে স্থানান্তর করতে চান। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষকে আরো ক্ষমতাশালী করতে চান তিনি। যাতে পার্লামেন্ট রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষমতা পায়।

বর্তমানে প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করাসহ সরকারি মন্ত্রীদেরকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আর পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমা সে সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে থাকে।

প্রস্তাবিত অন্যান্য পরিবর্তনের মধ্যে আছে: আন্তর্জাতিক আইনের দাপট কমানো, প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের নিয়ম সংশোধন করা এবং বিদেশি নাগরিকত্ব কিংবা বিদেশে বসবাসের অনুমতি থাকা ব্যক্তিদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়া নিষিদ্ধকরণ আইন আরো সুসংহত করা।

পুতিন বলেন, “রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এ পরিবর্তনগুলো অবশ্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে দেশের পার্লামেন্টের ভূমিকা এবং গুরুত্ব বাড়বে…পার্লামেন্টের দলগুলো এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীনতা ও দায়দায়িত্বের বিষয়টিও গুরুত্ববহ হবে।”

তবে পুতিনের বিরুদ্ধে বরাবরই সমালোচকদের অভিযোগ, ক্ষমতা ছাড়ার পরও যাতে কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতা ধরে রাখা যায় সে ফন্দিই এঁটে চলেছেন তিনি। ২০০৮ সালে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে পুতিন প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে না পারলেও দিমিত্রি মেদভেদেভকে সে পদে বসিয়ে পেছন থেকে তিনি কলকাঠি নেড়েছিলেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।

রাশিয়ার জনগণের মধ্যেও অবশ্য পুতিনের জনপ্রিয়তা আছে। কারণ, পুতিনের হাত ধরেই রাশিয়া আবার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পোক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। কয়েক বছর আগেও রাশিয়ার সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্র তেমন সমীহ করত না। পুতিন সেই দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন। বর্তমানে তার মতো ক্যারিশমাটিক নেতাও রাশিয়ায় আর দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে পুতিন বড় ব্যবধানে জয় নিয়ে চতুর্থবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।

ক্ষমতায় থাকার জন্য পুতিন যা করতে পারেন:

সমালোচকরা বলছেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য পুতিন বেশ কয়েকটি বিকল্প পথ নিতে পারেন।

প্রথমত: পার্লামেন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষমতার ভিত মজবুত করা, দ্বিতীয়ত: ২০২৪ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর প্রধানমন্ত্রী পদে এক মেয়াদ থেকে আবারো প্রেসিডেন্ট হওয়া।

তৃতীয়ত: সংবিধানের আওতায় স্টেট কাউন্সিল বা উপদেষ্টা পরিষদের ক্ষমতা বাড়ানো। যে কাউন্সিলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন পুতিন এবং বুধবার তিনি এ কাউন্সিলের আরো ক্ষমতায়ণ করা উচিত মনে করেন বলে জানিয়েছেন।

২০২৪ সালের পর পুতিন রাশিয়ার রাজনীতিতে গুরুতর ভূমিকা পালন করবেন কিনা তা এ মুহূর্তে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। তবে তিনি নতুন যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে রাশিয়ার রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে পুতিন ওই বিকল্প পথগুলো অবলম্বন করতে পারেন বলেই ইঙ্গিত মিলছে।