পরমাণু চুক্তি মরে যায়নি: ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার প্রায় দুই বছর পর তেহরানের শর্ত লংঘনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ‘বিরোধ নিষ্পত্তি’ কার্যক্রম শুরু করলেও ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিটি এখনো ‘মরে যায়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভাদ জারিফ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2020, 10:34 AM
Updated : 15 Jan 2020, 10:37 AM

“না, এটা (চুক্তি) মরে নি, মরে যায়নি,” ভারতের নয়া দিল্লিতে চলমান এক অনুষ্ঠানের সাইডলাইনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি এমনটাই বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে স্বাক্ষরিত এ জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশান (জেসিপিওএ) চুক্তিতে চীন এবং রাশিয়াও আছে।

ইউরোপের দেশগুলো মঙ্গলবার চুক্তির ‘বিরোধ নিষ্পত্তি’ কার্যক্রম শুরুর নোটিস দিলেও মস্কো বলেছে, তারা এখনি এ পথে হাঁটতে রাজি নয়। অন্যদিকে তেহরান ইউরোপের দেশগুলোর এ পদক্ষেপকে ‘কৌশলগত ভুল’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে।

“বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যক্রম আইনত ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় কৌশলগত ভুল,” ইউরোপের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় জারিফ এমনটাই বলেছিলেন বলে জানিয়েছে ফারস।

চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) নোটিস দেয়ার পর ইইউ পরমাণু চুক্তির বাকি পক্ষ রাশিয়া, চীন ও ইরানকে এ পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাবে। এরপর চুক্তিতে সই করা দেশগুলো মতবিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ১৫ দিন সময় পাবে। তবে সবার সম্মতিতে এ সময় বাড়ানোও যেতে পারে।

কোনো সমঝোতা না হলে চুক্তি বাতিল হয়ে ইরানকে শেষপর্যন্ত নতুন করে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞার কবলেও পড়তে হতে পারে।

চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপের তিন দেশ বলছে, তারা পরমাণু চুক্তিটি বহাল রেখে ইরানকে তার প্রতিশ্রুত শর্তের মধ্যে ফেরাতে চায়। ‘বিরোধ নিষ্পত্তি’র নোটিস দিলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যেরকম ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি নিয়েছেন, তাতে সহযোগী না হওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি।

২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষর করা ওই চুক্তিতে পারমাণবিক কর্মসূচি কমানোর বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছিল।

তিন বছর পর ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তিটি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর ওয়াশিংটন ইরানের ওপর পুরোনো সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে।

যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক নিষেধাজ্ঞার জবাবে ইরানও ধীরে ধীরে চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে সরতে থাকে। এ মাসে ইরান চুক্তিতে থাকা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা আর না মানারও ঘোষণা দিয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে বলে ইরান যুক্তি দেখালেও তেহরানের এমন পদক্ষেপ ইউরোপীয়রা মেনে নেবে না; তারা ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের নির্ধারিত সীমা মানতে বাধ্য করার চেষ্টা চালাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তিটিকে ‘নতুন ট্রাম্প চুক্তি’ দিয়ে বদলে ফেলার জোরাল আহ্বান জানিয়েছেন। তার এ মন্তব্যকে ওয়াশিংটন স্বাগত জানিয়েছে।

ট্রাম্প বলছেন, তার পূর্বসূরী ওবামার আমলে করা পরমাণু চুক্তিটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইরানতে নতুন চুক্তিতে বাধ্য করা হবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

তবে তেহরান বলছে, নিষেধাজ্ঞা থাকলে তারা কোনো অবস্থাতেই চুক্তি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনাতেই বসবে না।