উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত: ‘মিথ্যা’ বলায় তেহরানে বিক্ষোভ

ইউক্রেইনীয় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে গুলি করে ভূপাতিত করার কথা প্রথমে অস্বীকার করায় কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ কয়েকশত ইরানি রাজধানী তেহরানের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2020, 03:33 AM
Updated : 12 Jan 2020, 08:44 AM

কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাদের মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত করছে তারা।

বিবিসি জানিয়েছে, প্রতিবাদকারীরা অন্তত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়, সেখানে কাঁদুনে গ্যাস ছোড়া হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। 

এক টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ‘অনুপ্রেরণাদায়ী’ প্রতিবাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

গত বুধবার ভোরে তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ছয় মিনিট পর ইউক্রেইন এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজাটি বিধ্বস্ত হয়। এতে আরোহী ১৭৬ জনের সবাই নিহত হন।

প্রথমে যান্ত্রিক সমস্যার কারণে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দাবি করে ইরান। কিন্তু উড়োজাহাজটি ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন ইরানের কর্মকর্তারা তা ডাহা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়ে বলছিলেন, যান্ত্রিক ত্রুটিতেই দুর্ঘটনায় পড়ে ওই উড়োজাহাজটি।

ঘটনার তিন দিন পর শনিবার ‘ভুল করে’ উড়োজাহাজটি ভূপাতিতের কথা স্বীকার করে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে ইরানি কর্তৃপক্ষ।

৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদের স্থানীয় সময় ভোররাতে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেমানি নিহত হওয়ার পর ওই অঞ্চলে প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বুধবার ভোররাতে ইরাকের দুটি সামরিক ঘাঁটির মার্কিন অবস্থানগুলোতে ডজনেরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

এর ঘণ্টা দুয়েক পর তেহারানের কাছে ইউক্রেইনীয় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় উড়োজাহাজটিতে থাকা বহু ইরানি ও কানাডীয়র পাশাপাশি ইউক্রেইন, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান ও জার্মানির বেশ কয়েকজন নাগরিক নিহত হন।

প্রথমে উড়োজাহাজের নিহত যাত্রীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তেহরানের অন্তত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, শরীফ ও আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে প্রতিবাদ শুরু করে। সন্ধ্যার দিকে প্রতিবাদ ক্ষুব্ধতায় রূপ নেয়।

ইরানের আধা-স্বায়ত্তশাসিত বার্তা সংস্থা ফারস এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রায় হাজার খানেক লোক নেতাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে মার্কিন হামলায় নিহত সামরিক কমান্ডার সোলেমানির ছবি ছিড়ে ফেলে।

উড়োজাহাজ ভূপাতিতের ঘটনায় যারা দায়ী ও যারা সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেছিল, সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি তুলেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।

তারা ‘কমান্ডার ইন চিফের পদত্যাগ চাই’, ‘মিথ্যাবাদীরা নিপাত যাক’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়।

রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে বলে ফারস জানিয়েছে। কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ছবিতে এমনটি দেখা গেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।   

এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আমি আমার দেশের কর্তৃপক্ষকে কখনো ক্ষমা করবো না, সেই সব লোককে যারা ঘটনাস্থলে ছিল ও মিথ্যা বলেছে।”

তবে সোলেমানি নিহত হওয়ার পর তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরানজুড়ে মানুষের যে ঢল নেমেছিল সেই তুলনায় এ প্রতিবাদ অনেক ছোট ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইংরেজি ও ফার্সিতে লেখা এক টুইটে বলেন, “আমরা নিবিড়ভাবে আপনাদের বিক্ষোভ লক্ষ করছি। আপনাদের সাহস অনুপ্রেরণাদায়ী। আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং আমার সরকারও ধারাবাহিকভাবে আপনাদের পাশে আছে।”