সৌদি আরামকোয় হামলা হুতিরা করেনি, বলছে জাতিসংঘের প্রতিবেদন

সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ দুটি তেল স্থাপনায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে হওয়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা করেনি বলে জাতিসংঘের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2020, 07:52 AM
Updated : 9 Jan 2020, 07:52 AM

বৈশ্বিক এ সংস্থাটির নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণকারী দলের করা তদন্তের গোপনীয় এক প্রতিবেদন দেখে বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন তথ্য জানিয়েছে।

জাতিসংঘের স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞদের করা এ প্রতিবেদন সেপ্টেম্বরের হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

আবকাইক ও খুরাইসে সৌদি আরামকোর তেলের প্ল্যান্টে গত বছরের ওই হামলার পরপরই ইয়েমেনের ইরানঘনিষ্ঠ হুতি বিদ্রোহীরা এর দায় স্বীকার করে নিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সৌদি আরব শুরু থেকেই এ ব্যাপারে সন্দিহান ছিল, তাদের অভিযোগের তীর ছিল তেহরানের দিকেই। ইরান অবশ্য শুরু থেকেই সৌদি আরবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।

“তাদের দাবি সত্ত্বেও হুতি বাহিনী আবকাইক ও খুরাইসে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ এর হামলাটি চালায়নি,” প্রতিবেদনে বলেছেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ইয়েমেন নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণকারী বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলেমানি নিহত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিরাজমান যুদ্ধোন্মাদনার মধ্যে রয়টার্স জাতিসংঘের ওই গোপনীয় তদন্ত প্রতিবেদনটির কথা জানাল।

সোলেমানি হত্যাকাণ্ডের পাল্টায় বুধবার ইরান ইরাকের দুটি সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে; ওই ঘাঁটিগুলোতে মার্কিন সৈন্যদের আবাস থাকলেও কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।

হামলায় ৮০ ‘মার্কিন সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে বলে তেহরান দাবি করলেও অন্য কোনো সূত্র থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় যেসব ড্রোন ও ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো ‘ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ছোড়ার মতো দূরপাল্লার’ নয় বলেই সন্দেহ তাদের।

“আবকাইক ও খুরাইসে হামলাটি উত্তর/উত্তরপূর্ব এবং উত্তর/উত্তরপশ্চিম দিক থেকে হয়েছে বলে প্যানেল ধারণা করছে। দক্ষিণ থেকে হয়নি, ইয়েমেনি এলাকা থেকে ছুড়লে ওই দিক থেকেই সবাই প্রত্যাশা করবে,” প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।

হামলায় ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মতো ‘তুলনামূলকভাবে সংবেদনশীল অস্ত্র তৈরি ও আধুনিকায়ন ইয়েমেনে হয়েছে’ এমনটা বিশ্বাস না করার কথাও জানিয়েছেন জাতিসংঘের ওই স্বতন্ত্র তদন্ত কর্মকর্তারা।

“কিছু কিছু অস্ত্রের সঙ্গে ইরানে বানানো অস্ত্রের কৌশলগত মিল রয়েছে,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সৌদিতে হামলাটি কারা চালিয়েছে, তা নির্ণয়ের দায়িত্ব ইয়েমেনের নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণকারী এ তদন্ত দলের ছিল না বলেও জানিয়েছে রয়টার্স।

আবকাইক ও খুরাইসে ওই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বিশ্বের তেল সরবরাহ পাঁচ শতাংশেরও বেশি হ্রাস করে দিয়েছিল; বাড়িয়ে দিয়েছিল তেলের দাম। সৌদি আরব অবশ্য দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই ধ্বংসযজ্ঞ সামলে তেলের উৎপাদন আগের জায়গায় ফিরিয়ে এনেছিল বলে রিয়াদ জানিয়েছে।

১৪ সেপ্টেম্বরের হামলার কয়েকদিন পরেই জাতিসংঘের ইয়েমেন ও ইরান নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণকারী দলটি সৌদি আরব যায়; ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ তারা তাদের প্রতিবেদনটি জমা দিলেও চলতি মাসের শেষে বা ফেব্রুয়ারির আগে সেটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত হয়।

হামলার পরপরই সৌদি আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেইল আল-জুবায়ের জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত রিয়াদ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

সৌদি আরবের তেল শিল্পের কেন্দ্রস্থলে সেপ্টেম্বরের ওই হামলাটি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অনুমোদনে হয়েছিল বলে নভেম্বরে কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল রয়টার্স।

কোনো বেসামরিক বা মার্কিন নাগরিক ওই হামলায় আঘাত পাবে না- এমন কঠোর শর্তে খামেনি হামলায় সম্মতি দেন বলে চার ব্যক্তির বরাত দিয়ে ওই খবর জানানো হয়েছিল।

তবে হামলা সংক্রান্ত এ ভাষ্যটিও অস্বীকার করেছে ইরান।