ইরাকে মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইরাকে দুটি মার্কিন বিমান ঘাটিতে ডজনখানেক ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুঁড়ে কাসেম সোলেমানি হত্যার জবাব দিতে শুরু করেছে ইরান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2020, 02:56 AM
Updated : 8 Jan 2020, 08:50 AM

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে ইরবিল ও আইন আল আসাদে অন্তত দুটি মার্কিন স্থাপনা আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে পেন্টাগন।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ইরাকে মার্কিন স্থাপনায় হামলার ঘটনার বিষয়ে আমরা অবগত। প্রেসিডেন্টকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তিনি পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি টিমের সঙ্গে পরামর্শ করছেন।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর হতাহতের কোনো তথ্য দেয়নি। তবে তেহরান দাবি করেছে, তাদের ছোড়া ১৫টি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অন্তত ৮০ ‘মার্কিন সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে গত শুক্রবার বাগদাদ বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালিয়ে কুদস বাহিনীর কামান্ডার কাসেম সোলেমানিকে হত্যার বদলা নিতেই এ আক্রমণ।  

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, “'আমেরিকার সহযোগীদের আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি, যারা তাদের ঘাঁটি ওই সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীকে ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। যে জায়গা থেকেই ইরানের বিরুদ্ধে হামলা হোক না কেন, সেটা আমাদের টার্গেটে পরিণত হবে।”

যুক্তরাষ্ট্র ওই হামলার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের নতুন হামলার মুখোমুখি হতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয় বিবৃতিতে।। 

১৯৯৮ সাল থেকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ‘বিদেশি শাখা’ কুদস ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়ে আসা মেজর জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হত।

যুক্তরাষ্ট্র তাকে ‘সন্ত্রাসী’ ও মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করলেও নিজের দেশে সোলেমানি বীরের মর্যাদা পেয়ে আসছিলেন।

মঙ্গলবার ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কেরমানে সোলেমানির দাফন অনুষ্ঠানে লাখো মানুষের ঢল নামে। শোকার্ত জনতা সেখানে  স্লোগান দেয়- ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ট্রাম্প নিপাত যাক’।

সোলেমানিকে দাফনের কয়েক ঘণ্টা পর ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর আসে ইরানের সংবাদমাধ্যমে।

আল মায়াদীন টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, প্রথমে হামলা হয় আল-আসাদের ঘাঁটিতে। এর পরপরই ইরবিলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।

 

২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে বহুজাতিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ইরাকে ঘাঁটি গাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা। ২০০৭ সালে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়ে ধাপে ধাপে অধিকাংশকে ফিরিয়ে আনা হলেও এখনও ৫ হাজার সৈন্য রয়েছে।

নিজেদের শত্রুতা ভুলে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র এক হয়েছিল আইএসের বিরুদ্ধে। ইরানের আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন সেনাদের সঙ্গে মিলেই এই যুদ্ধে অংশ নেয়।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে সোলেমানি হত্যাকাণ্ডের পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। ওয়াশিংটন ও তেহরানের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের মধ্যে অনেকটা বেকায়দাতেই পড়েছে ইরাক। 

ইরানের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি বাগদাদ বিমানবন্দরে সোলেমানিকে হত্যার ঘটনার সমালোচনা করেছেন তীব্র ভাষায়। মার্কিন সেনাদের দেশ থেকে বের করে দিতে একটি প্রস্তাবও পাস হয়েছে ইরাকের পার্লামেন্টে।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এখন মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হলে তা হবে ইরাকের জন্য সবচেয়ে খারাপ বিষয়।