ইরানি জেনারেলকে হত্যা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াবে: রাশিয়া

ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর এলিট কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেমানি নিহত হওয়ার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।

>>দ্যনিউ ইয়র্ক টাইমস
Published : 3 Jan 2020, 11:40 AM
Updated : 3 Jan 2020, 01:49 PM

শুক্রবার ভোরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন (চালক বিহীন বিমান)হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ইরানের প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডার সোলেমানিকে।এরপরই রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়ার ওই সতর্কবার্তা দিয়েছে।

সোলেমানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে বড় ধরনের সংঘাতের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ মার্কিন হামলার ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ’ আখ্যা দিয়েছেন। এ ঘটনার ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ নেওয়ারও হুমকি এরই মধ্যে দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

ওদিকে, পেণ্টাগন সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য দিয়ে বলেছে, “ইরানের ভবিষ্যৎ হামলা পরিকল্পনা ঠেকাতেই হামলা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী তাদের স্বার্থ এবং জনগণকে রক্ষায় সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ  নিয়ে যাবে।”

বহু মার্কিন সেনা নিহতের ঘটনা এবং মধপ্রাচ্যে অনেক প্রাণহানির জন্যও পেণ্টাগন সোলেমানিকে দায়ী করেছে। ওদিকে, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণকে দুবৃর্ত্ত অভিযান আখ্যা দিয়ে এর সব পরিণতির জন্য তাদেরকেই দায়ী করে পাল্টা জবাবে দ্বিগুণ উদ্যমে জিহাদে অগ্রসর হওয়ার শপথ নিয়েছে।

ফলে সোলেমানি নিহতের ঘটনাটি কেবল ইরাকের জন্যই নয়, সামগ্রিক মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে। পুরো অঞ্চলে ঘনিয়ে আসতে চলেছে ছদ্মযুদ্ধের এক নতুন অধ্যায়।মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় সব দেশেই যে এ ঘটনার প্রভাব পড়বে তা একরকম নিশ্চিত।সবাই এখন ইরান কী করে তা দেখার অপেক্ষায় আছে।

ধীর পদক্ষেপে এগুচ্ছে ইরান:

ইরান পাল্টা পদক্ষেপে এখনই আগ্রাসী কিছু না করলেও ধীরে ধীরে কূটনৈতিক পন্থায় প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করছে। ইরানের রাজধানী তেহরানে এরই মধ্যে ডেকে পাঠানো হয়েছে সুইস রাষ্ট্রদূতকে। ইরানে আমেরিকান স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছে সুইস দূতাবাস।

১৯৯৭ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর দেশটিতে দূতাবাস বন্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন থেকে সেখানে সুইস দূতাবাসই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছে। সুইস দূত ডেকে পাঠানো ছাড়াও তেহরানে এ মুহূর্তে চলছে শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বৈঠক। পরবর্তীতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থির পরিস্থিতিতে উত্তেজনা আরো বাড়তে চলেছে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। মধ্যপ্রাচ্যে গত এক বছর ধরেই যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা করে আসছিলেন অনেকেই। তবে সব পক্ষই বলে আসছিল তারা যুদ্ধ এড়াতে চায়।

কিন্তু এবার মার্কিন হামলায় ইরানি জেনারেল নিহতের যে বিস্ফোরক ঘটনা ঘটল তা পুরোপুরি পাল্টে দিল মধ্যপ্রাচ্যের প্রেক্ষাপট। মধ্যপ্রাচ্যকে ঠেলে দিল পুরোপুরি একটি ভিন্ন এবং বিপজ্জনক সংকটের দিকে।

নতুন ইরানি কমান্ডার ইসমাইল ঘানি:

বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর এলিট কুদস ফোর্সের নিহত কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেমানির জায়গায় এরই মধ্যে তার উপপ্রধান কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল ঘানিকে নিয়োগ করেছে ইরান।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব প্রতিপত্তি সোলেমানির সময় যেমন ছিল এখন নতুন কমান্ডারের অধীনেও তা একই থাকবে বলে এক বিবৃতিতে ঘোষণা দিয়েছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

ওদিকে,সোলেমানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানের রাস্তায় এরই মধ্যে দানা বেঁধে উঠতে শুরু করেছে বিক্ষোভ। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিরুদ্ধে রাজধানী তেহরানের রাস্তায় নেমেছে লাখো মানুষ।

কারণ, জেনারেল সোলাইমানি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঘোর প্রতিপক্ষ হলেও ইরানিদের কাছে ছিলেন খুবই প্রিয়। কুদস ফোর্সের প্রধান হিসাবে ইরাক,সিরিয়া এবং ইয়েমেনে ইরানের বাড়তে থাকা সামরিক প্রভাবের কারিগর ছিলেন তিনি। প্রায় ২০ বছর কুদস ফোর্স এর নেতৃত্ব দিয়েছেন সোলেমানি।

সামরিক শক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা,মিত্রদেরকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা এবং ইরাকে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠীর একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করা ছাড়াও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী ভূমিকা ছিল সোলেমানির।তাকে হত্যা করা ইরানিদের কাছে যুদ্ধেরই সামিল এবং এর প্রতিশোধ না নিয়ে তারা ক্ষ্যান্ত হবে না।

পাল্টা আঘাত কোথায় হানতে পারে ইরান?

সোলেমানি হামলার পরিণতি কি হতে পারে তা এখনো বোঝা না গেলেও ইরান পাল্টা জবাবে কোথায় কোথায় আঘাত হানতে পারে তা কিছুটা আঁচ করা যায়। তাদের একটি সম্ভাব্য লক্ষ্যস্থল হতে পারে সিরিয়ায় ছোট মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো। সেখানে কোথাও কোথাও এ ঘাঁটিগুলো ইরাকি পপুলার মবিলাইজেশন ইউনিটের কয়েকমাইলের মধ্যেই অবস্থিত। সিরিয়া থেকে অনেক মার্কিন সেনা চলে গিয়ে সেখানে সেনা উপস্থিতি এমনিতেই কমে এসেছে।ফলে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র এখন সামরিক শক্তিতে অনেকটাই দুর্বল।

সিরিয়া ছাড়াও উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলো বিশেষ করে বাহরাইন,সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব ইরানের প্রতিশোধ হামলার শিকার হতে পারে।একই ঝুঁকিতে আছে কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ ঘাঁটি।

যদিও বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ইরানের ক্ষোভ যত গভীরই হোক,তারা প্রতিশোধ হিসেবে এখনই যুদ্ধ শুরু করবে বলে মনে হয় না। তবে তারা মার্কিন বিভিন্ন বাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক নানা পদক্ষেপ নিতে পারে।আর সেকারণেই সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কন্টিনজেন্টগুলো ইরানি হামলার শিকার হতে পারে।