অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল: হুমকির মুখে পালাচ্ছে হাজারো মানুষ

সামনের দিনগুলোতে দাবানল আরও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে কর্তৃপক্ষের এমন পূর্বাভাসের পর হাজার হাজার মানুষ অস্ট্রেলিয়ার বিস্তৃত ‘ট্যুরিস্ট লিভ জোন’ ছেড়ে পালাচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2020, 04:43 AM
Updated : 2 Jan 2020, 05:39 AM

দেশটিতে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দাবানল এরই মধ্যে ১৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; ধ্বংস করেছে ১২ শর বেশি বাড়িঘর।

ভিক্টোরিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) অঙ্গরাজ্যজুড়ে চলতি সপ্তাহের বিস্তৃত আগুনে ১৭ জনের খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এনএসডিব্লিউর দক্ষিণ উপকূলের বিস্তৃত এলাকার লোকজনকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একে বলা হচ্ছে, ওই অঞ্চলের ইতিহাসের ‘সবচেয়ে বড় স্থানান্তর কার্যক্রম’।

বৃহস্পতিবার সিডনি ও ক্যানাবেরায় ফেরার গাড়ির দীর্ঘ সারির চাপে মহাসড়কগুলোকে স্থবির হয়ে পড়তে দেখা গেছে।  স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বেতামেনস বে শহরের পেট্রল পাম্পগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ সারির উপস্থিতির কথা বলা হচ্ছে। দাবানলের অগ্রযাত্রা , নড়বড়ে বা উপড়ে পড়া গাছের কারণে অনেক সড়কই বন্ধ রাখা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি এখন আগের তুলনায় খানিকটা ভালো হলেও শনিবার থেকে দাবানলের বিস্তৃতি আরও বাড়তে পারে এবং তা প্রাণী ও ঘরবাড়ির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

“যদি আপনি ছুটি কাটাতে এসে থাকেন, আপনাকে অবশ্যই শনিবারের আগে এলাকা ছাড়তে হবে,” উপকূলের ২৬০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকার বাসিন্দা ও পর্যটকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া সতর্কবার্তায় বলেছে নিউ সাউথ ওয়েলসের রুরাল ফায়ার সার্ভিস।

কয়েকশ’ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর অঙ্গরাজ্যটির সরকার নববর্ষের প্রাক্কালে পরিস্থিতি ‘খুবই খারাপ’ হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছিল।

এনএসডব্লিউর পরিবহন মন্ত্রী অ্যান্ড্রু কনস্ট্যান্স ধোঁয়ার মধ্যে ধীরে গাড়ি চালাতে চালকদের পরামর্শ দিয়েছেন। এবিসিকে দেওয়া এক আবেগঘন সাক্ষাৎকারে কনস্ট্যান্স দাবানলে নিজের বন্ধুর বাড়ি হারানোর কথাও জানান।

কেবল চলতি সপ্তাহের আগুনেই এনএসডব্লিউর অন্তত ৩৮১টি ও ভিক্টোরিয়ার ৪৩টি বাড়িঘর পুড়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা তাদের।

ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার দুটি অঞ্চলে বৃহস্পতিবার দাবানল ভয়াবহ আকার ধারণ করে; শুক্রবার সাউথ অস্ট্রেলিয়ার একাংশেও এ পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

আগুন এরই মধ্যে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার একটি মহাসড়কের ৩৩০ কিলোমিটারের মতো অংশ বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেছে।

ধোঁয়ার কারণে বৃহস্পতিবার ক্যানাবেরার বাতাসের মান বিশ্বের অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে সবচেয়ে খারাপ ছিল বলে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজুয়াল জানিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার ডাক বিভাগ ‘পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত’ সব ধরনের ডাক সরবরাহ স্থগিত ঘোষণা করেছে।

মঙ্গলবার ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের মালাকোটার যে বাসিন্দা ও পর্যটকরা আগুনের হাত থেকে বাঁচতে সৈকতের দিকে ছুটেছিলেন, তাদের সরিয়ে নিতে নৌবাহিনীর নৌকা পাঠানো হচ্ছে। বুধবার পুলিশের কয়েকটি নৌকা সেখানে এক দশমিক ৬ টন পানি, খাবার, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে যায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।  

পরিস্থিতির কারণে ভিক্টোরিয়া ও এনএসডব্লিউর দুর্গম এলাকার অনেক স্থানে দমকল বিভাগ নাও পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন মানুষজনকে আতঙ্কিত না হয়ে, জরুরি বিভাগের কর্মীদের ওপর আস্থা রাখতে অনুরোধ করেছেন।

“অনেকের মধ্যেই যে আতঙ্ক ও হতাশা আছে, তা বুঝতে পারছি। কিন্তু এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পদ্ধতিগত ও সুসমন্বিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবচেয়ে ভালোভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব, যা আজ এখন আমরা দেখছি,” সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি।