পরিবেশযুদ্ধে গ্রেটা খুশি হলেও উদ্বিগ্ন বাবা

সুইডিশ এক কিশোরী পরিবেশযোদ্ধা, যার ডাকে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে জড়ো হয়েছে বিভিন্ন দেশের নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। এবছর নোবেল পেলে যে হতে পারত ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী- সেই গ্রেটা থার্নবার্গকে নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন তার বাবা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2019, 01:16 PM
Updated : 30 Dec 2019, 02:11 PM

বলেছেন কিভাবে একজন পরিবেশকর্মী হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠেছেন গ্রেটা,তার মুখে ফুটেছে হাসি। আর এখন গ্রেটা যে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে তার বিড়ম্বনাই বা সে সামলাবে কী করে- তা নিয়ে বাবা হিসাবে নিজের উদ্বেগের কথা।

বিবিসি’তে এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন গ্রেটা থানবার্গের বাবা সয়ান্তে থানবার্গ।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মেয়ের সামনের সারিতে অবস্থান নেওয়াটা একেবারেই ভাল ব্যাপার নয় বলেই প্রথমটায় ভেবেছিলেন গ্রেটার বাবা। গ্রেটার আন্দোলন বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের মাঝে উদ্দীপনা জাগালেও তার বাবা মোটেই মেয়ের স্কুল বাদ দিয়ে এসব করার পক্ষপাতি ছিলেন না।

কিন্তু সয়ান্তে থানবার্গের কথায়,পরিবেশ আন্দোলন কর্মী হয়ে ওঠার পর থেকেই গ্রেটা অনেক অনেক খুশী হয়ে উঠেছে।কিন্তু খ্যাতি পেলেই যে কেবল ভালবাসা জুটবে তা নয়, যে প্রতিকূলতা এবং মিডিয়াতে যে নেতিবাচক মন্তব্য বা কটাক্ষের মুখোমুখি গ্রেটাকে প্রতিনিয়ত হতে হচ্ছে বা হবে তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

গ্রেটা থানবার্গ কিভাবে বিষণ্নতার সঙ্গে লড়েছেন সেকথা সবিস্তারে উঠে এসেছে তার বাবার কথায়।সেকথা বর্ণনা করতে গিয়ে সয়ান্তে থানবার্গ বলেন,স্কুল বাদ দিয়ে ধর্মঘট শুরুর আগে তার মেয়ে তিন চার বছর ধরে বিষন্নতায় ভুগেছে।তার কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, স্কুলেও যেত না। এক পর্যায়ে খাওয়াদাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিল।আর বাবা-মা হয়ে মেয়ের এ অবস্থা চেয়ে চেয়ে দেখা তাদের জন্য হয়ে উঠেছিল এক দুঃস্বপ্ন।

মেয়েকে এ অবস্থা থেকে বের করে আনতে গ্রেটা এবং তার বোনের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে শুরু করেন তাদের বাবা। গ্রেটার মাও তখন বাইরের কাজ কমিয়ে ঘরে বেশি সময় দিতে শুরু করেন।গ্রেটাকে ডাক্তারের কাছেও নিতে হয়েছিল।চার বছর আগে তার এক ধরনের অটিজম ধরা পড়েছিল।

পরের কয়েকবছরে পরিবারে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা এবং গবেষণা থেকে গ্রেটা এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং বিষয়টি তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য বাবা মার বিরুদ্ধেই ভন্ডামির অভিযোগ করতে শুরু করে গ্রেটা, তোলে নানা প্রশ্নও।গ্রেটার ভাবাবেগের সঙ্গে সঙ্গে তার বাবা-মা আরো বেশি পরিবেশবান্ধব আচরণ শুরু করলে গ্রেটা আরো উৎসাহী হয়ে ওঠে।

আর গ্রেটার উৎসাহ দেখে বাবা-মাও তার পাশে থেকে সহায়তা করতে শুরু করেন। গ্রেটার বাবার কথায়, তিনি এসবকিছুই করেছেন পরিবেশ বাঁচাতে নয় বরং মেয়েকে বাঁচাতে। তাকে খুশী রাখতে।এরপর থেকেই গ্রেটার মধ্যে পরিবর্তন আসে এবং তার কাজে সে খুব খুশি হয়ে ওঠে বলে জানান তার বাবা।

তিনি বলেন, “আপনারা হয়ত বলবেন সে (গ্রেটা) এখন আর সাধারণ নয়, সে বিশেষ কেউ। সে খুবই বিখ্যাত। কিন্তু আমার কাছে সে এখন অন্য শিশুদের মতোই সাধারণ- অন্যরা যেভাবে সব কাজ করে সেও এখন তাদের মত করেই সবকিছু করতে পারে। সে এখন অনেক হাসে, নাচানাচি করে এবং আমরা একসঙ্গে অরেক মজাও করি। সে খুবই ভাল একটা অবস্থানে আছে।”

তবে স্কুল বাদ দিয়ে গ্রেটার আন্দোলনের ছবি অনলাইনে ভাইরাল হওয়ার পর পরিবেশ বাঁচাতে জীবনধারা পরিবর্তনের বিরোধীদের কাছ থেকে গ্রেটাকে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েতে হয়েছে। এ বিষয়টি ছাড়াও ভুয়া খবর ছড়ানো কিংবা মানুষজনের অতিরঞ্জিত কিছু বলা, নেতিবাচক মন্তব্য- যা কিছুই ঘৃণা উস্কে দেয়- সেসব নিয়েও উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন গ্রেটার বাবা।যদিও তার “মেয়ে সমালোচনা ভালভাবেই সামলাচ্ছে” বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্বব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের কাছে দাবি জানিয়ে গ্রেটা এ বছর নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। টাইম ম্যাগাজিনও এবছর গ্রেটাকে পার্সন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত করেছে।

এরপরই বিবিসি রেডিও ফোরস টুডে’র পক্ষ থেকে সুইডেনে গ্রেটা ও তার বাবার সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়। যেটি সম্প্রচারের দিন ছিল সোমবার। একই প্রোগ্রামেই গ্রেটার সঙ্গে এক প্রবীণ পরিবেশবিদের সাক্ষাৎকারে দুইজনের কথপোকথন দেখানো হয় এবং ওই পরিবেশবিদ গ্রেটার প্রশংসাও করেন।