খাশুগজি হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ডেও ঘোচেনি প্রশ্ন

তুরস্কে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশুগজির খুনের মামলায় অভিযুক্ত পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও অপর তিন জনকে কারাদণ্ড দিয়েছে সৌদি আরবের আদালত। কিন্তু এ রায়ের পরও বিচার নিয়ে প্রশ্ন এখনো ঘুচেনি।

>>রয়টার্স
Published : 24 Dec 2019, 04:17 PM
Updated : 24 Dec 2019, 06:04 PM

কয়েকটি বিষয় নিয়ে ধুম্রজালের কারণে প্রশ্ন উঠছে,আসল অপরাধীরাই সাজা পাচ্ছে? নাকি নিম্নস্তরের গুপ্তচরদেরকে সাজা দিয়ে দাগী অপরাধীদের আড়াল করছে সৌদি আরব?

সৌদি  আরবের রাজধানী রিয়াদের আদালত সোমবার ওই রায় ঘোষণা করলেও অপরাধীদের নাম-পরিচয় কিছুই প্রকাশ করেনি। এ মামলায় মোট ১১ জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল।রিয়াদে তাদের বিচার প্রক্রিয়া চলেছে গোপনে।

সোমবার সৌদি আরবের সরকারি কৌঁসুলি শালান আল শালান অভিযুক্ত পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং তিন জনের ২৪ বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। আর বাকী তিনজন দোষী সাব্যস্ত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালত খারিজ করে দিয়েছে বলে জানান তিনি।

গতবছর ২ অক্টোবর দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন খাশুগজি। সেখান থেকে তিনি আর বের হননি। পরে জানা যায়,তাকে কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়েছে।

তার মৃতদেহ টুকরা টুকরা করে কনস্যুলেট ভবন থেকে সরিয়ে ফেলা হয় বলে খবর হয়েছে। খাশুগজির দেহাবশেষ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। খাশুগজি যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতেন এবং তিনি সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচক ছিলেন।

ওই খুনের তদন্তে গ্রেপ্তার হয় ২১ জন এবং ১০ জনকে কেবল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন কৌঁসুলি শালান।

রিয়াদের অপরাধ আদালত সরাসরি খুনের ঘটনায় অংশ নেওয়া এবং হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। আরো তিনজনকে এই খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া এবং আইন ভঙ্গের কারণে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে মোট ২৪ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে।

তবে শালান বলছেন, খাশুগজির সঙ্গে অভিযুক্তদের পূর্বশত্রুতা ছিল এমন কোনো প্রমাণ তদন্তে পাওয়া যায়নি।

খাশুগজি হত্যাকান্ডে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড়ে যুবরাজ মোহাম্মদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও পশ্চিমা সরকারগুলো জানিয়েছিল, এই খুনের আদেশ স্বয়ং যুবরাজ মোহাম্মদ দিয়েছেন বলে তাদের বিশ্বাস।কিন্তু এ ঘটনায় যুবরাজের কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি করেন সৌদি কর্মকর্তারা।

রিয়াদ আদালতের সদ্য দেওয়া রায়েও সৌদি আরবের ওই যুক্তিরই প্রতিফলন ঘটেছে যে, এ খুনের নিরদেশ রাজদরবার থেকে দেওয়া হয়নি বরং মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা এজেন্টদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ফলই এ হত্যাকাণ্ড।

কাজেই, এ রায়ের ফলে যারা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে তাদের সাজা কার্যকর হওয়া এবং যারা হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল তারা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা যারা এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেছিলেন তারা এই রায়কে ‘প্রহসন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

তুরস্কের করমকরতারা খাশুগজি হত্যাকাণ্ডের সময় ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে যারা ছিল তাদের চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু ওই চিহ্নিত ব্যক্তিরাই সাজা পেল কিনা সেটিও স্পষ্ট নয়। যেহেতু সাজাপ্রাপ্তদের নাম জানানো হয়নি। তবে যারা সাজা পায়নি তাদের নাম সৌদি সরকার জানিয়েছে।

তারা হচ্ছেন, সৌদি উপপ্রধান গোয়েন্দা আহমেদ আল আসিরি। যিনি খাশুগজি অভিযানের বিষয়টি দেখভাল করেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলেন সৌদি করমকরতারা। তিনি খালাস পেয়েছেন।আরেকজন হচ্ছেন, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসাল মোহাম্মদ ওতাইবি। তিনিও খালাস পেয়েছেন। অপর আরেকজন হচ্ছেন, সাবেক ঊর্ধবতন রাজউপদেষ্টা সউদ-আল -কাহতানি। প্রমাণের অভাবে তার বিচারই করা হয়নি বলে জানিয়েছে কৌসুলির কারযালয়।

খাশুগজি হত্যাকান্ডে ভূমিকা থাকার কারণে আল ওতাইবি এবং আল কাহতানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। আর  তারাই এখন ছাড় পেয়ে গেলেন।

তাছাড়া, জাতিসংঘের এক বিশেষ তদন্তকারী অফিসারও নিজস্বভাবে খাশুগজি হত্যার ঘটনা তদন্ত করে বলেছিলেন, অভিযুক্তরা সৌদি গুপ্তচর।তারা যা করার ঊর্ধতন কর্মকরতাদের নির্দেশে করেছিলেন। যে নির্দেশ অমান্য করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে আসল অপরাধীরা হয়ত আড়ালেই রয়ে যাচ্ছেন।