হাইতিতে ‘শত শত শিশুর জন্ম দিয়ে ফেলে গেছে’ শান্তিরক্ষীরা

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের যৌন নির্যাতন ও অন্যান্য অপকর্মের কথা জাতিসংঘ স্বীকার করে নিলেও সংকটের বিস্তার যে আরও গভীরে, তা নতুন এক গবেষণায় তা উঠে এসেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2019, 10:55 AM
Updated : 19 Dec 2019, 12:44 PM

দুই বিশেষজ্ঞর করা নতুন এ গবেষণায় বলা হয়ে হয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হাইতিতে থাকা শান্তিরক্ষীদের কাছে ‘এমনকি ১১ বছর বয়সী মেয়েরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে, গর্ভবতী হয়েছে’; এদের মধ্যে অনেক নারীকে পরের দিকে ‘একাই সন্তানকে বড় করার মতো ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।’

শান্তিরক্ষীদের ঘাঁটির কাছাকাছি এলাকায় থাকা হাইতির আড়াই হাজার নাগরিকের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে হওয়া এ গবেষণায় দেশটিতে দায়িত্ব পালন করা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের কিছু সামরিক-বেসামরিক সদস্যের অপকর্মের চিত্র উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এক একাডেমিক ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।

হাইতিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন ফরাসী ভাষায় সংক্ষিপ্ত আকারে ‘মিনুস্তা’ নামে পরিচিত। ‘ফেলে যাওয়া সন্তানরা’ সেখানে এখন ‘ছোট মিনুস্তা’ নামে পরিচিত, গবেষণায় বলা হয়েছে।

“আপনার হাতে কিছু পয়সা দিয়ে তারা আপনার শরীরে বাচ্চা দিয়ে গেল,” হাইতির এক নাগরিক গবেষকদের এমনটাই বলেছেন বলে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।

হাইতির পাশাপাশি মোজাম্বিক, বসনিয়া, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে থাকা শান্তিরক্ষীদের যৌন নির্যাতনের যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সাবিনা লি ও অন্টারিওর কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল সায়েন্টিস্ট সুসান বার্টেলসের এ গবেষণাটি তার মধ্যে সাম্প্রতিকতম।

গবেষকদের সাক্ষাৎকার দেওয়া ২৬৫ জন জানিয়েছেন, ১৩টি দেশের সামরিক-বেসামরিক সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করতে হাইতিতে এলেও যেসব দেশের নাগরিকরা হাইতির প্রাপ্তবয়স্ক-অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের গর্ভবতী করেছে তাদের বেশিরভাগই উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের।

সাক্ষাৎকারে কিছু নারী তাদের ওপর জাতিসংঘ কর্মীদের যৌন নির্যাতনের কথা জানালেও অনেকেই সামান্য অর্থ কিংবা খাবারের বিনিময়ে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

নারীদের সঙ্গে ‘সম্মতিসূচক সম্পর্কে’ জড়ানো শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা হাইতি ছাড়ার পরই ওই নারী ও তাদের আত্মীয়রা সেসব সম্পর্কের কথা খুলে বলছে।

“আমি তার (শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য) সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি। সে আমাকে জানায়, সে আমাকে ভালোবাসে; এরপর আমি তার সঙ্গে মেলামেশা শুরু করি,” কয়েক বছর আগে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরত এক সদস্যর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর স্মৃতি হাতড়ে গবেষকদের জানান হাইতির এক নারী।

“তিন মাস পর আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি; সেপ্টেম্বরে তাকে তার দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়,” বলেন তিনি। ফি দিতে না পারায় দরিদ্র এ নারী এখন তার সন্তানকে স্কুলেই পাঠাতে পারছেন না।

গবেষকদলের অন্যতম সদস্য লি বলছেন, শান্তিরক্ষী মিশনের সদস্য রাষ্ট্রগুলোরই এখন এই মা ও তার সন্তানদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। 

“এটা জাতিসংঘের সমস্যা নয়। এটি ব্রাজিলের সেনাবাহিনী কিংবা উরুগুয়ে সেনাবাহিনীর সমস্যা। জাতিসংঘও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কোনো উপায় বের করতে পারেনি,” বলেছেন বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক।