আনবিক বোমায় টিকে থাকা ভবন ভাঙার পরিকল্পনা, হিরোশিমাবাসীর আপত্তি

জাপানের হিরোশিমা শহর কর্তৃপক্ষ সাড়ে সাত দশক আগের আনবিক বোমার আঘাত সহ্য করে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি ভবন ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করলেও স্থানীয়রা এ ভবনদুটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2019, 11:00 AM
Updated : 16 Dec 2019, 11:00 AM

১৯১৩ সালে নির্মিত এ ভবনগুলো প্রথমে সামরিক বাহিনীর কাপড়ের কারখানা এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আবাসিক হল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওই বোমা হামলার পরপরই ভবনদুটিকে কিছু সময়ের জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

“পারমাণবিক অস্ত্র বিলুপ্তির প্রচারে এ স্থাপনাগুলো ব্যবহার হতে পারে,” বলেছেন হিরোশিমার ওই বোমায় বেঁচে যাওয়া এক জাপানি।

মার্কিন বোমারু বিমান বি-২৯ থেকে ফেলা ‘লিটল বয়’ তাৎক্ষণিকভাবেই ৮০ হাজার লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, গুরুতর আহত করেছিল আরও ৩৫ হাজার বাসিন্দাকে।

আনবিক বোমাটি অধিকাংশ শহরকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেও কিছু ভবনকে টলাতে পারেনি। বোমা পড়ার স্থান ‘গ্রাউন্ড জিরো’ থেকে আশপাশের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের বেশ কিছু ভবনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। গত বছর পর্যন্ত এ রকম ৮৫টি ভবনের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো নির্মিত হয়েছিল ১৯৪৫ সালের অগাস্টের আগে। 

হিরোশিমা কর্তৃপক্ষ এখন যে দুটি ভবন ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করছে সেগুলো নির্মিত হয়েছিল শক্তিশালী কংক্রিটে; আনবিক বোমা ভবনটির ধাতব জানালা এবং দরজার যে সামান্য ক্ষতি করেছে, তা এখনও দৃশ্যমান।

শক্তিশালী যে কোনো ভূমিকম্পে স্থাপনা দুটি ধসে পড়তে পারে- ২০১৭ সালের এক পরীক্ষায় এমনটি ধরা পড়ার পর হিরোশিমা শহর কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবাহী এ দুই ভবন ২০২২ সালের মধ্যে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।

ভবন দুটি ভাঙা হলেও একই স্থানে অবস্থিত অপর একটি ভবন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়; দেয়াল ও ছাদ সংস্কার করে ওই ভবনটিকে ভূমিকম্প প্রতিরোধের উপযোগী করে বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। 

ভেঙে ফেলার অপেক্ষায় থাকা দুই ভবনের একটিতে ১৯৪৫ সালের বোমা হামলার সময়ই ছিলেন ইয়াও নাকানিশি। ৮৯ বছরের এই বৃদ্ধ এখন ভবনদুটি ভাঙার পরিকল্পনার বিরোধিতা করা স্থানীয়দের একটি সংগঠনের প্রধান।

“মর্মান্তিক ওই ঘটনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে ভবনদুটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে আমরা কোনোভাবেই সেগুলো ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা মেনে নিতে পারি না; আমরা দৃঢ়ভাবে এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করছি,” সংবাদপত্র মাইনিচিকে এমনটাই বলেছেন নাকানিশি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ভবনদুটি ব্যবহৃত না হলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সেগুলো পরিদর্শনে যাওয়া যায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

“খুবই মূল্যবান ভবন; এগুলো আমাদেরকে আনবিক বোমার ভয়াবহতার কথা বলছে। সরাসরি দেখে আমার মধ্যে এমন অনুভূতি হয়েছে যে আমি চাই এ ধরনের সব ভবনগুলোই সংরক্ষণ করা হোক,” হিরোশিমার সংবাদমাধ্যম ইয়োমিউরিকে এমনটিই বলেছেন ভবনদুটি দেখতে যাওয়া ৬৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি।