ঝড় পেরিয়ে বন্দরের আলো দেখছে ব্রেক্সিট

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিরবাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন খুবই সাধারণ এক স্লোগানে। আর তা হচ্ছে, ‘ব্রেক্সিট সম্পন্ন কর’(গেট ব্রেক্সিট ডান)। আর এখন নিরবাচনে জনসনের কনজারভেটিভ দল যে বড় জয় পাচ্ছে তাতে এটি স্পষ্ট যে, ব্রেক্সিটের পক্ষেই সমর্থনের বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়েছে।

>>রয়টার্স
Published : 13 Dec 2019, 08:48 AM
Updated : 13 Dec 2019, 10:50 AM

পারলামেন্টে ব্রেক্সিট নিয়ে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় হতাশ হয়ে পড়া ব্রিটেনবাসী এ জট কাটিয়ে দেশকে জানুয়ারির মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের করে আনার (ব্রেক্সিট) পক্ষে জনসনকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা কোনো যদি বা কিন্তুরও অবকাশ রাখেনি- এমনটিই দেখা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত পাওয়া ভোটের ফলে।

তাই ব্রেক্সিট এখন ঝড় পেরিয়ে বন্দরের আলো দেখছে। জনসন ক্ষমতায় ফিরলেই ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ হওয়া এখন কয়েক সপ্তাহের ব্যাপার মাত্র।

পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এবং এমপিদের বিরোধিতার কারণে এ পর্যন্ত ব্রেক্সিট কার্যকর করতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী জনসন আগাম নির্বাচন ডেকেছিলেন। এতে কাজও হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই জনসনের দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার আভাস নিরভুল বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। তার মানে জনসন খুব দ্রুতই ইইউ এর সঙ্গে করা তার ব্রেক্সিট চুক্তি পারলামেন্টে পাস করিয়ে নিতে পারবেন।

সেটি খুবই আশাব্যাঞ্জক ব্যাপার। তবে হতাশা যে একেবারে দূর হয়ে গেল তাও নয়। কারণ, ইইউ থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে এলেও অর্থাৎ, ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলেও এটি কেবল একটি প্রক্রিয়ার সূচনা মাত্র। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে যুক্তরাজ্যকে পাড়ি দিতে হবে আরো দীর্ঘ পথ। বাস্তবিকভাবে বলতে গেলে, জনসনের ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকর করাটা কয়েক বছরের একটি লম্বা প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ব্লক হয়ে ওঠা ইইউ’য়ে যুক্তরাজ্য প্রায় অরধ শতাব্দী ধরে আছে। সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানেই জনসনের সামনে থাকবে নতুন নতুন আন্তর্জাতিক চুক্তি করার দুরূহ কাজ।

বিশ্বে অর্থনৈতিক দিক থেকে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখা এবং দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করার চ্যালেঞ্জও তাকে মোকাবেলা করতে হবে। তার মানে ব্রেক্সিট শেষ হওয়া অনেক দূরের পথ।

যুক্তরাজ্যকে ১১ মাসের মধ্যেই ইইউ এর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার অসাধ্য সাধন করতে হবে এবং পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আরেকটি বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। এর ওপরই নিরভর করবে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ।

প্রধানমন্ত্রী জনসনের কনজারভেটিভ দল তাদের নিরবাচনী ইশতেহারে এত গভীরের এ বিষয়গুলো তুলে ধরেনি। একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে যেখানে বছরের পর বছর লেগে যায় সেটি জনসন কিভাবে মাত্র ১১ মাসে করবেন সে পরিকল্পনাও দেওয়া হয়নি। প্রচার চালানো হয়েছে হালকার ওপর দিয়ে। যার ফলে এখন ৩১ জানুয়ারিতে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসতে পারার আশা জেগেছে।

কিন্তু ওই দিনটির পর থেকেই যুক্তরাজ্যের রূপান্তরকাল শুরু হবে। সে সময়ে যুক্তরাজ্যকে আলোচনার মধ্য দিয়ে ২৭ টি ইইউ রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক ঠিক করে নিতে হবে। এখনকার বিধিমালার আওতায় এ প্রক্রিয়া চলতে পারে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কনজারভেটিভ দল এই রূপান্তরের জন্য ২০২০ সালের বেশি সময় না লাগানোর প্রতিশ্রতি দিয়েছে নিরবাচনে।

যদিও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এলে জনসন এ প্রক্রিয়ার জন্য ২০২০ সালের বেশি সময়ও নিতে পারবেন। সে ক্ষমতা তার থাকবে। এখন জনসন তার নতুন রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়ে কি করেন সেটিই দেখার বিষয়।