মিয়ানমারকে বিশ্বাস করার কারণ নেই: গাম্বিয়া

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে যুক্তিতর্ক শুনানিতে গাম্বিয়া বলেছে, রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস নির্যাতনের জন্য দায়ী সেনাদের বিচার ও সহিংসতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের উপর আস্থা রাখা যায় না।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2019, 12:14 PM
Updated : 12 Dec 2019, 06:01 PM

নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগের এই আদালতে গণহত্যার মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার দেশটির পক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী একথা বলেন। 

১৯৪৮ সালের জেনেভা কনভেনশনের অধীনে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার করা এই মামলায় বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ দিনে শুনানি ছিল।

দেশটির প্রধান কৌঁসুলি পল রিখলার মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির আগ পর্যন্ত বিচারকদের কাছে বারবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাময়িক পদক্ষেপ দাবি করেন।

তিনি বলেন, শুনানির সময় মিয়ানমার এমনকি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ বা ২০১৭ সালের সাঁড়াশি অভিযানের পর রোহিঙ্গাদের ব্যাপকভাবে দেশান্তরের অভিযোগ অস্বীকার করার চেষ্টা পর্যন্ত করেনি।

অন্যায় কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সেনা সদস্যদের বিচারে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে মিয়ানমারের দেওয়া ‘বিবৃতি বিশ্বাসযোগ্য নয়’ নয় বলে মন্তব্য তিনি মন্তব্য করেন।

১৭ সদস্যের বিচারকের প্যানেলের উদ্দেশ্যে এই আইনজীবী বলেন, “রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর দায়ে তাতমাদাওকে (মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর আনুষ্ঠানিক নাম) বিচারের মুখোমুখি করা হবে- এটা কীভাবে আশা করতে পারে কেউ, যখন সেনাবাহিনী প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ ছয় শীর্ষ জেনারেলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গণহত্যার অভিযোগ তুলে তাদের ফৌজদারি বিচারের সুপারিশ করেছে।”   

গণহারে হত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে রেহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি কিংবা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দেওয়া যে ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে সেনা অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল তা পরের বছর জাতিসংঘের তদন্তকারীদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল।

দুই বছর আগে সেনা বাহিনীর ওই সাঁড়াশি অভিযানের পর প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। অন্তত ১০ হাজার মানুষ নিহত হয় বলে তদন্তকারীদের ধারণা।

মঙ্গলবার আদালতে শুনানির প্রথম দিনে জাতিসংঘের ওই তদন্ত প্রতিবেদন থেকে সচিত্র প্রমাণ তুলে ধরে গাম্বিয়ার কৌঁসুলিদের দল।

বিবাদী পক্ষের ভাষ্য

বুধবার আদালতে গণহত্যার অভিযোগ খণ্ডন করে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি যেসব কথা বলেছেন, তার মধ্যে নতুন কিছু ছিল না। এতদিন ধরে মিয়ানমার সেগুলোই বলে আসছে।

শান্তিতে নোবেলজয়ী এই আইনজীবী বলেন, ২০১৭ সালের অগাস্টে স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী পুলিশের উপর হামলা চালানোর পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ওই অভিযান চালিয়েছিল, কোনো জাতি বা ধর্মীয় সম্প্রদায় তার লক্ষ্য ছিল না।

আন্তর্জাতিক আদালতের এই বিচারের এখতিয়ার নেই যুক্তি তুলে ধরে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর বিচারকদের বলেন, ‘সেনা সদস্য বা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ থাকলে মিয়ানমার তা সক্রিয়ভাবে তদন্তের পর দায়ীদের বিচার ও শাস্তি দিয়ে থাকে’।

তার ভাষ্যে ‘অভ্যন্তরীণ সংঘাতের’ ওই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে থাকলেও সেগুলো গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে না এবং ১৯৪৮ সালের কনভেনশনের অধীনে তার বিচার করা যায় না।

সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমক্রেটিক পার্টির মুখপাত্র মিয়ো নায়ুন্ত রয়টার্সকে বলেন, ‘জটিল রাখাইন ইস্যু নিয়ে খুব বিশদ ও সুনির্দিষ্টভাবে’ মিয়ানমারের পক্ষে মামলা উপস্থাপন করেছেন।

বৃহস্পতিবার আদালত ভবন দ্য হেগের পিস প্যালেসের বাইরে দুই পক্ষের বিক্ষোভকারীরার জড়ো হন। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়ার সময় তাদের একদল ‘মা সু, সুস্থ থাকো’ এবং রোহিঙ্গাদের পক্ষে আরেক দল ‘অং সান সু চি, শেইম অন ইউ’ স্লোগান দিতে থাকে।

অভিযোগ খণ্ডন করে চূড়ান্ত বক্তব্য দেওয়ার জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় পাবেন সু চি ও তার দল। সাময়িক পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে আদালত কোনো দিন ঠিক করেননি, তবে সেটা জানুয়ারিতে হতে পারে।

এই আদালতের সিদ্ধান্ত মানার আইনি বাধ্যবাধকতা আছে এবং এটার বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। যদিও সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার কোনো ক্ষমতা নেই আদালতের এবং অনেক এর সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার বা মানতে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

সাময়িক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত আসার পর পূর্ণাঙ্গ মামলা কয়েক বছর ধরে চলতে পারে।

বুদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে সু চির সমর্থকরা ইয়াঙ্গুনের একটি পার্ক থেকে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেখানে আদালতের শুনানি বড় স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছিল।

অন্যদিকে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা মুসলিমরা প্রার্থণা করছিলেন যেন মামলা সফল হয়।

দুই বছর আগে পালিয়ে আসা ৪১ বছর হাশমত আলী বলেন, “অং সান সু চি বড় মিথ্যাবাদী। আমরা তাকে ঘৃণা করি।”