নাগরিকত্ব বিল রাজ্যসভায়ও পাস

ভারতে লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও পাশ হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)। ১২৫ ভোট পড়েছে বিলের পক্ষে। বিপক্ষে পড়েছে ১০৫ ভোট। রাষ্ট্রপতি সই করলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2019, 06:36 PM
Updated : 11 Dec 2019, 07:19 PM

বিলটি নিয়ে রাজ্যসভাতেও তুমুল বিতর্ক হয়েছে। সোমবার পারলামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ছাড়পত্র পাওয়ার পর বুধবারই উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করেছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও বিল পাশ করানোর ক্ষেত্রে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি শাসক দলকে। টানা ৯ ঘণ্টা আলোচনার পর ভোটাভুটিতে ২০ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাশ হয়েছে।

এ জয় পাওয়ার পরই টুইটারে উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার কথায় দেশের জন্য এ এক যুগান্তকরী দিন। ওদিকে, অমিত শাহ বলেন, এ বিল পাশের মধ্য দিয়ে কয়েক কোটি বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে আনা হয়েছে বিলটি। হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা আছে বিলে। বিলটিতে মুসলিমরা না থাকায় এটি সাম্প্রদায়িক বলে তীব্র সমালোচনা হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভাতে দাবি করেছিলেন, 'নাগরিকত্ব বিল মুসলিম বিরোধী নয়।' তারপরও বিলটি নিয়ে তুমুল হৈ চৈ হয়।

 রাজ্যসভাতেও নাগরিকত্ব বিল সম্পর্কে অমিত শাহ বলেছেন, “এ বিলের মাধ্যমে শরণার্থীরা তাদের অধিকার পাবেন। প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা শরণার্থীরা আশ্রয় পাবেন। কোনো মুসলিমের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার সংবিধান মেনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেবে।”

ওদিকে, বিরোধীদল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ভারতীয় জনতা পারটিকে(বিজেপি)কে আক্রমণ করে আনন্দ শর্মা বলেন, বিলটি ভারতের আত্মায় ঘা। বিজেপি কেন বিলটি নিয়ে তাড়াহুড়ো করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন করেন তিনি।

ভারতীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও বুধবার এক টুইটে অভিযোগ করে বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা সিএবি-র মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের নিজস্ব পরিচিতিকে ধুয়ে-মুছে ফেলার চেষ্টা করছে সরকার। বিলের প্রতিবাদে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে সামিল মানুষের পাশে আছেন বলেও জানান রাহুল।

এরই মধ্যে নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে ডাকা বন্‌ধে উত্তাল হয়েছে ত্রিপুরা ও আসাম। পরিস্থিতি সামলাতে কয়েকটি এলাকায় সেনা নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

দুই কলাম সেনা নামানো হয়েছে ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর ও মনু এলাকায় এবং আরো দুই কলাম সেনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আসামের বঙ্গাইগাঁও ও ডিব্রুগড়ে (এক কলামে ৭০ জন জওয়ান এবং এক বা দু’জন কর্মকর্তা থাকেন)।

ডিব্রুগড়ের লাহোওয়ালে সেনা নামানো হয়েছে। অতিরিক্ত বাহিনী হিসাবে ডিব্রুগড়ে পুলিশের একটি কুইক রেসপঞ্জ টিমও মোতায়েন করা হয়েছে। আর উত্তর-পূর্ব ভারত জুড়ে মোতায়েন হয়েছে ৫ হাজার আধাসামরিক সেনা।

সংসদে বিলটি পাশের সময়ই রাজ্য দুটির একাধিক বাস ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ত্রিপুরায় গুলি চালিয়েছে পুলিশ। গুয়াহাটিতে কারফিউ জারি হয়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। বহু জায়গায় বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবা।