বুধবার বিলটি পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তারপর লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও এ বিল নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। এর আগে সোমবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অনায়াসে পাশ হয়েছে বিলটি। এবার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তা পাশ করানোর চেষ্টা চলছে।
এরই মধ্যে এ বিলের প্রতিবাদে ডাকা বন্ধে উত্তাল ত্রিপুরা ও আসাম। পরিস্থিতি সামলাতে কয়েকটি এলাকায় সেনা নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
দুই কলাম সেনা নামানো হয়েছে ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর ও মনু এলাকায় এবং আরো দুই কলাম সেনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আসামের বঙ্গাইগাঁও ও ডিব্রুগড়ে (এক কলামে ৭০ জন জওয়ান এবং এক বা দু’জন কর্মকর্তা থাকেন)। অতিরিক্ত বাহিনী হিসাবে ডিব্রুগড়ে পুলিশের একটি কুইক রেসপঞ্জ টিম মোতায়েন করা হয়েছে। আর উত্তর-পূর্ব ভারত জুড়ে মোতায়েন হয়েছে ৫ হাজার আধাসামরিক সেনা।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে আনা হয়েছে এ বিল। হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা আছে বিলে। বিলটিতে মুসলিমরা না থাকায় এটি সাম্প্রদায়িক বলে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভাতে দাবি করেছিলেন, 'নাগরিকত্ব বিল মুসলিম বিরোধী নয়।' তারপরও বিলটি নিয়ে তুমুল হৈ চৈ হয়।
এবার রাজ্যসভাতেও নাগরিকত্ব বিল সম্পর্কে অমিত শাহ বলেছেন, “এ বিলের মাধ্যমে শরণার্থীরা তাদের অধিকার পাবেন। প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা শরণার্থীরা আশ্রয় পাবেন। কোনো মুসলিমের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার সংবিধান মেনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেবে।”
ওদিকে, ভারতীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বুধবার এক টুইটে অভিযোগ করে বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা সিএবি-র মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের নিজস্ব পরিচিতিকে ধুয়ে-মুছে ফেলার চেষ্টা করছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ সরকার। বিলের প্রতিবাদে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে সামিল মানুষের পাশে আছেন বলেও জানান রাহুল।
লোকসভায় অসুবিধা না হলেও রাজ্যসভায় বিল পাশে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদদের একাংশ। নাগরিকত্ব বিল পাশ করাতে প্রয়োজন ১২১ সাংসদের ভোট।
বিলটির প্রতিবাদে গুয়াহাটিতে পথে নেমে বিক্ষোভ করছে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। ডিব্রুগড়ের বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিতে গুরুতর আহত হয়েছেন কয়েকজন ছাত্র। বিক্ষোভের জেরে ডিব্রুগড় ও গুয়াহাটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব পরীক্ষা অর্নির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে।
উত্তর ত্রিপুরায় বাজার এলাকায় একের পর এক দোকানে আগুন দেওয়াসহ ভাঙচুর ও লুটপাট এর ঘটনা ঘটেছে। আগরতলা শহরে বন্ধ সমর্থকরা অবরোধে নেমেছে।
বিভিন্ন স্থানে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। অবরোধ করা হয় রেল লাইন। বেলা বাড়তেই অশান্তি শুরু হয়। গোলমাল ছড়াতে থাকে মূলত উত্তর ত্রিপুরা, ধলাই ও পশ্চিম ত্রিপুরার জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। সেখানে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।