রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার সু চির
নিউজ ডেস্ক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 11 Dec 2019 03:47 PM BdST Updated: 12 Dec 2019 07:44 PM BdST
রাখাইনে সেনা অভিযানে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বলেছেন, জাতিসংঘের আদালতে গাম্বিয়ার করা অভিযোগ ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’।
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে দ্য হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে বুধবার নোবেলবিজয়ী সু চির এই সাফাই আসে।
রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করেই তিনি বলেন, রাখাইনে সেনা অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ হয়ত উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে তার পেছনে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল- এমন ধরে নেওয়াটাও মিয়ানমারের জটিল বাস্তবতায় ‘ঠিক হবে না’।
দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করার অভিযোগে মিয়ানমারকে জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালতে এনেছে পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া।
মঙ্গলবার দ্য হেগের পিস প্যালেসে গাম্বিয়ার পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করে আইনমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন এবং গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান।
এরপর বুধবার মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দিতে এসে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর সু চি দাবি করেন, রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে গাম্বিয়া যে চিত্র এ আদালতে উপস্থাপন করেছে তা ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।
এরপর গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে জাতিসংঘ।

তিনি বলেন, স্থানীয় সশস্ত্র গ্রুপ হামলা চালানোর পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ওই অভিযান চালিয়েছিল, কোনো জাতি বা ধর্মীয় সম্প্রদায় এর লক্ষ্য ছিল না।
তবে ওই অভিযানের ফলে রাখাইনের বহু মানুষ যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তারা যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সে কথা স্বীকার করে সু চি বলেন, যদি কোনো সেনাসদস্য নিয়ম ভেঙে থাকে, তাহলে সামরিক আদালতে তার বিচার হতে পারে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় আন্তর্জাতিক আদালতে এনে সমস্যার সমাধান করা যাবে না।
রাখাইন বা অন্য কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা মিয়ানমার প্রশ্রয় দেবে না দাবি করে দেশটির নেত্রী বলেন, তার সরকার রাখাইনের সব পক্ষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। রাখাইনের বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়েও মিয়ানমার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক কোনো হস্তক্ষেপ হলে তা মিয়ানমারে শান্তি ও বাস্তুচুতদের ফেরার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে বলেও সতর্ক করেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর।
Absurd #AungSanSuuKyi defense argument number 5: The #Rohingya don't exist. In her presentation, she never named Rohingya as victims. Denying a group its identity is evidence of specific intent. This is nothing new. In 2016, she told the US not to use the word.
— Brad Adams (@BradMAdams) December 11, 2019
রোহিঙ্গাদের প্রতিক্রিয়া কী
দ্য হেগের আদালতে সু চির বক্তব্যকে মিথ্যাচার আখ্যায়িত করে তাৎক্ষণিকভাবে হতাশা প্রকাশ করেছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রের রোহিঙ্গারা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের নেত্রী আইসিজের শুনানিতে কী বলেন, তা দেখার জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সবার চোখ ছিল টেলিভিশনের দিকে।
কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম (৫২) বিবিসিকে বলেন, “সে একজন মিথ্যাবাদী, ডাহা মিথ্যাবাদী।”
দ্য হেগের পিস প্যালেসের বাইরে রোহিঙ্গাদের পক্ষে একটি ছোট জমায়েত থেকেও স্লোগান ওঠে- ‘অং সান সু চি, শেইম অন ইউ’।
মিয়ানমারের পক্ষের একদল লোকও দ্য হেগে আইসিজের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। তাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘সু চি, আমরা তোমার পাশে আছি।’
অভিযোগগুলো কি?
রেহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে গণহারে হত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে পুরোপুরি কিংবা অংশিকভাবে হলেও ধ্বংস করে দেওয়া ছিল রাখাইনে অভিযনের মূল উদ্দেশ্য। সেনাবাহিনী এ কাজে সরকারের সায়ও পেয়েছে।
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এসব অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে।
অগাস্টে এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণসহ অন্যান্য সহিংস কর্মকাণ্ড এবং নারী, পুরুষ, বালক, শিশু এমনকি হিজড়াদেরও যৌনকর্মে বাধ্য করার অভিযোগ করা হয়।
মিয়ানমারের মিন গাই গ্রামে ৬ বছরের নিচে একশর বেশি শিশুসহ ৭৫০ জনকে হত্যার ঘটনা জাতিসংঘ তদন্তকারীদের এক প্রতিবেদনে রেকর্ড করা হয়েছে এক সাক্ষীর বয়ানে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ আদালতে সে তথ্য তুলে ধরেন গাম্বিয়ার এক আইনজীবী।
গত মে মাসে মিয়ানমারে ৭ সেনাকে ১০ রোহিঙ্গা হত্যার জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হলেও দ্রুতই জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। বলা হয়, সেনাদের অভিযানের লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।
মামলাটি করা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে, সু চির বিরুদ্ধে নয়। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) কোনো ব্যক্তিবিশেষকে সাজা দিতে পারে না, যেমনটি পারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আইসিসি আলাদাভাবে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি তদন্ত করছে।
তবে আইসিজে’র মামলাটিতে কোনো না কোনোভাবে সু চিরও কিছু সম্পৃক্ততা আছে।
২০১৬ সাল থেকে সু চি মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী তথা আনুষ্ঠানিক প্রধান। বলা হয়, সেনাবাহিনীর ওপর সু চির কোনো নিয়ন্ত্রণও নেই। তবে জাতিসংঘ তদন্তকারীরা তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দুষ্কর্মে সায় দেওয়ার অভিযোগ করেছে।
সেনাবাহিনীর মত সু চি নিজেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক বলে মানতে নারাজ। বক্তৃতায় বা সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিও উচ্চারণ করেন না।
ওআইসিভুক্ত দেশ গাম্বিয়া গত নভেম্বরে জাতিসংঘের আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করলে সু চি ঘোষণা দেন, বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি আইসিজেতে নিজের দেশের পক্ষে লড়বেন।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি দ্য হেগের আদালতে যে সেনাবাহিনীর পক্ষ হয়ে লড়ছেন, সেই সেনাবাহিনীই এক সময় তাকে বছরের পর বছর গৃহবন্দি করে রেখেছিল।
নিজের দেশে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় সু চি এখন সেই সেনাবাহিনীকে রক্ষার জন্য পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
মামলার ফল কি হতে পারে?
আইসিজে’র বিধি অনুসারে, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে।
গাম্বিয়ার করা এ মামলায় গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তি বিধানে ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষরিত কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। ১৯৫৬ সালে ওই ‘জেনোসাইড কনভেনশনে’ সই করেছিল মিয়ানমার।
গাম্বিয়াও এ কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই কনভেনশনের আওতায় দেশগুলো শুধু গণহত্যা থেকে বিরত থাকাই নয় বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা এবং এমন অপরাধের জন্য শাস্তি বিধানেও বাধ্য।
গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে বুধবার প্রথম দিনের শুনানিতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে কিছু অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানানো হয়। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করা এবং গণহত্যার আলামত সংরক্ষণের আদেশ চাওয়া হয় আইসিজের কাছে।
শুনানির শেষ দিন বৃহস্পতিবার প্রথমে গাম্বিয়া এবং পরে মিয়ানমার যুক্তি খণ্ডন করে নিজেদের চূড়ান্ত বক্তব্য জানাবে। এরপর শুরু হবে সিদ্ধান্তের অপেক্ষা।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের ১৫ বিচারকের সঙ্গে প্যানেলে আছেন গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মনোনীত দুই বিচারক। শুনানি শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত দেবেন।
মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে কিনা সে বিষয়ে রায় দিতে হলে আদালতে এটা প্রমাণ হতে হবে যে, রাষ্ট্রটি রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করেছে।
তবে সেটা যদি প্রমাণও হয় তবুও অং সান সু চি কিংবা মিয়ানমারের জেনারেলদের গ্রেপ্তার করা কিংবা তাদেরকে বিচার করার মত পদক্ষেপ নিতে পারবে না আইসিজে।
মিয়ানমারকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত রায় দিলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ আসতে পারে। এতে মিয়ানমার বিশ্বে ভাবমূর্তি হারানো এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
-
কোভিড নিয়ে দেশবাসীকে ‘ঘ্যানঘ্যানানি বন্ধ’ করতে বললেন বোলসোনারো
-
আমি কথা বলতে প্রস্তুত: মেগান মার্কল
-
ভারতে ‘প্রেম করায়’ বাবার হাতে মেয়ের শিরশ্ছেদ
-
মিয়ানমারে বিক্ষোভে ফের পুলিশের গুলি, নিহত ১
-
অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের চালান আটকে দিল ইতালি
-
ইরাকে ঐতিহাসিক সফরে পোপ ফ্রান্সিস
-
ফিলিস্তিনে আইসিসির তদন্তের বিরুদ্ধেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র, নেতানিয়াহুকে আশ্বাস কমলার
-
মিয়ানমারের ৫টি টিভি চ্যানেল সরালো ইউটিউব
-
কোভিড নিয়ে দেশবাসীকে ‘ঘ্যানঘ্যানানি বন্ধ’ করতে বললেন বোলসোনারো
-
আমি কথা বলতে প্রস্তুত: মেগান মার্কল
-
ইরাকে ঐতিহাসিক সফরে পোপ ফ্রান্সিস
-
ভারতে ‘প্রেম করায়’ বাবার হাতে মেয়ের শিরশ্ছেদ
-
মিয়ানমারে বিক্ষোভে ফের পুলিশের গুলি, নিহত ১
-
ফিলিস্তিনে আইসিসির তদন্তের বিরুদ্ধেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র, নেতানিয়াহুকে আশ্বাস কমলার
সর্বাধিক পঠিত
- স্টোকসের ‘গালি’ শুনে কোহলিকে বললেন সিরাজ
- নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে মিয়ানমারের জান্তার টাকা সরানোর চেষ্টা আটকেছে যুক্তরাষ্ট্র
- ফাইনালে বার্সার প্রতিপক্ষ বিলবাও
- ভিসি কলিমউল্লাহ দুষলেন শিক্ষামন্ত্রীকে; ‘রুচিহীন’ বলল শিক্ষা মন্ত্রণালয়
- ৬ ওয়ানডে খেলেই অধিনায়ক বাভুমা, টেস্টের নেতৃত্বে এলগার
- লিভারপুলকে হারিয়ে চারে চেলসি
- আরেকটি শূন্য, ধোনি-সৌরভের পাশে কোহলি
- ভারতে ‘প্রেম করায়’ বাবার হাতে মেয়ের শিরশ্ছেদ
- দলের ওপর চাপ কমাতে বললেন মাশরাফি
- টিভি সূচি (শুক্রবার, ০৫ মার্চ ২০২১)