গাম্বিয়ার তোলা অভিযোগের জবাব দেবেন সু চি

আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে তোলা অভিযোগে মিয়ানমারের নৃশংসতার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে গাম্বিয়া। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়াসহ, নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মত একের পর এক বর্বর কাণ্ডের বর্ণনা চলার সময় ভাবলেশহীনভাবে বসে তা শুনেছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি।

>>রয়টার্স
Published : 10 Dec 2019, 06:49 PM
Updated : 10 Dec 2019, 06:49 PM

এবার গাম্বিয়ার আইনজীবীদের তোলা সব অভিযোগের জবাব দেওয়ার পালা সু চির। বুধবারেই তিনি সে জবাব দেবেন। তবে তার আগে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে নীরব থাকেন সু চি। যাদের পক্ষে যুক্তি দেওয়া ন্যায়সঙ্গত না তাদেরই সাফাই দিতে চলেছেন কিনা- বিবিসি’র এ প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

মিয়ানমার বরাবরই দেশে চরমপন্থিদের হুমকি মোকাবেলা করার বিষয়টিতে জোর দিয়ে এসেছে। তাই অভিযোগ খন্ডনে সু চি গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে ২০১৭ সালের অগাস্টে সামরিক বাহিনীর শুরু করা অভিযানকে বৈধতা দেওয়ার পক্ষেই যুক্তি দেখাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

অভিযোগগুলো কি?

রেহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে গণহারে হত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে পুরোপুরি কিংবা অংশিকভাবে হলেও ধ্বংস করে দেওয়া ছিল উদ্দেশ্য। সেনাদেরকে এ কাজে সায়ও দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এসব অভিযোগ তদন্ত করে এর প্রমাণও পেয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছে।

অগাস্টে এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণসহ অন্যান্য সহিংস কর্মকাণ্ড এবং নারী, পুরুষ, বালক, শিশু এমনকি‍ হিজড়াদেরও যৌনকর্মে বাধ্য করার অভিযোগ করা হয়।

মিয়ানমারের মিন গাই গ্রামে ৬ বছরের নিচে ১শ’রও বেশি শিশুসহ ৭৫০ জনকে হত্যার ঘটনা জাতিসংঘ তদন্তকারীদের এক প্রতিবেদনে রেকর্ড করা হয়েছে এক সাক্ষীর বয়ানে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ আদালতে সে তথ্য তুলে ধরেছেন গাম্বিয়ার এক আইনজীবী।

গত মে মাসে মিয়ানমারে ৭ সেনাকে ১০ রোহিঙ্গা হত্যার জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হলেও দ্রুতই জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। বলা হয়, সেনাদের অভিযানের লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।

সু চি’র ভূমিকা কি?

মামলাটি করা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। সু চির বিরুদ্ধে নয়। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) কোনো ব্যক্তিবিশেষকে সাজা দিতে পারে না। যেমনটি পারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আইসিসি আলাদাভাবে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি তদন্ত করছে।

তবে আইসিজে’র মামলাটিতে কোনো না কোনোভাবে সু চিরও কিছু সম্পৃক্ততা আছে।

২০১৬ সাল থেকে সু চি মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী তথা আনুষ্ঠানিক প্রধান। গণহত্যা সংঘঠিত হয়েছে পরে। সেনাবাহিনীর ওপর সু চির কোনো নিয়ন্ত্রণও নেই। তবে জাতিসংঘ তদন্তকারীরা তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দুষ্কর্মে সায় দেওয়ার অভিযোগ করেছে।

এক মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী অনেক দেরী হয়ে যাওয়ার আগেই সু চিকে চোখ খুলে দেখা এবং নৈতিক শক্তিতে জেগে উঠে তা কাজে লাগানোর অনুরোধও করেছিলেন।

কিন্তু আইসিজে তে গাম্বিয়ার মামলার পর সু চি নভেম্বরে জানান, তিনি আদালতে বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে তার দেশের পক্ষে লড়বেন।

মামলার ফল কি হতে পারে?

এখন গাম্বিয়া প্রাথমিকভাবে তিনদিনের শুনানিতে মিয়ানমারে আর কোনো হুমকি বা সহিংসতা থেকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় আদালতকে সাময়িক কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে।

মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে কিনা সে বিষয়ে রায় দিতে হলে আদালতে এটা প্রমাণ হতে হবে যে, রাষ্ট্রটি রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করেছে।

তবে সেটা যদি প্রমাণও হয় তবুও অং সান সু চি কিংবা মিয়ানমারের জেনারেলদের গ্রেপ্তার করা কিংবা তাদেরকে বিচার করার মত পদক্ষেপ নিতে পারবে না আইসিজে।

মিয়ানমারকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত রায় দিলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ আসতে পারে। এতে মিয়ানমার বিশ্বে ভাবমূর্তি হারানো এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

ন্যায়বিচারের ডাক:

আন্তর্জাতিক আদালতের বাইরে মঙ্গলবার ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে রোহিঙ্গারা।

বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারাও ন্যায়বিচারের জন্য শুনানির দিকে তাকিয়ে আছে। সু চির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা গাম্বিয়া! গাম্বিয়া! স্লোগান দিয়েছে।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গনে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সু চির সমর্থনে সমাবেশ করেছে হাজার হাজার মানুষ। “দেশের মর্যাদা রক্ষায় মাদার সু য়ের পাশে দাঁড়াও” স্লোগান দিয়েছে তারা।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সু চি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার শিকার হলেও দেশে তিনি এখনো জনপ্রিয়। সু চি’র এক সমর্থক বলেছেন, বিদেশে মানুষ মিয়ানমারের ঘটনাবলী সম্পর্কে ভুল তথ্য পেয়েছে।